Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফাল্গুনেই পানিশূন্য

ভারতের পানি আগ্রাসনে করতোয়া বাঙালিসহ অসংখ্য নদ-নদী

| প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া ব্যুরো : ফারাক্কাসহ বিভিন্ন নদনদীর উৎস মুখে বাঁধ, স্পার নির্মাণসহ বিভিন্ন ভাবে পানি প্রত্যাহারের প্রতিক্রিয়ায় বগুড়ার নদ, নদী খাল বিল পানি শূন্য হয়ে পড়েছে। চৈত্রের খরতাপ অনুভুত হচ্ছে ফাল্গুনেই। সর্বত্র এখন পানির জন্য হাহাকার। অথচ মনুষ্য সৃষ্ট এই হাহাকার সম্পর্কে মুখ খোলার সাহস বা স্পর্ধা আজ কারোই নেই ! প্রাচীন পুন্ড্র নগরীর রাজধানী বগুড়ার পুর্ব প্রান্ত দিয়ে পৌরাণিক যুগ থেকেই যমুনা ও করতোয়া বহমান। বিশেষ করে করতোয়ার স্বচ্ছ পানির ধারা স্মরণাতীত কাল থেকেই ও আদিবাসি জনগোষ্ঠির কাছে পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। ‘‘অথচ প্রতিবেশি রাষ্ট্রের আগ্রাসি মনোভাবের কারণে সেই করতোয়া আজ একটি দুষিত গলিত পচা পানির নর্দমায় পরিণত হয়েছে। এখনও হিন্দু জনগোষ্টির মধ্যে গঙ্গা ¯œানের প্রচলন থাকলেও অনেকেই নর্দমায় পরিণত হওয়া করতোয়ায় আর পুণ্য ¯œানের জন্য যাননা, অনেকে গেলেও দ্রæতই বাসায় ফিরে পরিষ্কার পানিতে নতুন করে গোছল করে নেন। অথচ ভারত পানি প্রত্যাহারের রাজনীতি না করলে আজও করতোয়ায় পরিষ্কার সচ্ছ পানির ধারা প্রবাহিত হত ’’ বলে মন্তব্য অনেকেরই। বগুড়া শুধু করতোয়ার জন্যই বিখ্যাত নয়, এর পশ্চিমাঞ্চলীয় নাগর নদকে নিয়ে কবিতা লিখেছেন রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর। ‘‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে ” বলে যে বর্ণনা তিনি করেছেন সেটা এই নাগর নদকে ঘিরেই। নির্মম বাস্তবতা হল রবীন্দ্র কাব্যে বর্ণিত বৈশাখ মাসতো দুরের কথা, চৈত্রের আগেই নাগর নদে আজ পানি বলে কিছু নেই, পুরো নদীর বুকেই চাষীদের লাগোনো বোরো ধানের সবুজ চারা লক লক করে বেড়ে উঠছে। নাগর তীরবর্তি দুপচাঁচিয়ায় বসবাসকারি সাংবাদিক গোলাম ফারুকের মতে রবীন্দ্রনাথ আজ বেঁচে থাকলে মরা এই নদের করুণ চেহারার বর্ণনা দিতে গিয়ে হয়তো লজ্জিত বোধ করতেন পানি আগ্রাসীদের নির্মম আচরণে। নাগর ছাড়াও গাং নৈ, ভাদাই খালের পানি ফাল্গুন চৈত্র মাসে কমে আসলে এসব নদী ও খালে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী মাছ পাওয়া যেত। যেসব মাছ খাওয়ার পর আবার শুটকি ও শুটকির গুঁড়ো করে রাখা হতো, ভরা বর্ষা মৌসুমে যেন খাওয়া যায়। বগুড়ার সর্ব পূর্বপ্রান্ত দিয়ে প্রবাহমান দেশের বৃহত্তম নদী যমুনা ও এর শাখানদী বাংগালীও এখন শুকনো মৌসুমে মৃত প্রায়। যমুনায় জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। এক সময় বগুড়ায় যমুনা, বাংগালী ও করতোয়া দিয়ে জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলের লোকজনের সব রকমের ব্যবসা বানিজ্যের সহজ লভ্য পথই ছিল নৌ পথ। নৌকাই ছিল পরিবহনের মাধ্যম। বড় বড় সওদাগরী নৌক্য়া বগুড়ায় আসতো, সিমেন্ট, নারকেল, বিদেশী বিভিন্ পন্য সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদী। আবার বগুড়া থেকে যেত পাট, শুকনো মরিচ, পাইজাম ও নাজির শাইল, গাইঞ্জা জাতের চাল ইত্যাদী।
কিন্তু আজ সেসব কেবলই অতীত স্মৃতি। প্রবীন ও মধ্য বয়সীরা উপরোক্ত বর্ণনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী হলেও এ প্রজন্মের কেউই আর ওই সব বর্নণা বিশ্বাস করেইনা বরং কেউ তা ’ বলতে চাইলে তা’ ¯্রফে গাঁজাখুরি বলে উড়িয়ে দিতে দ্বিধা বা সংকোচ কোনটাই করেনা। নদ নদীর পানি শূন্যতার কারণে বগুড়ার ডাংগার বিল, নুরুইলের বিল, রক্তদহের বিল ছাড়াও অসংখ্য ছোট বড় খাল বিল ও এখন শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এর ফলে পানির স্তর ও প্রতি বছরে নেমে যাচ্ছে বিপজ্জন্ত ভাবে। প্রকৃতি সচেতনদের মতে এভাবে চলতে থাকলে সবুজ প্রকৃতি শুকিয়ে রুক্ষ মরুভুমিতে পরিণত হতে খুব বেশিদিন লাগবেনা। বগুড়ার অনেকেই ১৯৭৬ সালে মাওঃ ভাসানীর সফর সঙ্গী হয়ে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চে অংশ নিয়েছিলেন। তাদের অনেকেরই অভিমত ভারতের পানি কুটনীতি বা রাজনীতি বা আগ্রাসন যেটাই হোকনা কেন তার বিরুদ্ধে মাওঃ ভাসানীর মতো গর্জে উঠতে হবে। পৃথিবী বাসিকে জানিয়ে দিতে হবে, শুধু এক ফারাক্কাই নয় প্রায় সব নদনদীর বাংলাদেশে প্রবেশ মুখে অন্তরায় সৃষ্টি করে পানি প্রত্যাহার আটকে রাখার কারণে বগুড়া তথা গোটা উত্তরেই সবুজ বাংলাদেশ শুকিয়ে পরিণত হচ্ছে মরুভুমিতে। বগুড়ার ব্যবসায়ীদের একটি সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ শরীফ মিঠুর মতে ‘‘এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তথা সভ্যতার স্মৃতি চিহ্ণ বাহী নদ নদীকে বাঁচাতে নতুন করে বলতে হবে মাওলানা ভাসানীর মতো বলতে হবে ‘‘ খামোশ” ! আমাদের নদ নদীকে বাঁচতে দিতে হবে। নদী বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। কারণ নদীই বাংলাদেশের প্রাণ।’’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদী

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ