রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
এম বেলাল উদ্দিন, রাউজান (চট্টগ্রাম) থেকে
রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগ বিভিন্ন ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী নির্বাচনে জটিলতা কাটছে না। তৃণমূলের ভোটে প্রার্থী নির্বাচনের জেলা নেতৃবৃন্দের কৌশলী ভূমিকায় কিছু কিছু ইউনিয়নে একক প্রার্থী নির্বাচন করা সম্ভব হলেও এখন অনেক ইউনিয়নে নৌকার দাবিতে পক্ষ বিপক্ষের অনড় অবস্থানে রয়েছেন। এই জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে মূলত রাউজান আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকের মত দ্বৈততার কারণে। জানা গেছে, রাউজানের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বে দলের প্রার্থী নির্বাচনে আগে থেকে ইউনিয়নে ইউনিয়নে ভোট উৎসব শুরু হয়। তৃণমূলের ভোটার ও সমর্থকদের নিয়ে অনেকেই অংশ নেয় এই উৎসবে। উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও একটি কমিউনিটি সেন্টারের সম্প্রতি অনুষ্ঠিত তিনটি বর্ধিত সভায় নৌকার একক প্রার্থী অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে অনুমোদন পায় অপর দুটি ইউনিয়নে। প্রতিটি সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দ। তবে প্রথম দিনের দুটি সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সভাপতি। দ্বিতীয় দিনের তিনটি সভায় অনুপস্থিত ছিলেন উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দিন খান। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, মুখর পরিবেশে বর্ধিত সভা তিনটি করা হয় সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। সভার মূল কক্ষে ভোট দানের জন্য প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয় হলদিয়া ইউনিয়নের তৃণমুলের ৬৫ জন ভোটার ও নৌকা প্রত্যাশী প্রার্থীদের। প্রথমে প্রার্থীদের সুযোগ দেয়া হয় পরস্পরের প্রতি ছাড় দেয়ার সমঝোতা করতে। এই চেষ্টা ব্যর্থ হলে ভোট করা হয় গোপন ব্যালেটে। পাঁচ জন প্রার্থীর মধ্যে সর্ব্বোচ ভোটে বর্তমান চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম নির্বাচিত হয়। তিনি পান ৩১ ভোট। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় এই ভোটদান শেষে ফলাফল ঘোষণা করলে বিজয়ী প্রার্থীরা বিজয় উৎসবে মেতে উঠে। অনেকেই আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করে স্ব স্ব ইউনিয়নের দিকে চলে যায়। পরে অনুষ্ঠিত হয় নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের বর্ধিত সভা। এখানে অন্য কোন প্রার্র্র্থী না থাকায় বর্তমান চেয়ারম্যার সরোয়ার্দ্দী সিকদার এককভাবে দলের প্রার্থী মনোনীত হয়। বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ মইনুদ্দিন, রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহসানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, কামাল উদ্দিন আহম্মদ, বশির উদ্দিন খান, জমির উদ্দিন পারভেজ প্রমুখ। স্থানীয় সূত্র সমূহ থেকে জানা যায়, আগেও এই উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশির ভাগ ইউনিয়নের তৃণমূলের ভোটার তালিকা নিয়ে হৈচৈ ছিল। অভিযোগ উঠেছিল ভোটার তালিকায় জাল জালিয়াতির। এই নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগে দুটি বিভক্ত ধারার সৃষ্টি হয়। শালিশ, নালিশ করতে হয় জেলা নেতৃবৃন্দকে গভীর রাত জেগে। জেলা নেতৃবৃন্দ এই সমস্যা সমাধান করতে উপজেলা ও ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করে শেষ পর্যন্ত সমাধান আসে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা সংশোধনের পর। এসব সমস্যা সমাধানের পরও দলের উপজেলা জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বেবীর সাথে সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দিন খানের মধ্যে বিভাজন থেকে যায়। যার কারণে গত দুদিনে অনুষ্ঠিত পাঁচটি বর্ধিত সভার মধ্যে তিনটি হয়েছে সাধারণ সম্পাদকের অনুপস্থিতিতে। দুটিতে অনুপস্থিত ছিলেন সভাপতি। যদিও পাঁচটি সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা উপজেলার বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। সূত্র জানায় দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দিন খান গত ২২ মার্চ সভাপতির অনুপস্থিতিতে বর্ধিত সভা করেন নিজ ইউনিয়ন কদলপুর ও নিকটবর্তী পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নে। দুটি ইউনিয়নের সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ পালিত, জেলা কৃষক লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী, জেলার সদস্য আলহাজ্ব দিদারুল আলমসহ ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ। দুটি বর্ধিত সভায় নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয় দুটি ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাহেদ উদ্দিন চৌধুরী লিংকন ও লায়ন সাহাবুদ্দিন আরিফকে। গত ২৩ মার্চ উপজেলার উরকিরচর, নোয়াজিষপুর ও হলদিয়া ইউনিয়নের তিনটি বর্ধিত সভা হয় উৎসবমুখর পরিবেশে। উরকিরচর ইউনিয়নে বর্ধিত সভাটি হয় স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে। এখানে জেলার নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলহাজ আবুল কালাম আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জসিম উদ্দিন শাহ, ডা. শেখ শফিউল আজম, অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন চৌধুরী, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ, নুরুল আবসার মিয়া, আখতার হোসেন খান, এসএম শফিউল আলম, আইরুন্নেছা নিলু, শফিউল আলম, রফিক সওদাগর, ত্রীদিব বড়–য়া প্রমুখ। উপজেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী এই বর্ধিত সভায় উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে বলেন একই সময়ে উত্তরের দুটি সভায় অনুষ্ঠিত হওয়ায় সেখান উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে ঐ সভাটির প্রতি তার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। মুসলিম উদ্দিন খান এই প্রতিনিধি কে বলেছেন, সভার ব্যাপারে তাকে সভাপতি অবহিত করে নাই। তাই তিনি সভায় উপস্থিত থাকেন নাই। গত ২৪ মার্চ নোয়াপাড়া ও বাগোয়ানে দুটি বর্ধিত সভায় নৌকার প্রার্থী নির্বাচন করতে বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতা রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যার আলী শাহ প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। ইউনিয়র আওয়ামী লীগের সভাপতি সুনিল চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল আলমের পরিচালনায় উপস্থিত ছিলেন রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেতা মোজাফ্ফর হোসেন, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, নাইয়েম উদ্দিন চৌধুরী, যুবলীগ নেতা আহসান হাবিব চৌধুরীসহ জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ। বাগোয়ান ইউনিয়নে দলের তিন প্রার্থী হওয়ায় সমঝোতায় ভিক্তিতে ছেড়ে দেয়া হয় বর্তমান চেয়ারম্যান ভূপেষ বড়–য়াকে। পরে জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দ ভূপেষ বড়য়াকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেন। নোয়াপাড়া ইউনিয়নে একইভাবে কোন প্রার্থী না হওয়ায় বর্তমান চেয়ারম্যান দিদারুল আলমকে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। উল্লেখ্য, এই দুইটি সভাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুসলিম উদ্দিন খান উপস্থিত ছিলেন না। দলের প্রার্থী নির্বাচনে দলের দায়িত্ব হিসাবে ইউনিয়ন বর্ধিত সভায় উপস্থিত না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদক আমাকে কিছুই জানানি। এছাড়া উপজেলার সভাপতিও আমাকে বলেনি। তারা সম্পূর্ণ অগতান্ত্রিক পন্থায় এক তরফা প্রার্থী নির্ধারণ করছে। তিনি বলেন, বাগোয়ান ইউনিয়নের দলের প্রার্থী মোশারফ হোসেন ছোটন আমাকে অভিযোগ দিয়েছে তার সমর্থিত তৃণমূলের ভোটারদের সন্ত্রাসী দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। অনেক সদস্যকে ভয় দেখিয়ে বর্ধিত সভায় যেতে বাধ্য করেছে। তিনি জেলার কাছে অভিযোগ গুলো উপস্থাপন করবেন বলে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।