Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিসিসিতে অচলাবস্থার অবসান কাজে ফিরল কর্মীরা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দীর্ঘ এক মাসের অচলবস্থা শেষে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজে ফিরল। নিয়মিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৬ মাসের বেতন-ভাতা ছাড়াও ভবিষ্যৎ তহবিলের বকেয়া অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়া ও দৈনিক মজুরী ভিত্তিক পরিচ্ছন্ন কর্মীদের ৩ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবীতে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী থেকে বরিশাল নগর ভবনে অচলবস্থা চলছিল। গতকাল মঙ্গলবার সিটি মেয়র আহসান হাবীব কামাল, জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমানকে নিয়ে নগর ভবনে প্রবেশ করেন। সেখানে আন্দোলনকারীদের নেতা এবং বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক নির্বাহী প্রকৌশলী আনিচুজ্জামান ও সদস্য সচিব পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা দিপক লাল মৃধাসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দীর্ঘ বৈঠকে সমঝোতায় পৌছেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গতকাল দুপুরের পর থেকে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজে ফিরেছে। এর আগে গত দুদিন নগরীতে পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেয়ায় গোটা নগরীতে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমতে শুরু করে। গত রবিবারও মেয়র নগর ভবনে এসে গতকালের বৈঠকের সিদ্ধান্তের মতই দুমাসের বেতন-ভাতার চেক স্বাক্ষর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুরো নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখায় তা সম্ভব হয়নি। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বকেয়া দু মাসের বেতন-ভাতা, ৩ মাসের ভবিষ্যৎ তহবিলের অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়া হবে। পাশাপাশি আগামী মাসে আরো দু’মাসের বেতন প্রদান, ভবিষ্যৎ তহবিলের আরো অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, নগর পরিষদ ও আন্দোলনরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৭ মার্চ ওই কমিটি নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত পরিশোধের বিষয়ে কি কি পথ অবলম্বন করা যায় তা অনুসন্ধান করে সুপারিশ মালা পেশ করবে বলে জানান হয়েছে। গতকালের বৈঠকের পর পরই সকল পরিচ্ছন্ন কর্মীকে কাজে লাগিয়ে আজ সকালের মধ্যে নগরীতে সুস্থ্য-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র।
গত ১৮ফেব্রুয়ারী আন্দোলন শুরু করলেও ২৫ফেব্রুয়ারী থেকে কর্মীরা নগর ভবনে ৫ঘন্টার কর্মবিরতি শুরু করে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এ কর্মবিরতির কথা বলা হলেও মূলত দুপুরের পরে আরে কোন কর্মীকে নগর ভবনে পাওয়া যায়নি। ফলে গত মাসাধীকাল যাবত বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকান্ড সম্পূর্ণ স্থবির ছিল। মেয়র সহ নগর পরিষদের তরফ থেকে বার বারই দু’মাসের বেতন ও ৩মাসের ভবিষ্য তহবিলের অর্থ প্রদানের কথা বলা হলেও তা মেনে নেয়নি আন্দোলনকারীগন। তবে শেষ পর্যন্ত ওই পথে হেটেই গতকালের সমঝোতা হয়েছে। মাথাভারি প্রশাসন নিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের আর্থিক সংকট দীর্ঘদিনের। ২০১৩-এর ১৫জুন ভোটে জিতে অক্টোবরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বকেয়া ৩মাসের বেতন-ভাতা সহ ১৫৪কোটি টাকার দায়-দেনা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন বর্তমান মেয়র সহ নগর পরিষদ। এর পরে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা সহ প্রশাসনিক খরচ বেড়েছে প্রায় ৮৫ভাগ। এরসাথে মাথাভারি প্রশাসন চালাতে গিয়ে নগর ভবনের আর্থিক ভীত ভেঙে পরেছে। নিয়মিত প্রায় সাড়ে ৫শ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে প্রায় সোয়া ২কোটি টাকার সাথে দেড় সহশ্রাধীক পরিচ্ছন্ন কর্মী ও ঝাড়–দারের বেতন বাবদও মাসে আরো প্রায় ২কোটি ১০লাখ টাকা প্রয়োজন।
অভিযোগ রয়েছে, দেড় সহশ্রাধীক দৈনিক মজুরী ভিত্তিক এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীর মধ্যে অন্তত হাজার জনই কোন কাজ না করে বেতন নিচ্ছে বছরের পর বছর ধরে। রাজনৈতিক বিবেচনা ও সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া এসব পরচ্ছিন্ন কর্মীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নিতে পারছেনা নগর পরিষদ। প্রশাসনিক ব্যয় মেটাতে গত এক দশকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের নগর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে দ্বিগুনেরও বেশী। রক্ষনাবেক্ষন সহ নতুন সব ধরনের নির্মান কাজের সুষ্ঠু কোন তদারকি নেই। নগর ভবনের প্রকৌশল বিভাগ জনস্বার্থের চেয়ে ঠিকাদারের স্বার্থ সংরক্ষনেই অতি তৎপর বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে মেয়র সহ নগর পরিষদের তেমন কোন তৎপড়তা লক্ষনীয় নয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এর পরেও বেতন-ভাতা আদায়ের নামে গত এক বছরে দু’দফায় নগর ভবনের কর্মীদের আন্দোলনকে যতটা না রুটি-রজির সংগ্রাম বলে বিবেচনা করছেন, তার চেয়েও বেশী রাজনৈতিক কারন বলে মনে করছেন অনেকেই। আগামী জুনের মধ্যেই বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষে এগুচ্ছে নির্বাচন কমিশন। অভিযোগ রয়েছে, সে নির্বাচনে ২০১৩-এর পরাজয়ের গ্লানী মুছে ফেলতেই বর্তমান মেয়র সহ নগর পরিষদকে অকার্যকর প্রমানের জন্য মরিয়া একটি মহল। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সে লক্ষে বার বারই পরিচ্ছন্ন কর্মীদের ব্যবহার করে নগরবাসীকে জিম্মী করা হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অচলাবস্থা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ