পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাজনৈতিক ভাষ্যকার: ত্রিভুবন (নেপাল) বিমানবন্দরে বিমান দুর্ঘটনায় অর্ধশত মানুষের প্রাণহানিতে দেশ শোকাহত। একটি দুর্ঘটনায় অনেকগুলো স্বপ্ন ঝরে গেল অকালেই। দেশের সবগুলো মিডিয়া মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার বেদনাদায়ক খবর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ-প্রচার করছে। বিমান দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সংসার-পরিবার-দাম্পত্যজীবন এবং পরিবারের সদস্যদের ছোটোখাট কথাবার্তা-স্মৃতিচারণ নিয়ে খবর বের হয়েছে পত্রিকায়। সেগুলো পড়ে পাঠকরা চোখের পানি ফেলেছেন। হায়রে মৃত্যু! কে জানত এমন হবে? বিমানে তুলে দিয়ে এসে দুই ঘণ্টার মধ্যেই খবর ‘তিনি’ বেঁচে নেই। মানুষের জীবন কত অনিশ্চিত! দুর্ঘটনা কত নিষ্ঠুর!!
দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোতে কাঠমান্ডুতে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় খবরের পাশাপাশি আরো একটি মত্যুর খবর ছাপা হয়েছে। কারা হেফাজতে ছাত্রদল নেতা জাকির হোসেনের মৃত্যু। বিমান দুর্ঘটনার কারণে হয়তো মিডিয়াগুলোতে এই খবরটি কম গুরুত্ব পেয়েছে; তবে খবরটি পাঠকদের কাছে মোটেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারাগার থেকে হাসপাতালে নেয়ার পথে ৩৮ বছর বয়সী জাকির হোসেন মিলন (হাজতি নম্বর-১০৯৬৫/১৮) মারা গেছেন। সোমবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যালে আনার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সভাপতি এবং তেজগাঁও থানা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করতেন। ৬ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে রমনা থানা পুলিশ জাকির হোসেনকে আটক করে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষে অসুস্থ অবস্থায় তাকে আদালতে নেয়া হয়। আদালতে বিচারকের সামনে না নিয়েই হাতজখানা থেকেই জামিন নামঞ্জুর করেই কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয় আদালত। মাহী নামের ৯ বছর এবং আয়েশা নামের তিন বছরের দুই মেয়ের জনক জাকিরের গ্রামের বাড়ি গাজীপুর জেলার টঙ্গী থানার মাজখান গ্রামে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গের করিডোরে লাশের পাশে বিলাপ করছিলেন জাকিরের বোন সুলতানা রাজিয়া। বলছিল ‘যেদিন গ্রেফতার হইলম সেদিনও আমার ভাই সুস্থ। তারে তিন দিন রিমান্ডে নিলো। এরপর দুই দিনও টিকল না ভাই আমার। কী এমন করল তারা...’। জাকিরকে প্রিজন ভ্যানে নেয়ার সময় ভ্যানের পিছে পিছে দৌড়ে দৌড়ে ভাতিজার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন তার চাচা বি এম ওলিউল্লাহ। চোখ মুছতে মুছতে তিনি বলেন, প্রিজন ভ্যানের সঙ্গে দৌড়াতে দৌড়াতে আমি জিজ্ঞাস করলাম ‘তোর শরীরের কী অবস্থা? তোরে কি নির্যাতন করেছে?’ তখন সে বেজার মুখে বলে- ‘চাচা আমার শরীরের অবস্থা ভালো না, আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি মনে হয় বাঁচব না’। জাকিরের লাশ গ্রহণের সময় বি এম ওলিউল্লাহ চোখের পানি মুছতে মুছতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ওরা যখন রিমান্ডে নিলো তখনো সুস্থ ছিল, আর এখন লাশ পেলাম। ওরা কী এমন করল?’
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে যারা জাকিরের স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ দেখেছেন, তারা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। স্বজন-পরিবারের সদস্যরা জাকিরের মৃত্যুর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেই দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ নির্যাতনের কারণে জাকির মারা গেছে। গতকাল প্রেসক্লাবের এক সেমিনারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে তারা (পুলিশ) কী করল যে, জাকির লাশ হয়ে ফিরল!’ এই প্রশ্ন শুধু বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নয়; এ প্রশ্ন দেশের হাজার হাজার মানুষের। জাকির কোনো দল করে সেটা বড় কথা নয়; সে স্বাধীন গণতান্ত্রিক এই দেশের একজন নাগরিক। অপরাধ করে থাকলে তার বিচার হবে। কিন্তু!
দুর্ঘটনায় অসংখ্য মৃত্যু যেমন বেদনাদায়ক; তেমনি অপ্রত্যাশিত একটি মৃত্যুও কম বেদনাদায়ক নয়। একটি মৃত্যু একটি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে দেয়; স্বজনদের পথে বসায়। আর যদি সে মৃত্যু হয় নিষ্ঠুর নির্যাতনে তা আরো পীড়াদায়ক। জাকিরের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে তা নিশ্চিত হতে হয়তো আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। কিন্তু জাকিরের পরিবার ও দল অভিযোগের আঙ্গুল তুলেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে। তাদের অভিযোগ নির্যাতনেই জাকির প্রাণ হারিয়েছে। প্রশ্ন হলো কারা হেফাজতে জাকিরকে কেন বেঘোরে মরতে হলো? খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির মানববন্ধন থেকে ফেরার পথে যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জাকিরকে গ্রেফতার করেছে, তারা এ দেশেরই সন্তান; যারা রিমান্ডে নেন তারাও ভিনদেশী বাহিনীর কোনো সদস্য নন। ১৯৪৭ সালের আগে ইংরেজ এবং ১৯৭১ সালের আগে পাকিস্তানি পুলিশ বাহিনী আমাদের উপর জুলুম-নির্যাতন করেছে। সেসব নির্যাতনের কাহিনী সুদূর অতীত। বর্তমানে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যারা কাজ করেন, তারা আমাদের কারো ভাই, কারো ছেলে, কারো মামা-চাচা, কারো আত্মীয় স্বজন। ভালোভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, কারা হেফাজতে প্রাণ হারানো জাকিরের পবিবারে, আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠি কেউ না কেউ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে কাজ করছেন। তাহলে জাকিরদের এভাবে প্রাণ দিতে হবে কেন?
আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক গৌরবময় ভ‚মিকা রয়েছে। সেই ’৭১ সালের ২৫ মার্চ কালো রাত্রীতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রাজারবাগে তারা (পুলিশ বাহিনী) প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে পরবর্তীতে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, গণতন্ত্র চর্চার প্রতিটি বাঁকে বাঁকে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে আসছেন। সম্প্রতি সময়ে জঙ্গি দমনে দেশের পুলিশ বাহিনী, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যে ভ‚মিকা পালন করেছেন তা সত্যিই গৌরব করার মতোই। পুলিশ সপ্তাহ পালনসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা বলে থাকেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব কমাতে হবে’। শীর্ষ কর্মকর্তাদের এসব কথায় নাগরিক হিসেবে আমরা পুলকিত হই; আশ্বস্তবোধ করি। কিন্তু যখন কারা হেফাজতে জাকিরের মৃত্যুর জন্য ‘পুলিশ রিমান্ডে নির্যাতনের অভিযোগ তোলেন তার পরিবার ও দল; তখন হোঁচট খেতে হয়, বিশ্বাসে ধরে ফাঁটল। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অপরিহার্য বাহিনীটিকে নিয়ে গৌরব করার কিছু থাকে না। এটা ঠিক পুলিশ বাহিনীতে কাজ করে কোনো ব্যক্তি অপরাধ করলে বা আইন বহির্ভূত কিছু করলে তার দায় গোটা বাহিনীর ওপর বর্তায় না। তবে দায়ও এড়াতে পারেন না। এটা ঠিক, আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে, পুলিশ বাহিনীর ব্যক্তিবিশেষ কোনো অপকর্ম করলে চোখ বন্ধ করেই আমরা গোটা পুলিশ বাহিনীর ওপর দায় চাপিয়ে দেই। এটা উচিত নয়। কোনো ব্যক্তির দায় গোটা বাহিনীর ওপর পড়ে না। তবে এ ধরনের ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা বাহিনীর দায়িত্বে পড়ে। আমরা আশা করছি ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু’ নাগরিকদের মধ্যে এই বিশ্বাস দৃঢ় করতে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে কারা হেফাজতে জাকিরের মুত্যুর রহস্য উদঘাটন করা হবে। সবার মনের রাখতে হবে পুলিশ ছাড়া পৃথিবীকে কোনো রাষ্ট্র চলতে পারে না। কিন্তু সে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হতে হবে জনবান্ধব। তা ছাড়া দু’চারজন বা ১০-২০ জন অসৎ ব্যক্তির অনৈতিক কর্মকান্ডের দায় গোটা বাহিনীর ওপর বর্তায় না। কাজেই ত্রিভুবন বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার প্রকৃত তথ্য উৎঘাটনে যেমন তদন্ত শুরু হয়েছে; তেমিন কারা হেফাজতে জাকিরের মৃতুরহস্য উৎঘাটনের জন্য দ্রুত তদন্ত শুরু করা হোক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।