Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনার জনসভার প্রস্তুতি সঙ্কটকালেও উজ্জীবিত বিএনপি

চট্টগ্রামের ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতিতে ঢেউ : এক সপ্তাহে দুই শোডাউন

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ১৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 চট্টগ্রামে এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রধান দুই দলের শোডাউন এ অঞ্চলে ঝিমিয়ে পড়া রাজনীতিতে ঢেউ তুলেছে। চাটগাঁর ঘরে বাইরে রাজনীতি সচেতন মানুষের মাঝে চলছে এপিঠ-ওপিঠ আলোচনা। ধর-পাকড় ভয়-ভীতিসহ অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে চট্টগ্রামে গত ১৫ মার্চ বৃহস্পতিবার বিএনপির বিশাল এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। লালদীঘি ময়দানে এ জনসভার জন্য ১৪ ও ১৫ মার্চ মাঠ ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া গেলেও পুলিশের অনুমতি মিলেনি। তা সত্তে¡ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের অনমনীয় ও কঠোর অবস্থান বুঝতে পেরে শেষ পর্যন্ত নুর আহম্মদ সড়কে সমাবেশের অনুমতি মিলে। এ জনসভা ডাকা হয় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী ও কেন্দ্রীয় কমিটির ডজন সংখ্যক নেতার উপস্থিতিতে আশপাশের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে বিশাল এই জনসভা অনেকেরই ধারণাকে ছাড়িয়ে গেছে। শান্তিপূর্ণ অথচ উত্তাল এই সমাবেশে সবার মুখে মুখে শ্লোগান ধ্বনিত হয়, ‘জিয়া- খালেদা’, ‘জিয়া- তারেক’, ‘আমার মা খালেদা- কারাগারে থাকবে না’ ইত্যাদি। মামলা, হুলিয়া, ধর-পাকড়, গুমসহ সরকারের নিপীড়নমূলক কর্মকাÐের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা জনসভায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রীরা হেলিকপ্টারে করে বিভিন্ন স্থানে সভা করছেন, নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। অথচ বিএনপিকে রাস্তায় নামতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এটাই কী গণতন্ত্র? এদিকে জনসভায় স্বল্প সময়ের নোটিশে স্থান পরিবর্তন ও প্রতিকূল অবস্থা মোকাবিলা করে চট্টগ্রামে বিএনপির জনসভায় এই শোডাউন সম্পন্ন করে বেগম খালেদা জিয়া-বিহীন দলের চলমান সঙ্কটকালেও বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী-সমর্থকরা এই মুহূর্তে দারুন উজ্জীবিত। জনসভা শেষ হলেও তার রেশ এখনও কাটেনি। 

অপরদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে চট্টগ্রামে বিভাগীয় পর্যায়ের জনসভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২১ মার্চ বুধবার। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া হাইস্কুল মাঠে এ জনসভার জন্য এখন চলছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি বড়সড় আয়োজন। প্রধানমন্ত্রীর জনসভার আর বাকি মাত্র ৩ দিন। জনসভায় অভূতপূর্ব চমক সৃষ্টির লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামের নেতারা জোরালো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাণিজ্যিক রাজধানী প্রাচ্যের রাণী খ্যাত চট্টগ্রামকে গত বেশ কিছুদিন ধরে সাজানো হচ্ছে নববধূর সাজে। চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, পতেঙ্গা ১৫নং থেকে শুরু করে বিমানবন্দর-বন্দর রোড, সিডিএ এভিনিউ, সার্কিট হাউস পর্যন্ত সড়ক, মোড়গুলোতে ডিজিটাল শিল্পকর্ম এবং নজরকাড়া আলোকসজ্জার মাধ্যমে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে সিটি কর্পোরেশন। এই রুটেই প্রধানমন্ত্রী ও অন্য ভিআইপিরা আসা-যাওয়া করবেন। তবে নগরীর বহদ্দারহাট, এমনকি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) স্বঘোষিত ‘কর্মবীর’ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের নিজের এলাকা চান্দগাঁও, সিএন্ডবি, কাপ্তাই রাস্তার মোড়, কালুরঘাট, মোহরা, বাকলিয়া এবং মুরাদপুর, ষোলশহর, বিবিরহাট, অক্সিজেন, পোর্ট কানেকটিং রোড, হালিশহর, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, সাগরিকা, পাহাড়তলী, অলংকারসহ নগরীর ব্যাপক অংশজুড়ে সড়ক রাস্তাঘাট অলিগলির জরাজীর্ণ ও ভাঙাচোরা দশা বিরাজ করছে। এসব এলাকার লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম মহানগরীর শুধুই ভিআইপি সড়কের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে সাময়িক কসমেটিক্স সার্জারি কতটা সুফল দেবে এবং এটি কোনো স্থায়ী বা টেকসই সমাধান কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন ও সংশয় দেখা দিয়েছে। সচেতন নগরবাসী কেউ কেউ আলাপচারিতায় বলতে শোনা গেছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি উপরোক্ত ভাঙাচোরা জরাজীর্ণ সড়ক রাস্তাগুলো আকস্মিক পরিদর্শন করতে যান তাহলেই চট্টগ্রামের দুরবস্থার আসল চিত্র ফুটে উঠবে’।
গত এক সপ্তাহ যাবত চট্টগ্রাম মহানগর, দক্ষিণ ও উত্তর জেলায় এবং জনসভাস্থল পটিয়ায় দফায় দফায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহের উদ্যোগে প্রস্তুতি সভা, প্রতিনিধি সভা, বর্ধিত সভা ইত্যাদি। এসবকিছুর টার্গেট হলো পটিয়ার জনসভায় এক-দেড় লাখ এমনকি আরও বেশি লোক সমাগমের মধ্যদিয়ে জনসভাকে পরিপূর্ণ সফল করে তোলা। এসব প্রস্তুতি কার্যক্রমের তদারক করছেন মূল সমন্বয়কারী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। আরও আছেন কেন্দ্রীয় ও চট্টগ্রামের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি, নেতৃবৃন্দ। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার পটিয়ার জনসভা সফল করার লক্ষ্যে আজ (রোববার) বিকেল ৩ টায় নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট (টিআইসি) মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে দলের মহানগর নেতৃবৃন্দ, সদস্য, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহŸায়ক, যুগ্ম আহŸায়ক ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, আহŸায়ক, যুগ্ম আহŸায়কদের উপস্থিত থাকতে মহানগর সাধারণ সম্পাদক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন অনুরোধ জানান।
এদিকে আগামী ২১ মার্চ বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে পটিয়ায় আয়োজিত জনসভাকে ঘিরে বর্তমান সরকারের চলমান পর পর দুই মেয়াদে চট্টগ্রামবাসীর কাছে দেয়া নির্বাচনী ওয়াদা গত ৯ বছরে বাস্তবায়ন কতদূর হয়েছে, কতদূর হয়নি তা নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে এখন জোরেশোরে। দীর্ঘদিন আলোচিত নির্বাচনী ওয়াদা ও নাগরিক সমস্যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্ষাজুড়ে ভয়াবহ পানিবদ্ধতা, সিডিএর সমন্বয়বিহীন ও অপরিকল্পিত উন্নয়নে জনদুর্ভোগ (এমনকি অপরিকল্পিতভাবে তৈরি ফ্লাইওয়ারগুলোতে যানবাহন তেমন চলে না অথচ নিচের সড়কে রাত-দিন যানজট), সিটি কর্পোরেশনের চাহিদা অনুপাতে অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির মাধ্যমে উন্নয়ন কাজকর্ম বেগবান করা, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কট নিরসন, দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের পথ সুগম করা, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের আধুনিককায়ন ও স¤প্রসারণ। বন্দরসহ চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের অধিবাসীদের বঞ্চিত করা এমনকি নিয়োগ প্রক্রিয়া ঢাকায় স্থানান্তরের বিরুদ্ধেও জনমনে রয়েছে চাপা ক্ষোভ-অসন্তোষ। চট্টগ্রামের উন্নয়নে অবহেলা বিশেষত নির্বাচনী ওয়াদা-আশ্বাস পূরণে মন্ত্রী-এমপি, নেতাদের নির্লিপ্ততার পরিপ্রেক্ষিতে চাটগাঁর তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থকদের মাঝেও অসন্তোষ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্দরনগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে ২০১২ সালের ২৮ মার্চ সর্বশেষ জনসভায় ভাষণ দেন। চট্টগ্রাম জেলায় ২০১৩ সালের ২৯ আগস্ট ফটিকছড়িতে জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। ২০১৬ সালে ৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ এবং ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধনকালে সুধী সমাবেশে এবং আগ্রাবাদে চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর ২১ মার্চের জনসভাকে কেন্দ্র করে দলের সর্বস্তরে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে।



 

Show all comments
  • আকাশ ১৮ মার্চ, ২০১৮, ৩:৩৭ এএম says : 0
    সঙ্কটকালেও উজ্জীবিত বিএনপি-- কথাটি শুনে খুব ভালো লাগলো
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ