পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের এ অর্জন অনন্য ঘটনা। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ায় বাংলাদেশের সামনে যেমন নতুন সম্ভাবনা ও সুযোগ তৈরি হবে তেমনি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। তবে যথাযথ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার কার্যকর বাস্তবায়ন হলে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব বলে মত দিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার একটা আনুষ্ঠানিক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হলো এই অর্জন। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নি¤œ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টগুলো (এমডিজি) ভালোভাবে অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছে। এর সঙ্গে আরেকটি অর্জন যোগ হলো। এটি উন্নয়নের পথে আরেকটি মাইলফলক। বাংলাদেশ যে এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্য তার স্বীকৃতি দিল জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট কমিটি। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাবে।
তিনি বলেন, আমাদের এখন সামনের দিকে তাকাতে হবে। এর পাশাপাশি সতর্ক থাকতে হবে, যাতে আমরা মাঝখানে আটকে না যাই। অর্থাৎ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছে এখানেই যেন আটকে থেকে না যাই। সামনে এগুতে হবে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, এজন্য আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। তা না হলে আমাদের মাঝপথেই হোঁচট খেতে হবে। এদিকে আমাদের বেশি করে নজর দিতে হবে। এ ছাড়া বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বিদেশি বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করে বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের প্রচুর কাজ করতে হবে। ব্যয় সংকোচনমুখী হতে হবে। এর পাশাপাশি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এই গবেষক।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ অর্জন ধরে রাখতে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগসহ এফডিআই বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, উৎপাদন ও রফতানি বহুমুখীকরণের কোনো বিকল্প নেই। তিনি রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়ের পরামর্শ দেন। এ ছাড়া রেমিটেন্স ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, এই করণীয়গুলো ঠিকঠাক না হলে শুধু স্বীকৃতিতে তেমন উপকার হবে না।
তিনি বলেন, যেসব দেশ এখন পর্যন্ত স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উত্তীর্ণ হয়েছে তাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধির হার, বৈদেশিক সাহায্য ও বৈদেশিক আয় কমেছে। তবে প্রায় প্রত্যেক দেশের ক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বেড়েছে। একটি দেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থান বাড়ার সুযোগ তৈরী হয়। তবে অনেকসময় দীর্ঘমেয়াদে দেশীয় সঞ্চয়ের চেয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগ আয় বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবে ঘাটতি (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট) সৃষ্টি হয়। যার ফলে বৈদেশিক আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নেতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
মীর্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের এ অর্জন নিয়ে খুব বেশি আত্মতুষ্টিতে না ভুগে সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেয়া উচিত। তিনি বলেন, এ অর্জনে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাÐের অর্থায়নে চাপ তৈরি হবে। কিন্তু দরকষাকষির দক্ষতা বাড়লে ও সুশাসন নিশ্চিত করা গেলে বড় চাপ হবে না। অবকাঠামো উন্নয়নের যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা আরো বেগবান করতে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়মকানুনের জটিলতা দুর করতে হবে। মানবসম্পদ বিশেষত শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এ স্বীকৃতিতে বাংলাদেশের বড় ধরনের ব্রান্ডিং হবে। এখানকার অর্থনীতি উদীয়মান, এখানে বড় বাজার সৃষ্টি হচ্ছে-এমন বার্তা বিশ্ববাসী পাবে। এলডিসি থেকে উত্তরণের অন্যতম শর্ত হলো- অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকের মানদÐে উত্তীর্ণ হওয়া। বাংলাদেশ এ শর্ত পূরণ করতে পারছে। এর মানে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যেসব ঝুঁকি বা দুর্বলতা রয়েছে তা একটি নির্দিষ্ট মানদÐের চেয়ে কম। এই বার্তা বিনিয়োগকারীদের উপলব্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোন দেশের বাজার কেমন, মুনাফা কেমন আসবে, অপ্রত্যাশিত ঝুঁকি আছে কি-না-এমন কিছু বিষয় বিবেচনা করে। তারা যখন দেখবে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়ছে, মানে এখানে অভ্যন্তরীণ বাজার বড় হচ্ছে, তখন তাদের আগ্রহ বাড়বে। যখন দেখবে অর্থনীতির ভঙ্গুরতা এখানে কম, তখন তাদের ধারণা ইতিবাচক হবে। দেশের বাইরের বিভিন্ন উৎস থেকে সরকার এবং বেসরকারি খাতের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘ক্রেডিট রেটিং’ আগের চেয়ে ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশ তার উন্নয়ন অভিযাত্রায় একটি নতুন স্তরে প্রবেশ করছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেছেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হলে সরাসরি কোনো লাভ পাওয়া যাবে না। তবে উত্তরণের পর বাংলাদেশ সম্পর্কে বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন হবে। বিষয়টি নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য সহায়ক হতে পারে। তিনি জানান, বাংলাদেশের অগ্রগতি যেভাবে আছে, তার কোন বড় ধরনের ব্যত্যয় না ঘটলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হবে। এটি যেমন মর্যাদার তেমনি এর সঙ্গে বেশ কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ যুক্ত হবে। দেখার বিষয়, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ কতটা দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে। এটা ঠিক, এই স্বীকৃতির বড় বিষয় মর্যাদার। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এটি তারই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তিনি বলেন, আমাদের অর্থনীতি এখনো পুরোপুরি শিল্পায়িত হয়নি। এই পরিপ্রেক্ষিতে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের পাশাপাশি আমাদের পরিস্থিতিনির্ভর অর্থনীতি থেকে উৎপাদনশীলতানির্ভর অর্থনীতির দিকে যেতে হবে। প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনের জন্য আমাদের প্রযুক্তির আধুনিকায়ন, দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সেইসঙ্গে অবকাঠামোসহ ব্যবসায় পরিবেশ সক্ষমতা, বন্দর সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। যাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা না পেলেও পণ্যের দাম ঠিক রেখে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখা যায়।
তিনি আরও বলেন, নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম হলো-চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। এর একটা প্রভাব ভবিষ্যতে আসবেই। বিশ্বব্যাপী রোবোটিক্স কিংবা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রসার ঘটছে। এসবের প্রভাবে শ্রম চাহিদার পরিবর্তন হবে। চীন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ শ্রমনিবিড় প্রযুক্তির উৎপাদনে থাকতে চাইছে না। তারা যখন বিনিয়োগ স্থানান্তরের চিন্তা করবে এবং যদি বাংলাদেশের কথা ভাবে তাহলে এখানে তখন উন্নততর প্রযুক্তিতে কারখানা স্থাপন করতে চাইবে। এ জন্য যে ধরনের শ্রমিক চাহিদার দরকার হবে তা দিতে না পারলে তারা আসবে না। এখন পর্যন্ত ভিয়েতনাম এদিক থেকে বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে আছে। বাংলাদেশ এ ধরনের সুবিধা গ্রহণের প্রস্তুতি নিতে না পারলে তখন ভিয়েতনামের মতো দেশে বিনিয়োগ চলে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।