Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সীতাকুন্ডে ১শ’ কোটি টাকার শিম ও বীচি উৎপাদন

অবদান রাখছে জাতীয় অর্থনীতিতে

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সীতাকুন্ড (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলা শিম চাষের জন্য বিখ্যাত শুরু থেকেই। তাই এ অঞ্চলে শিম চাষের ঐতিহ্য দীর্ঘদিনের। ফলে চলতি বছর শিমের শেষ সময় পর্যন্ত ৬০ হাজার টনেরও বেশি শিম ও শিমের বীচি উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ১শ’ কোটি টাকার মত। প্রতিবছরের মত এবছরও শিমের বীচি দেশের প্রয়োজন মিটিয়ে বিদেশের ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ গুলোতে যাচ্ছে বলে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে। ফলে প্রতি বছর শিমের মৌসুমে শিমের বীচি রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। শিমের মৌসুম অনেকটা শেষ হয়ে গেলেও শিমের উৎপাদন কিন্তু থেমে নেই। বড়দারোগার হাট থেকে শুরু করে ভাটিয়ারী পর্যন্ত বি¯তৃত এলাকা জুড়ে শিমের উৎপাদন হয়। তবে চাষীরা এসময় তাদের উৎপাদিত ফসল সবজি শিমের বীচি পাইকারী দরে বিক্রি করছেন আগত পাইকারদের কাছে। পৌরসভাস্থ সিবপুর বসরত নগর ্এলাকার পুরানো এক চাষী মোঃ মেহেদী জানান, তিনি ১৬০ শতক জমিতে এবারও শিম চাষ করেছেন। এতে শ্রমিক ও বিভিন্ন বাবদ খরচ পড়েছে তার প্রায় ৭০ হাজার টাকা। তিনি এ পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার শিম ও শিমের বীচি বিক্রি করেছেন। এভাবে তিনি তার উৎপাদিত ফসল আরো প্রায় ৩০হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। শিমের বীচির দাম বর্তমানে অনেকটা কমেছে। তাই এখন শিমের বীচি পাইকারীর দরে হাঁট বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। অন্যদিকে বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল বøকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী জানান, তার এলাকায় এবছর ১৬০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩০০ চাষী শিমের চাষ করেছেন। তিনি বলেন প্রতি মৌসুমে সীতাকুন্ডের বিভিন্ন হাট থেকে শিম ও শিমের বীচি পাইকারী দরে ক্রয়করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেলেও পাইকাররা সীতাকুন্ডে ছুরি শিমের বীচি ঢাকা কাওরান বাজার হয়ে বিদেশের দেশ গুলোতে নিয়ে যাচ্ছে। ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়নের চাষী মোঃ খাইরুজ্জামান বলেন, শিম চাষ লাভ জনক। তাই এবার ১০০ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন তিনি। তবে ঘন ঘন কুয়াশার কারণে শিমের কিছুটা ক্ষতি হলেও উৎপাদন বেশি হওয়ায় তা অনেকটা পুষিয়ে গেছে। এতে খরচ পড়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এ পর্যন্ত শিমের বীচি বিক্রি করেছেন ১লাখ টাকা। আরো তিনি ২৫ হাজার টাকার মত বিক্রি করতে পারবেন বলে ধারনা করছেন। মুরাদপুর ইউনিয়নে দায়ীত্বে থাকা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জ্ঞান রঞ্জন নাথ জানান,তার এলাকায় ২০০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ হাজার চাষী শিম চাষ করেছেন। তিনি বলেন প্রথম দিকে অকাল বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশায় শিমের ফলনের একটু ক্ষতি হয়েছে। অপরদিকে এ ইউনিয়নের গুলিয়াখালী এলাকার চাষী মোঃ আয়ুব আলি বলেন,এবছর ৪০শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকার তাদের কাছ থেকে পাইকারী দরে শিম ও শিমের বীচি ক্রয়করে ঢাকা কাওরান বাজার হয়ে ইউরোপসহ বিদেশের মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নিয়ে যাচ্ছে। তবে শিমে এবার দলারোগে আক্রম করেছে। তাই অন্যান্য বছর থেকে শিমের ফলন একটু কম হলেও উৎপাদন ভাল হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল সরেজমিন ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে চাষীদের ক্ষেত ও হাট থেকে আগত পাইকাররা ট্রাকে করে শিমের বীচি দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন। হাটে অন্যান্য জাতের শিম পাওয়া গেলেও সবচেয়ে চাহিদা বেশি ছুরি শিমের বীচির। এ শিমের বীচি খেতে খুব সুস্বাদু । তাই এর কদর অন্যান্য শিম বীচ থেকে একটু বেশি। এরই কারণে উপজেলার অসংখ্য চাষীরা ছুরি শিমের চাষ করতে সব চেয়ে বেশি ভাল বাসেন। তাই সারা দেশ জুরে এর চাহিদা ও সুনাম সবার মুখে মুখে। এবিষয়ে উদ্ভিদ সংরক্ষণ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, সীতাকুন্ডে শিমের ৫টি জাত রয়েছে। তার মধ্যে ছুরি শিমের চাহিদা অন্যান্য শিমের থেকে অনেকাংশে বেশি। চাষীরা এই মৌসুমে সর্বত্রই শিমের চাষ করে থাকেন। শিম বীচি বিক্রি করে চাষীরা অনেক লাভবান হচ্ছেন। তাই তারা শিম মৌসুমে সাগরের বেড়িবাঁধ থেকে শুরুকরে জমির আইলেও এ শিম চাষ করেন। এদিকে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ সালেহীন বলেন চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২৩ হাজার ২৫০জন চাষী শিম চাষ করেছেন। ফলে শিমের শেষ সময় পর্যন্ত এবছর ৬০ হাজার টনেরও বেশি শিম উৎপাদন হবে। যার বাজার মূল্য ১শ’ কোটি টাকার মত। তাই উপজেলার চাষী পরিবার গুলো এই মৌসুমের জন্য প্রহর গুনতে থাকেন। শিমের উৎপাদন ও বিদেশে শিম রপ্তানী বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আমিনুল হক চৌধুরী দৈনিক ইনকিলাব কে বলেন,শিমের মৌসুমে ১শ’ভাগের ৬০ ভাগ শিমের বীচি মধ্যপাচ্যে যাচ্ছে। আর ১০ভাগ যাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতে। আর বাকি ৩০ ভাগ দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় পাইকাররা নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন,শুধুমাত্র সীতাকুন্ড অঞ্চলে মাটির গুণা বলি খুব ভাল বলে প্রতিবছর শিমের মৌসুমে শিমও শিমের বীচি উৎপাদন খুব ভাল হয় এখানে। তাই চাষীদের অধিক উৎপাদিত ফসল শিমের বীচি গ্রাম গঞ্জ ও শহর ছাড়িয়ে ইউরোপসহ বিশ্বের দেশ গুলোতে যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন দেশ প্রতি বছর শিমের মৌসুমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে, অন্যদিকে চাষীরাও শিম ও শিমের বীচি উৎপাদন করে আর্থিক ভাবে লাভবান ও জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি

৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ