পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে এখনও গলদ আছে। প্রতিবেশী বিশেষ করে ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক হওয়া উচিত সমমর্যাদার ভিত্তিতে। শুধুই ‘নেব আর নেব’ এই মানসিকতা নিয়ে প্রতিবেশীর সাথে সর্ম্পক দৃঢ় হয় না। কিছু নিলে কিছু দিতেও হয়। চীন হোক আর ভারত হোক সম্পর্ক হতে হবে পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে। ভারতকে বোঝাতে হবে তিস্তার পানি পাওয়া আমাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নায্য অধিকার। এটি আমাদের প্রতি ভারতের করুণা নয়। পানি পাওয়া আমাদের অধিকার। এ অধিকার আদায় করতে নিতে হবে’। এই অভিমত প্রকাশ করেছেন দেশের প্রবীণ ও খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান। চট্টগ্রামে অর্থনীতিবিদদের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর সিকান্দার খান আরও বলেন, ‘ভূ-রাজনৈতিক বিবেচনায় কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর (ডিপ-সি পোর্ট) নির্মাণ থেকে সরে আসা ঠিক হয়নি। এ গভীর সমুদ্র বন্দর ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ইউজিসি প্রফেসর ড. মইনুল ইসলামের একুশে পদক প্রাপ্তি উপলক্ষে গত সোমবার রাতে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামে (টিআইসি) এক সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে প্রবীণ ও নবীন অর্থনীতিবিদগণ অংশগ্রহণ করেন।
সংবর্ধিত অতিথি ব্যাংক-বীমাসহ দেশের আর্থিক খাতের নিবিড় গবেষক প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণকে (উন্নয়নশীল দেশ) ‘মিসকিনের ক্লাব’ থেকে বের হয়ে আসা উল্লেখ করে বলেন, রাষ্ট্রের লুটেরা চরিত্র বদলাতে না পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, দেশে ধনী ও গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। এতে করে জিডিপি বাড়লেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠি তার কোন সুফল পাচ্ছে না। ব্যাংক লুটের মাধ্যমে পুঁজিপতি শ্রেণির সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিদেশে অর্থপাচার করছে। দুর্নীতি, উন্নয়ন প্রকল্পে লুটপাট ও ব্যাংক লুণ্ঠন করে বিদেশে পুঁজিপাচারকে অর্থনীতির জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। সামনে এগিয়ে যেতে হলে এসবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। দুর্নীতি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যারা ব্যবস্থা নেবে সেই দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) গলাটিপে হত্যার আয়োজন করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিশিষ্ট এ অর্থনীতিবিদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র-ছাত্রী ও অর্থনীতি পরিবার এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। হলভর্তি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্র্থী এবং নগরীর বিশিষ্ট নাগরিকদের করতালির মধ্যে স্পষ্টবাদী গবেষক কলামিস্ট প্রফেসর মইনুল ইসলাম বলেন, সারা দেশ থেকে সাধারণ মানুষের টাকা কোটিপতিদের সিন্দুকে তুলে দেয়া হচ্ছে। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের হাতে ছিল দেশ। যার মধ্যে মাত্র ২ পরিবার ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের। সেখানে এখন ৫৪ হাজার ৭০৭ জন কোটিপতি খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে বাংলাদেশকে। তারা পুঁজি লুণ্ঠন করছে, পুঁজির একটি অংশ বিদেশে পাচার করছে। বিদেশে সেকেন্ড হোম করছে, ‘বেগম খানা’ হচ্ছে। তারাই কোটিপতি পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি করছে। আমি মনে করি এদেশের উন্নয়ন-অনুন্নয়নে এখনও সবচেয়ে বড় বাধা রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বলতা। যা পুঁজি লুটে সহায়ক। যে কোনো সময়ে এ কথাটি সরাসরি বলা খুব কঠিন। তবুও আমি বলে চলেছি। লুটেরা অর্থনীতি আর আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে সাধারণ মানুষ কোন সুফল পাচ্ছে না।
ড. মইনুল ইসলাম বলেন, ৪৭ বছর পরে বাংলাদেশের এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ ঘটেছে। এনিয়ে অনেকে খুব খুশি। তবে আমি কিন্তু খুব বেশি খুশি না। কারণ এই অর্জন হওয়ার কথা ছিল ২০ থেকে ৩০ বছর আগে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আশির দশকে আমরা এলডিসি থেকে মুক্তি পেয়ে যেতাম। অর্থনীতির কিছু সূচকে অগ্রগতি হলেও আয় এবং সম্পদ ও ধনী-গরিবের বৈষম্য বাড়ছে। ১৯৭০ সালে বৈষম্য ছিল শূন্য দশমিক ৩২, এখন তা শূন্য দশমিক ৪৮এ দাঁড়িয়েছে। শূন্য দশমিক ৫ হলেই উচ্চ বৈষম্যের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সে হিসাবে এখন আমরা উচ্চ বৈষম্যের কাছাকাছি। দেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে। প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, এ উত্তরণে সরকারকে অভিনন্দন জানাতে হয়। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছে কোথায়? এক কোটি ৩০ লাখ প্রবাসীর ঘামে ঝরা আয়ের টাকাও লুট হচ্ছে।
তিনি বলেন, আয় এবং সম্পদের বৈষম্য বাড়তে বাড়তে বাংলাদেশ এখন উচ্চ বৈষম্যের দেশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থার কারণে মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দরিদ্র তৈরীর কারখানা হয়ে গেছে। রোগ সারাতে দরিদ্র লোকজনকে সহায় সম্বল বিক্রি করতে হচ্ছে। রাষ্ট্র কীভাবে রাষ্ট্রের মধ্যে ১১ ধরনের প্রাথমিক শিক্ষা লালন করে। তিনি বলেন, প্রফেসর ড. ইউনূস বলেছেন ক্ষুদ্র ঋণে দারিদ্রকে যাদুঘরে পাঠানো সম্ভব। আমি তার সাথে দ্বি-মত পোষণ করে বলছি, শুধুমাত্র ক্ষুদ্র ঋণ নয়, দারিদ্র দূর করতে সিস্টেম বদলাতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পর্যায়ে পৌঁছে গেছে উল্লেখ করে ড. মইনুল ইসলাম বলেন, এদেশ এখন বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর দেশ নয়, বাণিজ্য নির্ভর দেশ। অতএব এখন আমরা যে বিদেশি সাহায্য আনি, সেটা লুটপাটের জন্য আনি, দুর্নীতির জন্য আনি। এই দুর্নীতির ভাগ একেবারে মন্ত্রী, এমপি থেকে ও ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই লুটেপুটে খাচ্ছে।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনার প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে। কিন্তু ২০০৭ থেকে ২০০৮ সালে দুদক যে শক্তিশালী অবস্থানে ছিল, ২০০৯ সালে এসে সেটিকে নখ-দন্তহীনে পরিণত করা হয়েছে। এখন গলাটিপে মেরে ফেলার মতো অবস্থা। তিনি তার দীর্ঘ কর্মজীবনের কথা উল্লেখ করে বলেন, কখনো কারো সাথে আপোস করিনি। সত্য কথা সাহসের সাথে উচ্চারণ করেছি। কাউকে খুশি করার জন্য কিছু করিনি। তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রহণ করেনি। তাদের এ দেশে রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকতে পারে না। স¤প্রতি প্রফেসর ড. জাফর ইকবালের উপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমারও উপরও হামলা হতে পারে। তবে আমি কাউকে ভয় পাইনা। একজন মুসলমান হিসাবে ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলি। একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আমি কাউকে ভয় করিনা। কারণ আমার জবাবদিহি একমাত্র আল্লাহ এবং আমার বিবেকের কাছে। তিনি আজীবন সত্য উচ্চারণ করে যেতে সকলের দোয়া চান।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর মইনুল ইসলামের শিক্ষক প্রফেসর মুহাম্মদ সিকান্দার খান আরও বলেন, ড. মইনুল ইসলাম আমার ছাত্র। তার যে সাহসী লেখনি, অমোঘ সত্যের প্রকাশ, এ জন্য তো সরকারের কোনো পুরস্কারের তালিকায় অন্তত তার নাম থাকবে বলে আমরা কখনো আশা করিনি। তাই তার এ পুরস্কার প্রাপ্তিতে কিছুটা হলেও অবাক হয়েছি। তিনি বলেন, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ থেকে সরকারের সরে আসা যে ঠিক হয়নি তা সাহসের সাথে ড. মইনুল ইসলামই উচ্চারণ করেছেন। আমরা তাকে সাহস যুগিয়েছি। এ গভীর সমুদ্র বন্দর ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, প্রতিবেশীদের সাথে কখনও নিঃস্বার্থ সম্পর্ক হয় না। চীন আর ভারত সবার সাথে সম্পর্ক হতে হবে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট। ভারতের পানি আগ্রাসনের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, পানি পাওয়া আমাদের অধিকার। এ অধিকার আদায় করতে নিতে হবে। ব্যাংক লুটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দরিদ্র লোকজনকে ঋণ দিয়ে তা ফেরত পাওয়া যায়। কিন্তু কোটিপতিদের ঋণ দিয়ে তা ফেরত পাওয়া যায় না। এটি এখন এদেশে প্রমাণিত।
চবির হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক রনজিত কুমার দে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকে শাসকদের বৈশ্যতা স্বীকার করে নিয়ে দাসত্ব করে জীবন পার করে দিচ্ছেন। আর মইনুল ইসলাম গনতন্ত্রের সংকট আর লুটেরা অর্থনীতির বিরুদ্ধে সাহসের সাথে কথা বলে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের টাকা ব্যাংক থেকে কিভাবে লুট হয়ে যাচ্ছে তা তিনি অনুসন্ধানীমূলক গবেষণায় দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি চোরাচালানের অর্থনীতির স্বরূপ উন্মোচন করেছেন। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক।
অর্থনীতি পরিবারের এটিএম কমর উদ্দিন তাহেরের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংবর্ধনা আয়োজক কমিটির আহŸায়ক খোরশেদুল আলম কাদেরী ও সদস্য সচিব মনসুর এম ওয়াই চৌধুরী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সরকারি সিটি কলেজের শিক্ষক আলেক্স আলীম, চট্টগ্রাম চেম্বারের নেতা ছগির আহমদ, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ এ কে ফজলুল হক, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের শিক্ষক ড. আ ন ম মইনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আইয়ুব ভূইয়া।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।