Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চ আদালতে সরকার হস্তক্ষেপ করছে -বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৮, ১২:১৫ এএম

উচ্চ আদালতে সরকার হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের মহাসচিম মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, উচ্চ আদালতে দেওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আপিল বিভাগ স্থগিত করায় সরকারের হস্তক্ষেপ রয়েছে। জামিন স্থগিতের মাধ্যমে আদালতের সিদ্ধান্তে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। খালেদা জিয়ার জামিন পেতে যে আইনি প্রক্রিয়া সেটিতে অত্যন্ত সচেতনভাবে সরকার বাধাগ্রস্ত করছে। এর মাধ্যমে বিএনপি নেত্রী ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। গতকাল (সোমবার) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রায়ে বিএনপি বিক্ষুব্ধ হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, এ ধরনের মামলায় একজন সাধারণ মানুষের জামিন হয়ে যায়। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন হলো না। অথচ জামিন পাওয়া তার আইনগত অধিকার। তিনি বলেন, দেশের মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল বিচারবিভাগ, বিশেষ করে উচ্চ আদালত। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে যেভাবে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে সেইদিনই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চলে গেছে।
তিনি বলেন, ক্ষোভের সঙ্গে বলছি, এই আদেশে সরকারের যে ইচ্ছা, সেই ইচ্ছাই প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষের যে আশা-আকাক্সক্ষার স্থল যে সর্বোচ্চ আদালত, সেই সর্বোচ্চ আদালতে আমরা ন্যায়বঞ্চিত হয়েছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বঞ্চিত হয়েছেন। গণতন্ত্রকে চূড়ান্তভাবে কবর দেওয়ার উদ্দেশ্যেই খালেদা জিয়াকে এভাবে বন্দি রাখা হচ্ছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, একটা কথা চালু আছে যে, কফিনের শেষ প্যারেকটি মেরে দেয়া। কফিনে শেষ প্যারেকটি মারা হয়েছে আজকে, আমি মনে করি দেশনেত্রীকে জামিন না দিয়ে। আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে মানুষের অধিকারগুলোকে হরণ করে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি এই অন্যায়- অত্যাচার, এই বিচার বিভাগকে ব্যবহার করার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দেশের সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, গণতন্ত্রকামী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহŸান জানান তিনি।
খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে সরকার কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কৌশলটা হচ্ছে জামিন স্থগিত করে দিয়েছে, নাকচ করেনি। এরপর হিয়ারিং হবে লিভ টু আপিলের। অর্থাৎ এভাবে ক্রমান্বয়ে যেতে থাকবে এবং তাকে আটকে রাখা হবে। এটা জামিন দিয়েও করতে পারতো। দুর্ভাগ্যজনক যে ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধাগুলো আদালতে তিনি পাচ্ছেন না। বিএনপি নেতা বলেন, আমরা আজকে বিক্ষুব্ধ হয়ে আপনাদের সামনে এসেছি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যা মামলার যে রায় হয়েছিল, সেই রায়ের পরে। আপনারা জানেন ৫ বছর সাধারণত আপিল করলেই জামিন হয়ে যায়। সেই মামলা জামিন পাওয়াটা এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা তার আইনগত অধিকার। এখন পর্যন্ত এই ধরণের ঘটনা ঘটেনি যে, ৫ বছর জামিন পায়নি। আমরা দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম থেকে লক্ষ্য করেছি যে, দেশনেত্রীর জামিন ও তাকে কারাগার থেকে বের করে আনবার যে আইনি প্রক্রিয়া, সেই আইনি প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত সচেতনভাবে বাধা দিচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে দীর্ঘদিন রেখে দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, সরকারের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ‘গণতন্ত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে বন্দি রেখে নীল নকশা’ অনুযায়ী একতরফা নির্বাচন দেখিয়ে আবার ক্ষমতায় চলে আসা। ইতিমধ্যে আপনারা শুনেছেনও। ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন যে, এটা এখন আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। এটা ডিসাইডেড, ডান। এই একটা অবস্থার মধ্যে আজকে আমরা আছি।
মহাসচিব বলেন, সরকার যেটা চাচ্ছে যে, ‘প্রভোক’ করে আমাদেরকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করার জন্য। আমরা সহজে সেই পথে পরিচালিত হবো না- এটা আপনাদেরকে নিশ্চয়তা দিতে চাই। আমরা ‘ট্র্যাপ্ড’ হতে চাই না। আমি সারাদেশের মানুষ, রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানাব- এই চরম সংকট থেকে উদ্ধার পেতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করি।
নেতাকর্মীদের উপর সরকারের নির্যাতনের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খুলনায় দলের ধর্ম বিষয়ক সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবুকে তিন দিন আগে তুলে নেওয়ার পর এখনো তার খোঁজ নেই। কিছুদিন আগে তেজগাঁও ছাত্র দলের নেতা জাকির হোসেন মিলন যে মারা গেল তার পরিবারের ইন্টারভিউ করার জন্য গতকাল কোন একটি বিদেশি সংবাদ মাধ্যম একটা জায়গা নিয়েছিল। সেকেন্ডের মধ্যে সেখানে পুলিশ ঘিরে ফেলেছে। পরিবারের সদস্যরা সেখানে থাকতে পারেনি। দেশের নিম্ন আদালতগুলো জামিন দিচ্ছে না অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেখেন আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কতদিন আগে গ্রেফতার হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তার জামিনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। কারণ নিম্ন আদালতকে বলে দিয়েছে শুনানি পরে হবে। যে কারণে এসকে সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি) সাহেবকে চলে যেতে হলো যে, নিম্ন আদালত সরকারের নিয়ন্ত্রণে না থাকে, এটা যেন সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে থাকে। সেজন্য বিধি-বিধান পরিবর্তন করতে বলা হয়েছে। সেটা সরকার করতে দেয়নি। এর ফলে কী হয়েছে? এখন আইন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নিম্ন আদালত চলছে। তারা বলে দিচ্ছে, একমাস/দুই মাস পরে শুনানি হবে।
দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা : খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ২০ মার্চ সারাদেশে বিক্ষোভ ও ২৯ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ফের জনসভা করার ঘোষণা করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আগামীকাল (আজ) সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঢাকা মহানগরের প্রতি থানায় থানায়, জেলা ও মহানগরে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ মার্চ আমরা আবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করব। সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সরকারকে আহŸান জানাচ্ছি যে, আমাদেরকে এই জনসভা অনুষ্ঠানের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন। একই দাবিতে গতকাল সোমবারও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সভা হওয়ার কথা থাকলেও পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি না মেলায় সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমূখ।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ২০ মার্চ, ২০১৮, ৪:২৬ এএম says : 0
    জনগন বলছেন, রূপবান গেছে বনবাসে, তাজেল ঘরে ঢুকে গেছে ৷শিয়ালে ভাংগা বেড়া চিনে ফেলছে ৷
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ