পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ
অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য। স্বাধীনতার ৪৭ বছরে এসে ভিক্ষুকের দেশের বদনাম ঘুচে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ। যেমনটি বলেছিলেনÑ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ‘দাবায় রাখতে পারবা না’। ক্ষুধা, দারিদ্রকে জয় করে উচ্চ শিখরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। তাই ঐতিহাসিক এই সাফল্যের জন্য আজ শুধুই আনন্দ আর উৎসবের দিন। এ আনন্দধারায় যুক্ত হবেন দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে কোটি জনতা। উৎসব উদযাপনের প্রাক্কালে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিরাট সম্মান অর্জনে অবদান রাখার জন্য দেশের জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।
জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) সম্প্রতি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের স্বীকৃতি দেয়। উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার শর্ত পূরণ করায় বাংলাদেশ এখন আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে পারবে। সব ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মিলবে।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের প্রাথমিক স্বীকৃতি আসার পর প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আদুল মুহিত বলেন, সারা দুনিয়ায় আমাদের বদনাম ছিল, আমরা গরিব। সে অবস্থা এখন আসমান আর পাতাল। আমরা সাহায্যের জন্য হাত পাতি-সে কথা আমাদের শুনতে হয়েছে। আজ আমি খুব গৌরব বোধ করছি। উদ্দীপ্ত, হাসি-খুশী মুহিত গতকাল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিকদের শুভেচ্ছা জানিয়ে আন্তর্জাতিক এ স্বীকৃতি উদযাপনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে কথা বলেন তিনি। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি মেলার পর মানসিকতার পরিবর্তনকেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বাংলাদেশ কেবল আবেদন করার যোগ্য হয়েছে, এখনও অনেক পথ বাকি; তারপরও উদযাপনের এত আয়োজন কেন? এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, কেন নয়? আমরা অনেক নিচে ছিলাম; আমরা উপরে উঠছি এখন, আরও উপরে যাব। আমরা দেখিয়েছি আমরাও পারি। আমরা উৎসবপ্রিয় জাতি। তাই সবাইকে নিয়ে উদযাপন করব। সামনের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এলডিসি থাকব। ২০১৮-২০২৪ সাল পর্যন্ত একটা ট্রানজিশনে থাকব। আমাদের মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে। বেশি হারে আন্তর্জাতিক ঋণ নেওয়ার মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের সামনের সব সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানোর ওপর জোর দেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, মানসিকতার পরিবর্তনে ইতোমধ্যে আমরা পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কোন খাতে কত ঋণ নেব, সে বিষয়ে সাবধান হতে হবে। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ মিশনকে গত ১৭ মার্চ স্বীকৃতিপত্র হস্তান্তর করা হয়।
অর্থমন্ত্রী জানান, ওই স্বীকৃতিপত্র মঙ্গলবার দেশে এসেছে। আনুষ্ঠানিকভাবে আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে তা হস্তান্তর করা হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই স্বীকৃতির উদযাপন হবে সাত দিন ধরে। ২০ মার্চ থেকে ২৬ মার্চ উৎসব চলবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব গাজী শফিকুল আজম প্রমুখ।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, একটা প্রশ্ন উঠেছে যে এলডিজি থেকে উত্তরণের পর অনেক জায়গায় আমাদের সুবিধার দিকগুলো সংকুচিত হয়ে যাবে, কিন্তু অনেক সম্ভাবনার দুয়ারও খুলবে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণে এই অর্জন সম্ভব হয়েছে জানিয়ে মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, এটা বাংলাদেশের জন্য একটা বড় ঘটনা।
উদযাপন পর্বের মূল অনুষ্ঠান হবে আজ বৃহস্পতিবার : বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর মধ্যদিয়ে দিবসটির উদযাপন শুরু হবে। মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। ওই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের দেয়া স্বীকৃতিপত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রীকে এ সংবর্ধনা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে এনজিও, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সহযোগী, দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিদেরও যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় এ অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এদিন বিকেল ৪টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও উন্নয়ন তুলে ধরে রাজধানীর নয়টি পয়েন্ট হতে এ শোভাযাত্রা শুরু হবে। পরে এ সকল শোভাযাত্রা মিলিত হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। স্থানীয় সরকার বিভাগের এ কর্মসূচি সমন্বয় করবে।
এদিন সন্ধ্যা ৬টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সান্ধ্যকালীন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে এ অনুষ্ঠানে লেজার শো, ফায়ার ওয়ার্কসহ তিন ঘন্টাব্যাপি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ ওই অনুষ্ঠার উপভোগ করবেন। জন সাধারণের জন্য এ সব অনুষ্ঠান উন্মুক্ত থাকবে। স্টেডিয়ামে জায়গা সংকুলন না হলে স্টেডিয়ামের বাইয়ে প্রোজেক্টরে দর্শকরা এ অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারবেন। অর্থমন্ত্রী জানান, আনন্দ উৎসবে কোন বক্তব্য নয়; প্রধানমন্ত্রীসহ আমরা সকলেই শুধুই আনন্দ করব।
শুক্রবারের কর্মসূচি : এদিন সকাল ১০টায় হোটেল রেডিসনে আন্তর্জাতিক সেমিনারের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। একই জায়গায় বিকেল ৪টায় টেকনিক্যাল টিমের সঙ্গে মতবিনিময় হবে।
এদিন সন্ধ্যায় পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে হাতিরঝিলে সান্ধ্যকালীন ওয়াটার ফানউন্টেন শো, ফায়ার ওয়ার্কসহ একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। রাজধানীর বাসীর জন্য এ আনন্দ উৎসব উন্মুক্ত থাকবে।
এছাড়াও সারাদেশে বিশেষ সেবা সপ্তাহ পালন কর্মসূচি চলছে। গত ২০ মার্চ শুরু হওয়া এ কর্মসূচি চলবে ২৬ মার্চ পর্যন্ত। এ আওতায় নাগরিক সুবিধাগুলো জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দৃশ্যমান সেবাদান নিশ্চিত করা হবে। এ জন্য সেবা সপ্তাহ পালনে জেলা-উপজেলাকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বর্তমান সরকারের অর্জন জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে এই সময়ে। কেন এই অর্জন এবং এতে কি লাভ হলো দেশের-সে সম্পর্কে জনগণকে একটি স্পষ্ট ধারণা দেয়া হবে। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা, সেমিনার ও চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।