পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পশ্চিমা বিশ্বে অবস্থানরত নিভৃতচারী এক ইসলাম প্রচারক বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যু সংবাদের নিচে কমেন্ট করেছিলেন, ‘কতইনা ভালো হতো যদি তিনি ইসলামগ্রহন করে মৃত্যুবরণ করতেন।’
এ মন্তব্যের উপর কিছুক্ষনের মধ্যেই ২/৩ শ লাইক পড়ে। ১০/১২ জন অমুসলিম পজেটিভ মন্তব্য করেন এবং প্রচুর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসতে থাকে এই দাওয়াতকর্মীর আইডিতে। কিন্তু যখনই তিনি এ বিষয়টি বাংলাদেশী সংবাদে এপ্লাই করেন, তখন দেখা যায় এর উল্টো চিত্র। নাস্তিকরা তাকে আক্রমন শুরু করে। এই হলো আজকের মুসলিম সমাজ ও পাশ্চাত্যের মনস্তাত্তি¡ক পার্থক্য। গতকাল আমিও সংক্ষিপ্ত মূল্যায়ন দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেই। আলহামদুলিল্লাহ, হাজার হাজার লাইক ও অগণিত ইতিবাচক মন্তব্য আসে। ভাবলাম, বিশ্বাসী মানুষের আস্থার কাগজ দৈনিক ইনকিলাবেও এই পদার্থ বিজ্ঞানীর জন্য ক’টি লাইন লিখি। অন্তহীন বিশাল মহাজগতের তুলনায় আমাদের এই পৃথিবী ধুুলিকণার সমানও না। সে তুলনায় মানুষ কত ক্ষুদ্র প্রাণী, তার অস্তিত্বইবা কি? অন্তহীন বললাম কথার ছলে।
মূলত: সৃষ্টিজগত অন্তহীন নয়। এর আদিও আছে অন্তও আছে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রতিনিয়ত সম্প্রসারমান মহাসৃষ্টিজগতের মালিকানা যার হাতে আমি সেই খোদা। আমি সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।’ -সূরায়ে মুলক। বিশ্বের সেরা পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং (৭৬) মারা গেছেন। খুব কষ্ট পেয়েছি। তার মৃত্যুর জন্য যতো না তার চেয়ে কোটিগুণ কষ্ট পেয়েছি তার ঈমান হারা হয়ে মৃত্যুর জন্য। তিনি বিশ্বাস করতেন আল্লাহ বলতে কেউ নেই। তিনি বলতেন, ‘স্বর্গ বলে সম্ভবত কিছু নেই। মৃত্যুর পরে জীবন বলে কিছু হয় না। এই অসাধারণ পৃথিবী উপভোগ করার জন্য আমাদের একটাই জীবন।’ তিনি বলতেন, ‘পৃথিবী বেশীদিন টিকবে না, সম্ভবত মানুষ আর ২০০ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই মানুষের উচিত অন্য কোনো গ্রহে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। তিনি বলতেন, আমাদের পৃথিবীর উপরে স্থান, কাল, পাত্র বলতে কিছু নেই। চারিদিকে শুধু শূন্যতা। এক মহা দুর্ঘটনায় সৃষ্টিজগত তৈরি হয়েছে। মানুষ তখনই চরম বোকামীর পরিচয় দেয় যখন সে নিজের সৃষ্টিকর্তা কে ভুলে যায়। সে যে একটি জীব মাত্র নয় বা একটি বুদ্ধিমান প্রাণী মাত্র নয়, তার একটি আধ্যাত্মিক অবস্থান রয়েছে। এ বিষয়টি না বোঝার কারণেই সে গোমরাহ হয়ে যায়। সরল পথ পায় না। সিরাতে মুস্তাকিম থেকে ছিটকে পড়ে। হকিংয়ের জন্ম ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারী। ১৬৪২ সালের এই দিনে গ্যালিলিও মারা যান। অপরদিকে তার মৃত্যু ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ। আশ্চর্যজনকভাবে ১৮৭৯ সালের এ দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন আইনস্টাইন। বিজ্ঞানের ২ দিকপালের জন্ম ও মৃত্যুর সাথে বহু শতাব্দী ব্যবধানে হলেও হকিংয়ের জন্ম ও মৃত্যুর তারিখ মিলে যাওয়া কী একান্তই কাকতালীয় না এরসাথে মহান সৃষ্টিকর্তার কোনো আধ্যাত্মিক ইশারা জড়িত। বিজ্ঞান আল্লাহর সৃষ্টি। বিজ্ঞানীরা তার দানেই জ্ঞানের সন্ধান পান। বিশ্বাস থেকে অবিশ্বাসের দিকে যাকে দিয়ে নাস্তিকেরা যাত্রা শুরু করে। তার মৃত্যুতে কোন ধরনের দিন বদল শুরু হয় তা কেবল আলিমুল গায়েবই জানেন। তার সব কাজেই থাকে অজানা অনেক রহস্য। বহু বছর আগে ইতিহাসে দেখা যায়, একই বছর ইমামে আজম আবু হানিফা রহ. এর মৃত্যুর দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ইমাম শাফেয়ী রহ.।
একজন নগন্য দাওয়াত কর্মী হিসাবে আমার আফসোস এখানেই যে, তিনি সব কিছুর ¯্রষ্টা ও নির্মাতাকে বিশ্বাস করতেন। পদার্থ বিজ্ঞানী হিসাবে তার কাÐজ্ঞান, আইকিউ, গবেষণা ও উপলব্ধি ছিল যুগশ্রেষ্ঠ। কিন্তু তিনি তার চারপাশের সবকিছুর ¯্রষ্টা ও নির্মাতাকে বিশ্বাস করলেও, করতেন না শুধু তার নিজের ¯্রষ্টাকে। মহা জগতের ¯্রষ্টা ও বিধাতাকে। তার জীবন মৃত্যু রিযিক দৌলত সুখ দুখ সুস্থতা অসুস্থতা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি ইত্যাদির নিয়ন্তা রাব্বুল আলামীনকে। এ কত বড় গোমরাহি। যদি তিনি মনোযোগ দিয়ে কোরআন পড়তেন, তাহলে বুঝতেন আসলেই একদিন পৃথিবী থাকবে না। মানুষকে চেষ্টা করে অন্য গ্রহে যেতে হবে না। আল্লাহই তাদের পরলোকে নিয়ে অমরত্ব দিয়ে রাখবেন। বিশ্বাসীরা শান্তিতে থাকবে। নাস্তিক বেঈমানরা চরম কষ্টে। আসলেই আল্লাহর নিজস্ব জগতে স্থান কাল পাত্র বলতে কিছু নেই। যাকে আমরা বলি ‘লা মাকান’। শুরুতে আল্লাহর ‘কুন-ফায়াকুন’ বা ‘ওয়া লিল্লাহির খালকু ওয়াল আমর’ কে তিনি বলেছেন ‘বিগ ব্যাং’ বা মহা দুর্ঘটনা। শত আফসোস, পদার্থের বই পত্রের পাশাপাশি এ মেধাবী মানুষটি যদি একজন বড় আল্লাহ ওয়ালার কাছে কোরআন সুন্নাহও পড়ে নিতেন তাহলে তাকে ঈমানহীন অবস্থায় আল্লাহর সামনে হাজির হতে হতো না। যেমন দুনিয়ার বিখ্যাত সব বিজ্ঞানী ছিলেন আস্তিক ও ধর্মে বিশ্বাসী। ইউরোপের একজন নামকরা বিজ্ঞানী যখন কোনো এক শীতের সকালে টিউব ষ্টেশনে মৃত্যুবরণ করেন, তখন তার বুকপকেটে ছিল ‘সেইং অব প্রফেট মোহাম্মাদ সা.’ বই। শতশত বিজ্ঞানী এখন মন দিয়ে কোরআন পড়ছেন। অনেকেই তুলনামূলক গবেষনা করে, প্রকাশ করুন বা নাই করুন, ইসলামগ্রহন করছেন। আধুনিক সময়ে পৃথিবীকে ধর্মহীন বানানোর একটি প্রচ্ছন্ন চেষ্টা নাস্তিক্যবাদীরা আন্তর্জাতিকভাবে চালায়। যার দরুন স্টিফেন হকিংকে বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই অস্বাভাবিকভাবে প্রমোট ও মার্কেটিং করা হয়। তিনি একাধিক বিয়ে করেছেন। সন্তানের পিতা হয়েছেন। শেষ স্ত্রীর হাতে অমানবিক অত্যাচারিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন মোটর নিউরনের কঠিন ব্যাধিতে ভোগে মানবেতর জীবন যাপন করেছেন। অত্যাধুনিক একটি কম্পিউটারাইজ যন্ত্রের সাহায্যে তিনি চলাফেরা ও কৃত্রিম কণ্ঠে ভাবপ্রকাশ করেছেন। কিছু রসিকতা, জীবন দর্শন ও টিপস দিয়েছেন। নতুন আবিষ্কার না হলেও অভিনব ধারণা লঞ্চ করেছেন। বিজ্ঞান বিষয়ে বাজি ধরে হেরেছেন। ১৯৬৩ সালে ডাক্তাররা বলেছিলেন, তিনি আর দু’বছর বাঁচবেন। কিন্তু তিনি বেঁচেছেন ৫০ বছরেরও বেশি। তিনি যা যা বলেছেন, যত বই লিখেছেন, পবিত্র কোরআনের সাথে বিজ্ঞানীর যদি মিলিয়ে দেখেন তাহলে তার বইয়ের নতুন কোনো স্বাদ তারা পাবেন না। এসবই আরও শুদ্ধ ও স্পষ্ট করে ১৫০০ বছর আগে কোরআন বলে রেখেছে। একবার যখন তিনি ‘আল্লাহর অস্তিত্ব নেই। স্বর্গ বলতে কিছু নেই।’ বলে ঘোষনা দিলেন তখন ইউরোপের খৃষ্টান ধর্ম গুরুরা বলেছিলেন, ‘মি. হকিং পদার্থ নিয়ে কাজ করেন, যদি কিছু বলতে হয় তা নিয়েই বলুন। খোদাতত্ত¡ নিয়ে তার কথা না বলাই ভালো। কেননা, এ বিষয়ের অ আ ক খও তার জানা নেই। তার চলে যাওয়ায় আমরা কষ্ট পেয়েছি। আরও কষ্ট পেয়েছি প্রকৃত সত্যের সন্ধান না পেয়ে চলে যাওয়ায়। তার মতো একজন গুণি মানুষ সবকিছু জেনে বুঝে চলেও গেলেন, কিন্তু নিজের সৃষ্টিকর্তাকে চিনলেন না এ দুঃখ রাখার জায়গা নেই। প্রাচ্যের মহাকবি আল্লামা ড. মোহাম্মদ ইকবালের ক’টি লাইন মনে পড়লো। তিনি লিখেছেন উর্দূতে, আমি কেবল বাংলা ভাবার্থ তুলে ধরছি:
“গ্রহ নক্ষত্রের কক্ষপথ আর বø্যাকহোলের গতি প্রকৃতি যারা সন্ধান করে বের করে ফেললো,
বড়ই আফসোস তারা নিজের জীবনের সঠিক চলার পথটি খোঁজে পেল না।
যারা বিজলীর চমক আর সৌরশক্তিকে ঘরে এনে বন্দি করতে সক্ষম হলো,
বড়ই কষ্ট লাগে যখন দেখি যে, তারা নিজের জীবনের অন্ধকার রাতটিকে ভোরের দুয়ারে নিতে পারলো না।
দুঃখ হয় সভ্য সেসব মানুষের জন্য তারা চাঁদে পা রেখেছে, মঙ্গলেও যাই যাই করছে,
দিবানিশি উড়ে বেড়াচ্ছে আকাশজুড়ে মুক্ত পাখির মতো,
কষ্টে বুক ফেটে যায়, যখন দেখি তারাই অস্ত্র বোমা দিয়ে নিরপরাধ লাখো কোটি মানুষ মারছে।
ভালো মানুষের মতো মাটির বুকে তারা বিচরণ করতে শিখেনি।”
মি. হকিং চলে গেছেন না ফেরার দেশে। তিনি বলতেন, একটি কম্পিউটার ভেঙ্গে গেলে যেমন তার আরে কোনো ভবিষ্যত নেই একজন মানুষও তেমনই মৃত্যুর পর তার আর কিছু নেই। আফসোস, তিনি পরম সৃষ্টি মানুষকে একটি অংকের মেশিনের চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারেন নি। পবিত্র কোরআনের ১৫/২০ টি টাচি আয়াত যদি কেউ তাকে শোনাতো, যদি তার কাছে কোনো আল্লাহর বান্দা দাওয়াত নিয়ে যেতেন, জানা নেই হয়তো তার অন্তরেও ঈমান রেখাপাত করতো। দুঃখ তার জন্য। তাকে তো আর পাবো না। তার কোটি কোটি ভক্তের প্রতি আমার বিনীত নিবেদন এই যে, আপনারা আল্লাহকে বিশ্বাস করুন, তার রাসুলকে বিশ্বাস করুন। কোরআন ও সুন্নাহ থেকে জ্ঞান আহরণ করুন। আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গ ও সোহবত গ্রহণ করুন। জ্ঞানের অসীম জগতের সাথে জীবনের সব জিজ্ঞাসার জবাবও পেয়ে যাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।