Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জনদুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী

কোথাও যানজট কোথাও গণপরিবহন সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন উপলক্ষে সরকারি উদযাপনের কর্মসূচির দিন গতকাল বৃহস্পতিবার গণপরিহনের সঙ্কটে পড়ে নগরবাসী। দুপুর থেকে নগরীতে গণপরিবহনের উপস্থিতি কম থাকায় রাস্তা ছিল ফাঁকা, ফলে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। পরিবহন সঙ্কটের কারণে অনেকেই গন্তব্যে যেতে হয়েছে পায়ে হেঁটে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এরপর রাজধানীর নয়টি স্থান থেকে ৫৭টি মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধীনস্থ দপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে শোভাযাত্রা করে জড়ো হন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে।
দুপুরে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরও ব্যানার নিয়ে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে উন্নয়নের ¯েøাগান দিতে দেখা গেছে। বিকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এই আয়োজন বেশ কিছু এলাকায় যান চলাচল সীমিত করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্টেডিয়াম ও চারপাশের সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচলে সমস্যা হবে বলে আগেই সতর্ক করেছিল ডিএমপি পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, র‌্যালিতে সমবেত হওয়া এবং নয়টি স্থান হতে র‌্যালি যোগে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার কারণে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম এবং চারদিকের রাস্তাসমূহে সাধারণ যানবাহন চলাচলে সমস্যা হয়। যানজট এড়িয়ে নির্বিঘেœ র‌্যালি গমনের উদ্দেশ্যে উক্ত সময় শাহবাগ, কাকরাইল মসজিদ, নাইটিংগেল, ফকিরাপুল, শাপলা চত্বর, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, চানখারপুল, বকশিবাজার, পলাশী, নীলক্ষেত অঞ্চল দিয়ে র‌্যালি এলাকায় গাড়ি প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের জন্য ডাইভারশন দেয়া হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, দুপুরে রামপুরা, মৌচাক, মালিবাগ, কাকরাইল এলাকায় গণপরিবহন ছিল একেবারেই কম। সড়কে সিটিং সার্ভিসের বাসগুলোও দেখা যায়নি। কাকরাইল থেকে মৎস্য ভবন, নাবিস্কো, সাত রাস্তা ও মগবাজারের পথ ছিল প্রায় ফাঁকা। বেলা আডাইটার দিকে সায়দাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় যানবাহন চলাচল ছিল খুবই কম। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের চিত্রও ছিল একই রকম ছিল। হানিফ ফ্লাইওভার হয়ে গুলিস্তানগামী মোটর সাইকেল এবং প্রাইভেট কারগুলোকে চাঁনখারপুলের দিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পল্টন এবং প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার কারণে নগর ভবনের সামনের সড়ক, গোলাপ শাহ মাজার এবং গুলিস্তান এলাকায় তৈরি হয় যানজট।
বিকাল ৩টার দিকে মহাখালী রেলক্রসিং এলাকায় টঙ্গী ও উত্তরাগামী এবং ফার্মগেইট, শাহবাগ ও গুলিস্তানগামী যাত্রীদের গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। বাসের অপেক্ষায় থাকা শারমিন আক্তার বলেন, প্রায় আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও ফার্মগেইটের কোনো বাসে দেখা পাইনি। অবশ্য গাবতলী, মিরপুর ও শ্যামলীগামী যাত্রীরা গন্তব্যে গেছেন বেশ নির্বিঘেœ। শ্যামলী হয়ে শিয়া মসজিদগামী লেগুনার চালক ইমাম হোসেন বলেন, বাড্ডা থেকে শিয়া মসজিদ যাওয়ার পথে তাকে কোথাও যানজটে পড়তে হয়নি। মহাখালী ও গাবতলী হয়ে সাভারগামী অলিফ, অগ্রদূত, বৈশাখী পরিবহনের বাসগুলোও বিকাল পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে মোটামুটি নির্বিঘেœ গন্তব্যে চলাচল করেছে বলে চালক ও সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। দুপুরে কারওয়ান বাজার থেকে শাহবাগের দিকে গণপরিবহনের গতি ছিল খুব ধীর। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকেই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যের দিকে গেছেন। তবে মিরপুর ১২ থেকে ফার্মগেইটের পথে অন্য দিনের মত যানজট ছিল না। বরং রাস্তা ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। ওই সময় মোহাম্মদপুর থেকে ধানমন্ডি হয়ে সায়েন্সলাবের দিকে যেসব গাড়ি যাচ্ছিল, সেগুলোকে যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। অন্যদিকে নীতক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব হয়ে মিরপুর রোডে গাড়ির চাপ ছিল কম।
নীলক্ষেত মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি দুপুর ২টা থেকে ডিউটি করছি। রাস্তায় গাড়ি বেশি নাই। ফলে যানজটও নাই। দোয়েল চত্বর থেকে সচিবালয়-জিপিও হয়ে শোভাযাত্রা যাওয়ার পর ডাইভারশন খুলে দিলে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়।
শোভাযাত্রার কারণে দৈনিক বাংলা মোড় থেকে প্রেসক্লাবের রাস্তা পুলিশ আটকে দেয়। মতিঝিল এলাকায় গণপরিহন দেখা যায় খুব কম। দীর্ঘ সময় পর পর একটি বাস এলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন যাত্রীরা। বেলা ১টার দিকে রামপুরা টিভি ভবনের সামনে তুরাগ পরিবহনের একটি বাস আসার পর ৫০-৬০ জন যাত্রীকে একসঙ্গ তাতে ওঠার চেষ্টা করতে দেখা যায়। রফিকুল ইসলাম নামের এক পথচারি জানান, গুলিস্তানে যাওয়ার জন্য এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও তিনি কোনো বাসে উঠতে পারেননি। বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকা থেকে কাকরাইলে রাস্তায় যানজট থাকলেও মৎস্য ভবন এলাকা বেলা আড়াইটার দিকে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় পুলিশ। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফুয়াদ তানভীর বলেন, ধানমন্ডি থেকে মহাখালী আসতে তার দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে। মোহাম্মদপুর থেকে ধূপখোলা রুটের বাস চালক শাহীন জানান, শাহবাগ না গিয়ে নিউ মার্কেট হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে দিয়ে এসেছেন তিনি। নগর ভবনের সামনে কিছুটা যানজটে পড়তে হয়েছে। গুলিস্তান থেকে নর্থ সাউথ রোড হয়ে সদরঘাটগামী সড়কেও যান চলাচল ছিল কম। দীর্ঘ সময় গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে যাত্রীদের। অনেকে হেঁটে গন্তব্যে গেছেন। অন্যদিকে সদরঘাটের দিক থেকে গুলিস্তানগামী যানবাহনগুলো গুলিস্তান এসে দীর্ঘক্ষণ যানজটে আটকে থাকে।
প্রাইভেট কারের চালক বাবুল শেখ জানান, লালবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চানখারপুল হয়ে তার গুলিস্তান যেতে সময় লেগেছে আধা ঘণ্টা। কিন্তু তারপর আর যেন গাড়ি এগোতে চায় না। আর বেলায়েত হোসেন খান নামে একজন জানান, তিনি মতিঝিল থেকে গাড়ি না পেয়ে হেঁটে শহীদ মিনার পর্যন্ত যান। সেখান থেকে নীলক্ষেতে গেছেন রিকশায় করে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ