Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত

খালেদা জিয়ার কারামুক্তি সম্ভব নয়- অ্যাটর্নি জেনারেল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হাইকোটের দেয়া চার মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে দুদক ও রাষ্ট্রপেক্ষর লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে দুই সপ্তাহের মধ্যে আপিলের সার সংক্ষেপ দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এটি আমাদের সবার ডিসিশন (সব বিচারপতির সিদ্ধান্ত) সর্বসম্মতিক্রমে এ আদেশ দিচ্ছি। জামিন স্থগিতের কিছুক্ষণ পর খালেদা জিয়ার আইনজীবীর শুনানির দ্রুত সময়ের শুরু করতে করজোড় আবেদন করলেও উচ্চ আদালত তা গ্রহণ করেনি। এসময় আদালত শুধু বলেছেন, আদেশ হয়ে গেছে এখন আর পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে ৮ মে মামলাটি শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে।
এদিকে জামিন স্থগিতের পর খালেদা জিয়ার কারামুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। অরপদিকে খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিতাদেশকে উচ্চ আদারতে ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনাকে বলে আখ্যায়িত করে বলেন, এটা একটি অনুভিপ্রেত আদেশ। নিন্ম আদালতের পর উচ্চ আদালতে গ্রাসের চেষ্টা চলছে।
গত বুধবার আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন ১৮ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে লিভ টু আপিল দায়েরের নির্দেশ দিয়ে শুনানির দিন ধার্য করে দেন। পাশাপাশি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জন্যও খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। গত রোববার তিনটি আবেদনের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত শেষে আদেশের জন্য সোমবারের দিন ধার্য রাখেন। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আব্দুর রেজাক খান, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরোদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল প্রমুখ। এছাড়াও কয়েকজন বিএনপি নেতাকেও আদালতে দেখা যায়। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে খুরশিদ আলম খান। জামিন আবেদন সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে ও বিভিন্ন গণম্যাধ্যমের কর্মরত সাংবাদিকদের উপস্থিত হতে থাকেন। এছাড়াও সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ছিলেন সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। আদালতের কার্যক্রম শুরু আগ থেকেই উভয়পক্ষের আইনজীবীরা হাজির উপস্থিত হন। এরপর সকাল ৯ টার দিকে প্রধান বিচাপরতিসহ চার বিচারপতির এজলাসে বসেন। এরপর প্রধান বিচারপতি লিভ টু আপিল মঞ্জুর করে এ আদেশে।
আদেশের সময় যা হল:
আদেশের শুরুতে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, এটা কিন্তু আমাদের সবার ডিসিশন। সর্বসম্মতিক্রমে এ আদেশ দিচ্ছি। এরপর আদালত খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ স্থগিত করে। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদককে আপিলের অনুমতি দিয়ে সারসংক্ষেপ জমা দিতে বলে। মামলাটি আগামী ২২ মে আপিল শুনানির জন্য রাখা হয়। আদেশের পর আপিল বিভাগ নিয়মিত কার্যক্রমে যায়। কিছু সময় পর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, আমি দুঃখিত। আপনি কী আদেশ দিয়েছেন সেটা বুঝতে পারিনি। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সর্বসম্মত হয়ে এ আদেশ দিয়েছি। জয়নুল আবেদীন বলেন, আমি এটা জানতে চাইনি। কোন যুক্তিতে লিভ গ্রহণ করেছেন সেটা জানতে চাই। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা নথি পর্যালোচনা করেছি। তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরাতো মেরিটে (মামলার মূল বিষয়বস্তুতে শুনানি করিনি) বলিনি। প্রধান বিচারপতি বলেন, আপিলে বলতে পারবেন।
এরপর খালেদা জিয়ার এ আইনজীবী বলেন, আপনারা সর্বোচ্চ আদালত। আপনারা যে আদেশ দেবেন শিরোধার্য্য। তবে ২২ মে অনেক দূর। আজকে যেভাবে লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করলেন, এটা নজিরবিহীন। অতীতে এই ধরনের ক্ষেত্রে কোনো দিন লিভ (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা হয়নি। তাহলে তো সব (অতীতের সব মামলায়) লিভই (লিভ টু আপিল) গ্রহণ করা উচিৎ ছিল। তখন প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ অফিসারকে ডেকে চার সপ্তাহের জায়গায় দুই সপ্তাহ করে দিতে নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ে জয়নুল আবেদীন আদালতকে বলেন, ঠিক আছে। আপনি দুই সপ্তাহ করলেন। ২২ মে তারিখের ওই সময়টা এগিয়ে আনার অনুরোধ করছি। এ সময় মাহবুব উদ্দিন খোকন আদালতকে বলেন, সরকার যে উদ্দেশ্যে এটা করেছে.। দুদক আর সরকারতো একাকার হয়ে গেছে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতে চায় এরপর জয়নুল আবেদীন বলেন, সময়টা কমিয়ে দেন। এপ্রিলে দেন। তখন বিচারপতি মো. ইমান আলী বলেন, তখন সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটি থাকবে। এ পর্যায়ে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ভ্যাকেশনের আগে দেন। এরপর বিচারপতি ইমান আলী তখন বলেন, আফটার ভ্যাকেশন। জয়নুল আবেদীন বলেন,আফটার ভ্যাকেশন হলে দিন নির্ধারণ না করলে তো একই থাকল? তখন প্রধান বিচারপতি ৮ মে পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন স্থগিত রেখে ওইদিন আপিল শুনানির দিন নির্ধারণ করে দেন।
আইনজীবীদের করজোর আবেদন:
খালেদা জিয়ার বিষয়ে আদেশের পর নিয়মিত কর্যাক্রমের ফাঁকে বেলা ১১টায় আদালত বিরতিতে যায়। সাড়ে ১১টায় আদালত আবার বসলে আপিল শুনানি এগিয়ে আনতে আরজি জানান খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। এসময় সিনিয়র আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। এজলাসের সামনে দাঁড়িয়ে খালেদার অন্যতম আইনজীবী সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার করজোড়ে বলেন, আদালতের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, সকলের পক্ষ থেকে করজোড়ে আবেদন করছি, খালেদা জিয়ার মামলা ভ্যাকেশনের আগেই শুনানির দিন ধার্য করা হোক। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ৮ মে দিন ধার্য করেছি। আমরা প্রথমে যে আদেশ দিয়েছিলাম আপনাদের অনুরোধে তা পুনঃবিবেচনা করেছি। আদেশ হয়ে গেছে এখন আর পরিবর্তন সম্ভব নয়। এরপরও জমির উদ্দিন সরকার অনুরোধ জানাতে থাকলে প্রধান বিচারপতি বলে, আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি, ৮ মে এই মামলা শুনানির জন্য তালিকায় শীর্ষে থাকবে। কোনো ধরনের মুলতবি ছাড়া বিরতিহীনভাবে শুনানি হবে। ৮ মে না হলেও ৯ মের মধ্যে এই মামলার নিস্পত্তি করব। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা আদালত কক্ষ থেকে বের হয়ে যান।
উচ্চ আদালতও গ্রাসের চেষ্টা -খালেদা জিয়ার আইনজীবী
খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছেন, এটি নজিরবিহীন আদেশ। জাতির উদ্দেশে বলতে চাই, এটা একটা অনভিপ্রেত আদেশ আজকে হলো, দেশের সর্বোচ্চ আদালত আজকে যে আদেশটি দিলেন, এতে আমরা খুব মর্মাহত হয়েছি। তিনি বলেন, আপনারা লক্ষ করেছেন, নিন্ম আদালতগুলো এই সরকার গ্রাস করে ফেলেছে। উচ্চ আদালতকেও মনে হচ্ছে আস্তে আস্তে... গ্রাস করার চেষ্টা করছে। আদালতকে এই জন্য আমি বলেছি, অতীতে কখনো আপনারা (আদালত) ইন্টারফেয়ার করেন নাই। সমিতির সভাপতি বলেন, হে আদালত, হাইয়েস্ট কোর্ট অব দি কান্ট্রি। সারা দেশের মানুষ আসে এখানে বিচার পাওয়ার জন্য। বিচারপ্রার্থীরা মানুষেরা জানতে চায় কী আদেশ দিলেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে আদেশ দিলেন। কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিভ গ্র্যান্ড করলেন। সেটা তো কেউ জানল না। আমি অন বিহাব দি বার। আমার জানার অধিকার আছে। তখন আদালত বললেন, আমরা এই সমস্ত কনভিকশন ইত্যাদি ইত্যাদি কনসিডার করে আমরা অর্ডার দিলাম। তখন আমি বললাম, আমরা তো মেরিটে এখানে আর্গুমেন্ট এখানে করি নাই। তার কোনো সদুত্তর আদালত আমাদের দেননি। খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, আমি আদালতকে এটাও বলেছি আপনারা যে শর্ট সেন্টেন্সে বেইল দিয়েছেন, তার কী হবে। আদালত সেটির কোনো আদেশ দেননি।
এখন আর মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়- অ্যাটর্নি জেনারেল
কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এখন আর মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি বলেছেন, এখন খালেদা জিয়াকে কারাভোগ করতে হবে। জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগের আদেশের পর নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। মাহবুবে আলম বলেন, আদালত লিভ টু আপিলের শুনানির জন্য ২২ মে ধার্য করেছিলেন। পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়ে এনে ৮ মে নির্ধারণ করেছেন। এ আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়ার এখন আর মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে না। তাঁকে কারাভোগ করতে হবে। নজিরবিহীন উল্লেখ করেছেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ ধরনের বক্তব্য নিশ্চয়ই খুব একটি ভালো উচ্চারণ নয়। জিনিসটাকে রাজনীতিকীকরণের জন্য তাঁরা চেষ্টা করছেন।



 

Show all comments
  • সফিক আহমেদ ২০ মার্চ, ২০১৮, ৩:০১ এএম says : 0
    আদালতের বিষয়। কিছু তো বলা যাবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • মাসুদ ২০ মার্চ, ২০১৮, ৩:০২ এএম says : 0
    দোয়া করছি আল্লাহ যেন তাকে সুস্থ রাখেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২৫ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ