Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীনে শি জিনপিংয়ের অনির্দিষ্টকালীন ক্ষমতা ভারতের জন্য কোনো বার্তা বহন করে কী?

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট | প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:০৮ এএম, ১২ মার্চ, ২০১৮

চীনে শি জিনপিং-এর প্রেসিডেন্ট পদের সময়সীমা বিলোপ ও তার অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার পথ উন্মুুক্ত হওয়ার বিষয়টি উন্নয়নশীল বিশ^, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার জন্য কী অর্থ বহন করে?
এর একটি প্রকাশ্য প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। চীনের কয়েক দশক ব্যাপী দ্রæত অর্থনৈতিক উন্নতি উন্নয়নশীল বিশে^র অনেক দেশের জন্য ঈর্ষা ও অনুপ্রেরণার উৎস। যেমন ভিয়েতনাম তার উন্নয়ন ও সংস্কার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য চীনা মডেল ব্যবহার করেছে। দক্ষিণ এশিয়াসহ অন্যান্য দেশ আর্র্থিক সম্পদ ও ও পুঁজির ক্ষেত্রে বেইজিংকে পাশ্চাত্যের বিকল্প হিসেবে দেখছে।
শি’র সর্বশেষ পদক্ষেপ হচ্ছে একজন উচ্চাক্ক্সাক্ষী স্বৈরাচারীর তার জনগণ বা অভিজাত শ্রেণির কাছে এ ধারণা বিক্রি করা যে তিনি একাই শুধু দেশের সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের ঘটনার মত , যিনি তার দ্বীপদেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন, তারা তা শি’র চেয়ে উল্লেখযোগ্য কম সুচারু ভাবে তা করবেন।
দ্বিতীয়ত, শি’র মেয়াদকালে চীনের লাগামহীন জাতীয়তাবাদের রেকর্ড ও সম্প্রসারণশীল সার্বভৌমতে¦র প্রেক্ষিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য একই সম্ভাবনা অবশ্যই তার প্রতিবেশিদের উদ্বিগ্ন করবে।
নির্দিষ্টভাবে ভারতের জন্য, যাদের কাছে বিতর্কিত সীমান্তে চীনা অনুপ্রবেশ কোনো নতুন বিষয় নয়, গত বছর দোকলাম অচলাবস্থায় ভুটানের সাথে চীনের প্রদর্শন ছিল ভারতের আঞ্চলিক প্রাধান্যের প্রতি চীনের চ্যালেঞ্জের সক্ষমতা। খুবই সম্ভাবনা যে ভারত ও চীনের মধ্যে অ্যাকচুয়াল লাইন অব কন্ট্রোল (এলওসি) বরাবর চীনা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ভুটানের উপর বেইজিং-এর সাথে আনুষ্ঠানিক ক‚টনৈতি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার চাপ বৃদ্ধি পাবে।
তৃতীয়ত, শীর্ষ পদে শি’র অনির্দিষ্টকাল থাকার বিষয়টি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের প্রকল্পগুলোর জন্য বৃহত্তর উদ্দীপনা ও গতি সঞ্চার করবে।
ভারতের জন্য সুনির্দিষ্ট সম্ভাব্য ফল হবে এই যে আয়োজক দেশগুলোতে স্থানীয় বিরোধিতাসহ বহু সমস্যা সমাধানে চীন আরো কঠোর পরিশ্রম করবে। এ ক্ষেত্রে চীনের তৎপরতা , যেমন তালিবানের সাথে আফগান সরকারের আলোচনায় তার সমর্থন বা পাকিস্তানের বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে আলোচনা তার হস্তক্ষেপের বৃহত্তর আগ্রহকে প্রদর্শন করবে যা অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ বলে গণ্য হবে।
উপরন্তু এ ধরনের উদ্যোগ যেমন আফগান সরকারকে তালিবানের সাথে রাজনৈতিক আলোচনার জন্য চাপ সৃষ্টি একটি গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকার, পাশাপাশি এ অঞ্চলে ভারতের প্রভাবের জন্য ক্ষতিকর হবে। এটা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বিরুদ্ধে চীনের দৃঢ়মনোভাবের অংশ বলে এবং প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষিতে মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার থেকে নয়াদিল্লীকে দূরে থাকার চীনা ইঙ্গিতের চেষ্টার প্রমাণ হিসেবে গণ্য হতে পার্।ে
ভারতের বিশ^শক্তি হওয়ার উচ্চাকাক্সক্ষা থাকলেও কোথাও চীনের বিনিয়োগের সমকক্ষ হওয়া তার পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। এবং শুধু ক‚টনৈতিক ক্যাডার শক্তিতেই নয়, শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ; ট্র্যাক ১.৫ ও ট্র্যাক ২ সহ আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন, পাশাপাশি কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও নগর সরকার ও কম্যুনিস্ট পার্টির শাখা থেকে প্রতিনিধি দলের সফর তা গোটা প্রতিবেশের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য। এচীন যে ভারতের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্রæত পভাব বিস্তার করছে এটা তার অন্যতম কারণ এবং এ প্রবণতা কিছু সময়ের জন্য হলেও অব্যাহত থাকতে পারে।
ক্ষমতায় শি’র দীর্ঘ অবস্থান এ অর্জনকে আরো সংহত করবে, নতুন সুযোগ সৃস্টি করবে এবং চীনা নীতি বাস্তবায়নের দায়িত¦প্রাপ্তদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করবে। উদাহরণ স্বরূপ , ফেব্রæয়ারির গোড়ার দিকে খবর বেরিয়েছিল যে চীনা পররাষ্ট্র দফতর বড় ধরনের সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শত শত কোটি ডলারের ব্যবসা ও বাণিজ্য বিনিয়োগসহ বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের সাথে সংস্কার রাষ্ট্রদূতদের আর্থিক বিষয়াদি ও স্ব স্ব দূতাবাসে স্টাফ নিয়োগে অধিকতর কথা বলার ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।্
এদিকে কম্যুনিস্ট পার্টির নিজস্ব পররাষ্ট্র বিষয়ক দফতর ও সংযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ^ব্যাপী বৃহত্তর আস্থা ও সুবিধা নিয়ে কাজ করতে পার। দক্ষিণ এশিয়ায় রাজনৈতিক পরিমন্ডলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে চীনা কম্যুনিস্ট পর্টির ব্যাপক সম্পর্ক রয়েছে যার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় দলগুলোও। আর তা চীনা স্বার্থ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে ক্ষমতায় যেই থাক না কেন।
এ সব বিষয় খোদ দক্ষিণ এশিয়াতেই ভারতের পররাষ্ট্র নীতি জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
গত দু’ বছর ধরে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ভারত-চীন সম্পর্ক অবনতির শিকার। দোকলাম অচলাবস্থার সময় চীনা মিডিয়ার কটুকাটব্য পরিস্থিতির উন্নতিতে সাহায্য করেনি। তবে শি ও আরেক শক্ত মানব মোদি ‘শক অ্যান্ড অ’ রাজনৈতিক ধারার অনুসারী। তারা তাদের ক‚টনীতিকদের আলোচনার টেবিলে অনির্দিষ্ট সময় ব্যয় করতে না দিয়ে রাজনৈতিক মানচিত্রে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে দীর্ঘদিনের সীমান্ত সমস্যার চেষ্টা করতে পারেন।
বাগাড়ম্বর ও কাজের মধ্যে ফারাক দু’দেশের মধ্যে আস্থা তৈরি করবে না এবং ক্ষিমতাশালী শি কম আগ্রাসী মনোভাবের হবেন, এ আশায় ভারতীয়রা স্বস্তির নিঃশ^াস ফেলার আশা করবেন না। পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিতে চীনের অধিকতর পেশি প্রদর্শনের আশঙ্কা চীন বিরোধী জোটের চাপ মোকাবেলায় চীনকে আরো কঠোর করবে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সাথে চতুর্মুখী উদ্যোগের মত কেউ ইতোমধ্যেই শিশুসুলভ পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন অন্যরাও নেবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শি জিনপিং


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ