Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চরভদ্রাসনে মাদকসেবী ধর্ষকদের দৌরাত্ম্য : বিপন্ন হচ্ছে জীবন অকালে ঝড়ছে প্রাণ মাতব্বরদের হস্তক্ষেপে হয় না বিচার

প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় সম্প্রতি ধর্ষকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে। এ অপরাধের শিকার অনেক কিশোরী নিজের মান-ইজ্জতের ভয়ে ধর্ষকের নির্যাতন মুখ বুজে সহ্য করে চলেছে। শুধু শিশু ধর্ষণের ঘটনাগুলো এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে দিন মজুরের পৃথক দু’টি শিশু কন্যা (৫) ও (৯)বছরের ধর্ষণের শিকার হয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আর শিশু ধর্ষণের মতো সর্বোচ্চ অপরাধগুলোও গ্রাম্য মাতব্বর ও স্থানীয় নেতৃস্থানীয়রা আপোস-মীমাংসার নামে সহায়ক ধর্ষক হিসেবে কাজ করে চলেছে। উপজেলার নারী-পুরুষের বিদেশ প্রবণতা, বিদেশী টাকায় মাদকসেবী বখাটে গ্রুপের অবাধ বিচরনণ ধর্ষকদের বেপরোয়া করে তোলেছে। চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাম প্রসাদ ভক্ত জানান, “আমরা মামলা নেয়ার জন্য এবং অপরাধীকে আইনের কাঠগড়ায় পাঠাতে সব সময়ই প্রস্তুত, কিন্তু বাদী পক্ষ অভিযোগ না দিলে আমরা আইনের প্রয়োগ দেখাতে পারি না”। স্থানীয় সূত্র মতে, সম্প্রতি উপজেলা সদর ইউনিয়নের উত্তর আলমনগর গ্রামের এক দিন মজুরের ৩য় শ্রেণিতে পড়ুয়া শিশু কন্যা (৯) প্রতিবেশী ফজল সেকের বখাটে ছেলে স্বপন সেক (২৪) উপর্যপুরি ধর্ষণ করেছে। শিশুটি আঃ মজিদখার ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির ছাত্রী। উক্ত শিশু ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর স্থানীয় মাতব্বররা ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য শিশুটিকে হাসপাতালেও আনতে দেয় নাই। পরে ইউএনও’র হস্তক্ষেপে হাসপতালে এনে ভর্তি করা হয়। এর মাত্র ৪ দিন পর উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আমিনখার ডাঙ্গী গ্রামের জমির খানের ছেলে এক সন্তানের জনক মুসা খান (৩২) পাশের বাড়ির এক কৃষকের কন্যা শিশু (৫)কে ধর্ষণ করেছে। শিশুটি মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। গত ক’ বছরে উপজেলায় ধর্ষণ ও অপহরণের মতো অনেক ঘটনাই ঘটেছে। ধর্ষণজনিত অপরাধের শিকার হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩ কিশোরীর। এদের মধ্যে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নের টিলারচর গ্রামের রোজিনা আক্তার (১৪) ও চরহরিরামপুর ইউনিয়নের শালেপুর মৌজার চম্পা আক্তার (১৪) ধর্ষণ অপরাধের শিকার হয়ে মান-ইজ্জতের ভয়ে মুখ বুজে থাকার পর অবৈধ গর্ভের সঞ্চার হয়। ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া উক্ত দুই কিশোরী গর্ভপাত করতে যেয়ে অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণে মারা যায় বলে এলাকাবাসী জানায়। ৯ম শ্রেণীতে পড়–য়া আরেক কিশোরী রুপা আক্তার (১৪) ধর্ষণ অপরাধের শিকার হওয়ার পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর সরকারি সেপ হোমে লালন-পালন হচ্ছে ২ কিশোরী। এরা হলো-উপজেলা হেলিপ্যাড এলাকার রহিমা বেগম(১৬) ও উপজেলা বাজারের মানসিক প্রতিবন্ধী ফতেমা পাগলীর মেয়ে ছকিনা বেগম (১৫)। এছাড়া উপজেলা গাজীরটেক ইউনিয়নের দক্ষিণ চরসুলতানপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর বাক প্রতিবন্ধী পারুল আক্তার (১৬) কে ধর্ষণের ঘটনা উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় বার বার আলোচনার ঝড় ওঠার পরও মামলা হয় নাই। একই ইউনিয়নের চরঅযোধ্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসমিন আক্তার গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে নিজ বাড়িতে ৪ বখাটে দ্বারা ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এলাকাবাসী পোস্টারিং করে ৪ ধর্ষককের শাস্তি কামনা করেছেন। এরা হলো-উক্ত গ্রামের সুরুজ মিয়া (২২), বজলুর রহমান (২৮), নান্নু মিয়া (৩২) ও মুনতাজ ফকির (৩০)। অভিযোগ রয়েছে চরহরিরামপুর ইউনিয়নের ইন্তাজ মোল্যার ডাঙ্গী গ্রামের লাল মিয়া সেকের ছেলে ইছাহাক সেক (২৮) পার্শ¦বর্তী বিশাই মাতব্বর ডাঙ্গী গ্রামের গৃহবধূ রীনা আক্তার (২৪) কে ধর্ষণ করতে যেয়ে ব্যর্থ হওয়ার পরের রাত ১২টায় ধর্ষক সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে উক্ত গৃহবধূকে তার বাড়ি থেকে অপহরণ করতে গেলে গ্রামবাসীর তোপের মুখে ধর্ষকদল পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ ব্যাপারে নির্যাতিতা সমাজের কাছে বিচার পায়নি বলে জানা যায়। উক্ত গৃহবধূর এক সহযোগী চরহরিরামপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার আঃ হাই জানান, “থানায় আমাদের মামলা নেয় নাই। একই ইউনিয়নের আরেক তরুণি মোসা রুনু (১৮) কে বিশাই মাতুব্বর ডাঙ্গী গ্রামের মৃত পরান ফকিরের ছেলে ঈসমাইল ফকির (৩৫) গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর রাত আনুমানিক ২টায় তরুণির নিজ বাড়িতে একা পেয়ে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে উক্ত তরুণি কোনো প্রতিকার পায়নি বলে জানা যায়। উক্ত তরুণি জানায়, “কোনো উপায় না ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারকী আদালতে নালিশি পেশ করেছি। এছাড়া চরহরিরামপুর ইউনিয়নের মাসুদ খার হাট এলাকার চাঞ্চল্যকর ডালিয়া আক্তার (১৩) ও চরভদ্রাসন ইউনিয়নের কামার ডাঙ্গী গ্রামের সুমি আক্তার (১৪) ধর্ষণের ঘটনাগুলো গ্রাম্য মাতব্বররা ধর্ষিতার অভিভাবকের হাতে লাম-ছাম অর্থ তুলে দিয়ে ধামাচাপা দিয়েছে। আর ধর্ষক চক্র রাজনৈতিক, এলাকার প্রভাবশালী মহলের আশ্রয়ে একের পর এক অপরাধ করেই চলেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ