পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সেনা নির্যাতনে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ফেলে আসা গ্রাম ও জমিজমায় ঘাঁটি তৈরি করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এখনও ধ্বংস না হওয়া ঘরবাড়ি নতুন করে জ্বালিয়ে দেওয়ারও আলামত পাওয়া গেছে। স্যাটেলাইট থেকে ধারণকৃত ছবি ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণ করে এ কথা জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এক বিবৃতিতে সংস্থাটির সংকট মোকাবিলা বিষয়ক পরিচালক তিরানা হাসান অন্তত ৩টি সামরিক ঘাঁটি নির্মাণ চলমান থাকার কথা জানিয়েছেন। একইসঙ্গে চলছে স্থাপনা ও রাস্তাঘাট নির্মাণের কাজ। ফেব্রæয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে সামরিক সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইট সোফরেপও একই অভিযোগ করেছিল। সে সময় তারা জানায়, পশ্চিম রাখাইন রাজ্যের বুথিডাউং শহরে রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ভূমি দখলে নিয়েছে সে দেশের সরকার। সেখানে সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে দেশটির পুলিশ বাহিনী। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পালিয়ে আসা প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হলেও তা কার্যকরের বিষয়টি এখনও প্রক্রিয়াধীন। এমন অবস্থায় নতুন করে সেখানে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার আলামত মিলছে। অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন অনুযায়ী, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জমি অধিগ্রহণ করেছে মিয়ানমারের সরকার। দখলকৃত জমির মধ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামের পাশাপাশি তাদের বেশ কিছু পতিত জমিও রয়েছে। দখল করার পর পুলিশ সেখানে পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। এসব স্থানে গবাদিপশু নিয়ে যেতেও গ্রামবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছে পুলিশ। এই জানুয়ারি মাসে রোহিঙ্গাদের গ্রামের বহু বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব গ্রাম থেকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নির্যাতনে রোহিঙ্গারা পালিয়ে গেছেন সেসব গ্রামেই ওই রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা জমি ও ভিটেবাড়ির ওপর ঘাঁটি তৈরি করছে সেনাবাহিনী। জানুয়ারিতে অ্যামনেস্টির সবশেষ গবেষণায় রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বহু গ্রাম বুলডোজারে জ্বালিয়ে দেওয়ার আলামত উঠে এসেছিল। ফেব্রæয়ারিতে সেনাবাহিনী অর্ধশতাধিক গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে দাবি করে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস। বলা হচ্ছিলো, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সামরিক বাহিনীর নিধনযজ্ঞ আড়াল করতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার চালানো হচ্ছে। এইচআরডবিøউর পক্ষ থেকে অপরাধের আলামতের সুরক্ষায় অবিলম্বে বুলডোজার ব্যবহার বন্ধের তাগিদ দেওয়া হয়েছিল মিয়ানমারকে। একই মাসে ‘দ্যা আরাকান প্রজেক্ট’ নামে সে দেশের স্থানীয় একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা একই ধরনের অভিযোগ তুলেছিল। তবে নতুন করে অ্যামনেস্টির দেওয়া বিবৃতি থেকে জানা গেল, বুলডোজারে গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সেনাঘাঁটিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণেরও সম্পর্ক রয়েছে। স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অন্তত তিনটি নিরাপত্তা ঘাঁটি নির্মাণের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। এগুলোর একটি উত্তর-রাখাইনে। অপর দুটি মংডু ও বুথিডাউংয়ে। সংস্থাটি ধারণা করছে, জানুয়ারি মাসে ঘাঁটিগুলোর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সংকট মোকাবিলাবিষয়ক পরিচালক তিরানা হাসান বলেন, সমগ্র গ্রামে বুলডোজার চালানোর ঘটনা খুবই উদ্বেগের। যারা এসব অপরাধকর্মে জড়িত ভবিষ্যতে তাদের বিচারকে কঠিন করে তুলতে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত নষ্ট করছে। স্যাটেলাইট ইমেজে ডিসেম্বরে সহিংসতা থেমে যাওয়ার পরও নতুন করে চারটি মসজিদ ধ্বংস করে দেওয়ার আলামত পেয়েছে অ্যামনেস্টি। একটি রোহিঙ্গা গ্রামে সদ্য ধ্বংস করা মসজিদের অবস্থানে একটি পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন হতে দেখেছে সংস্থাটি। তিরানা হাসান এই পরিস্থিতিকে সেনাবাহিনী দ্বারা ভূমি গ্রাস বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীকে বিপুল পরিমাণে জমি গ্রাস করতে দেখা গেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনকারী সে একই নিরাপত্তা বাহিনীর আবাস তৈরির জন্য নতুন ঘাঁটি স্থাপন করেছে। আর তা রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনকে আরও বেশি দুরাশায় পরিণত করে দিচ্ছে। কেবল তাদের বাড়িঘরই নষ্ট হয়নি, বরং নতুন এ নির্মাণ কাজের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে আগে থেকে অমানবিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য পুরনো বাস্তবতাকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। মিয়ানমারের সরকার অ্যামনেস্টির অভিযোগ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করেনি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, অ্যামনেস্টির অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা সু চির তরফে কোনও মুখপাত্র অথবা সেনা কর্তৃপক্ষের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মিয়ানমার বলে আসছে, নতুন করে রোহিঙ্গাদের জন্য ঘরবাড়ি বানাতেই গ্রামগুলোতে বুলডোজার ব্যবহার করা হয়েছে। ফেব্রæয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে সোফরেপ-এর প্রতিবেদনও একই ধরনের তথ্য উঠে এসেছিল। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের অন্যান্য গ্রামের মতো বুথিডাউং শহরে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সরাসরি কোনও সহিংসতা দেখা যায়নি। তারপরও সেখান থেকে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন। রাজ্যজুড়ে সেনাবাহিনীর নির্যাতন শুরুর পর পরিবারকে সহিংসতার হাত থেকে বাঁচাতে অনেকে আগেই পালিয়ে গেছেন তারা। এটা দেশজুড়ে চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একটি সাধারণ কৌশল। সোফরেপ-এর প্রতিবেদন বলছে, মিয়ানমার সরকার এখন কারেন জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রয়েছে। মিয়ানমারে কারেন উপজাতির প্রায় ৬০ লাখ বাসিন্দা রয়েছে। তাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তারপরও তারা বিরোধপূর্ণ এলাকায় সেনাবাহিনীর অবস্থান শক্তিশালী করছে। যদি কখনও আবার লড়াই শুরু হয় তাহলে বাড়তি সুবিধার জন্য তারা এটা করছে। সরকারের আধিপত্য থাকায় কারেন উপজাতিরা রোহিঙ্গাদের মতোই তেমন কোনও প্রতিবাদ করতে পারছে না। কারেন রাজ্য থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র সোফরেপকে সে সময় জানায়, সরকার কারেন রাজ্যেও পরিকল্পিতভাবে সড়কসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সেখানে কারেনদের কোনও স্থাপনা নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। সেখানে জঙ্গলের বাইরেও স্থাপনা নির্মাণ করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। যাতে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হলে তাৎক্ষণিকভাবে ভারী কামান দিয়ে কারেনদের ওপর হামলা চালানো যায়। ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।