Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স : যাত্রী বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। জাতীয় পতাকাবাহি এ প্রতিষ্ঠানটির যাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান। গত ১০ বছর আগে বিমান বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা ছিল ১৩টি। বর্তমানে বিমান বহরে আছে ১২টি উড়োজাহাজ। ১৬ টি আন্তর্জাতিক ও ৭ টি অভ্যান্তরীর রুটে এ সীমিত সংখ্যাক উড়োজাহাজ নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে প্রতিনিয়ত নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বিমানকে। এ নিয়ে কোন ধরনের মাথা ব্যথা নেই সংশ্লিষ্টদের। যুগের চাহিদাপুরনে ব্যর্থ এ সংস্থাটি কেন্দ্র করে বিমানের একশ্রেনীর কর্মকর্তা কর্মচারী লুটপাটের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, বিমানের জ্বালানী ভাতে, ক্যটারিং ও বিমান মেরামতের নামে চলছে নানা দুর্নীতি আর লাটপাট। প্রতিষ্ঠা লাভের ৪৭ বছরেও বিমানক গ্রাকদের আস্তা অর্জন করতে পারেনি। বিমানের সিডিউল বিপর্য, সময় মতো ফ্লাইট পরিচালনা না করা, যাত্রীদের লাগেজ হারানো, লাগেজ পেতে বিলম্ব এবং খাবারে মান নিয়ে অন্তহীন অভিযোগের পরেও সংস্থার কর্তা ব্যক্তিরা এ বিষয়ে কোনর ধরনের সমাধান করতে পারেননি। বিমান ও বিভিন্ন সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন,প্রতিষ্ঠার ৪৭ বছরে বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী বাড়লেও কমেছে সেবার পরিসর। ৫২টি দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১৫টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা ও দক্ষ লোকবলের ঘাটতির কারণে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে যেতে পারেনি সংস্থাটি। তবে সময়সূচী ঠিক রাখা ও সেবার মান বাড়ানো গেলে, বাড়বে বিমানের মুনাফা। বিমানের প্রত্যাশা, চলতি বছরে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির আরও পাঁচটি উড়োজাহাজ বহরে যুক্ত হলে চিত্র পাল্টাবে।
সিভিল এভিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান সাকেব ইকবাল খান মজলিস বলেন, মধ্যপ্রচ্যের দেশগুলোতে আমাদের প্রায় ১ কোটি প্রবাসী থাকেন। ওই রুটে বিমানের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ঠিকভাবে সেবা দেয়া গেলে মুনাফার পরিমাণ বাড়বে। এছাড়া বিমান লিজ নেয়ার সময় আমাদের বেশি করে বার্গেইন করতে হবে যাতে করে আমরা সবচেয়ে কম টাকায় ভালো বিমান নিতে পারি।
তিনি আরো বলেন, যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি বিমান বহরে এয়ার ক্রাফটের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আমাদের বিমানবন্দরগুলোর অবকাঠামো বাড়াতে হবে।
ব্যবহারকারীদের মতে, পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হলেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না বিমান। অবস্থার উন্নয়নে সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ তাদের।
বিমান বাংলাদেশ সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ বিমান ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৩ লাখ ৫১ হাজার যাত্রী বহন করেছে। এর আগের বছর যা ছিল ২৩ লাখ ১৮ হাজার। হিসেবে দেখা যায়, আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৩ হাজার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেছে গেল বছরে। গত ৩ বছরে বিমানে যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ লাখ ৩১ হাজার।
২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাজ্য সরকার আকাশপথে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। এই বাধাকে ডিঙিয়ে তারপরও কার্গো পরিবহন খাতে ২০১৬-১৭ সালে ৩৩ হাজার ৫৪২ মেট্রিক টন মালামাল পরিবহন করেছে, যা আগের বছর ছিল ৪০ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে কার্গো পরিবহন ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ কম। কার্গো পরিবহন করেই ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৪৪ কোটি টাকা আয় করে বিমান। আগের বছর এ খাতে আয় ছিল ৩১৫ কোটি টাকা।
২০১৪ সালের আগের ১০ বছর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অর্থনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। প্রতিবার লোকসান গুনতে হয়েছে। অনেকটা ইমেজ সংকটের মুখে পড়েছে তারা।
বাংলাদেশ বিমানের পাশাপাশি আকাশপথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসা করতে এরই মধ্যে যুক্ত হয়েছে কয়েকটি বেসরকারি বিমান চলাচলকারী প্রতিষ্ঠানের নাম। এতে বেড়েছে প্রতিযোগিতা। প্রতিটি বেসরকারী বিমান সংস্থা তাদের সেবার মান বাড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। তবে সেই তুলনায় পিছিয়ে আছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
এ সম্পর্কে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান এখন একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠান। আগামীতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা প্রতিষ্ঠানের সেবার মান আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছি। বাংলাদেশ বিমান যাতে যাত্রীদের আস্থার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় তার লক্ষ্যে রাত-দিন সকলে কাজ করে যাচ্ছে।
মোসাদ্দেক আহম্মেদ আরো বলেন, বিমানের সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন দিক নিদের্শনা দিয়েছেন বর্তমান বিমানমন্ত্রী। গতকাল বলাকা ভবনে মন্ত্রীর মহোদয়ের সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। আমরা আশা করছি লাগেজ পেতে যে বিড়ম্বনা হতো তা আর হবে না। যাত্রীর সেবার মান বাড়তে বিমান বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহন করেছে। তিনি দাবী করেন সেবার মান বাড়ার কারণেই যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে।
রুট স¤প্রসারণ ও সেবার মান বাড়াতে নানা পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বিমানের এমডি এ এম মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, আমরা বোয়িংয়ের সঙ্গে ১০টি বিমান কেনার চুক্তি করেছি। এরই মধ্যে ছয়টি আমরা পেয়েছি, ২টি এই বছর পাব এবং বাকি দুটো আগামী বছর। বিমানগুলো যুক্ত হলে আমাদের ফ্লাইট শিডিউল বিপর্যয় অনেকটাই কমে আসবে।
৪৬ বছরে মোট ৫ কোটি ৩০ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে বিমান। গেল বছরে ২৩ লাখ ৫১ হাজার যাত্রী পরিবহন করেছে সংস্থাটি।
জানা যায়,২০০৮ সালে বিমান লন্ডন হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরনের অনুমতি বন্ধ হয়েছিল। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে বিমানের একটি ডিসি ১০ দিয়ে পরিচালিত ঢাকা-লন্ডন সরাসরি সেবার একটি বিমান হিথ্রো বিমানবন্দরে তার নির্ধারিত সময়ের তিন ঘন্টা পর পৌছালে তাকে সেখানে অবতরন করার অনুমতি না দিয়ে জ্বালানী ভরার জন্য গেটউইক বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা, সুরক্ষা এবং সময়সূচি না মানার কারণে এর কর্মীদের বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন না করার সতর্কতা জারি করে। তা সত্বেও যারা বাংলাদেশ বিমানে ভ্রমন করেছে তারা নিজ দায়িত্বে ভ্রমন করেছে এবং তাদের বীমার টাকা দাবি করতে পারেনি।
বিমানের এ ধরনের সমস্যার কারণে শুধু বিমানেরই নয় দেশের ভাবমর্যাদাও বার বার মারাত্মক ভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে।
১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমানবাহিনী থেকে পাওয়া ডিসি-৩ উড়োজাহাজ দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ বিমানের যাত্রা। উপহার এবং নিজস্ব কেনা পুরনো এয়ারক্রাফট দিয়ে চলে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রুটে চলাচল। আশির দশক থেকে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার ২৬টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে বিস্তৃত হয় বিমানের ফ্লাইট। তবে ক্রমাগত লোকসান এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় ফ্লাইট পরিচালনার কারণে বন্ধ হয়ে যায় অধিকাংশ রুট। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে যাত্রী সেবার মান বাড়ানোর পাশাপাশি উড়োজাহাজ ভাড়া করার ক্ষেত্রে কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেন সংশ্লিষ্ট বিশেষাজ্ঞরা।
ফ্রেইটফরওয়ার্ডার অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি মাহবুব আনাম বলেন, একটা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে এটি চলার কথা ছিল সেভাবে চলার পাশাপাশি যদি কিছু কৌশল অবলম্বন করত তবে তারা হয়ত বিশ্বের বিমান প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভালো একটি অবস্থানে আসতে পারত।



 

Show all comments
  • Hasan Mamun ২২ মার্চ, ২০১৮, ২:৩১ এএম says : 0
    khub e korun obostha
    Total Reply(0) Reply
  • Muhammed Haque ২২ মার্চ, ২০১৮, ৫:৪৪ এএম says : 0
    I don't want to travel by BIMAN, although it has direct flight from London to my district Sylhet, BIMAN remains empty in London-Sylhet route, but passengers can't buy tickets due to lazy and selfish officers in London, every single airline has online check in system except Biman, that's why every flights delays from London to Sylhet route. Foods are awful at all time.
    Total Reply(0) Reply
  • MD ABDUR ROUF RUBEL ২৪ মার্চ, ২০১৮, ৪:৪০ পিএম says : 0
    protita desher manush nij desher bimane traveling korte apran chesta kore , ar amra ekbar travel korar por ditio bar travel korar ichchai kore na, karon, biman bangladesh er staff ra vromonkarider ke kuno dhoroner respect kore na ,ami dekhechi probashe zara 50,0000 takar beshi ruji kore tara biman bangladesh air e travel kore na ,karon bimaner timing thik thakena ,ullekho ze zara 40kg r beshi luggage nite chay tarai ekhon biman bangladesh air er vromon kari,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ