Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প অচিরেই লাভজনক অবস্থায় চলে আসবে -এ কে এম দেলোয়ার হোসেন

| প্রকাশের সময় : ১২ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

কৃষি প্রধান বাংলাদেশে চিনি শিল্প হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ব ভারি শিল্প। অযত্ন অবহেলা ও দুরদর্শিতার অভাবে এ শিল্প অতীতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে ক্রমেই এ শিল্পের অবস্থা নাজুক হতে থাকে আর কয়েকটি বৃহৎ চিনি কল বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়। বর্তমানে ১৫ টি চিনিকল চালু আছে যেগুলোর অবস্থাও নাজুক। এসব চিনি কল দীর্ঘদিনের পুরানো। এখানে উল্লেখ্য-সংস্থারটির নাম ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন’ এখন আছে শুধু চিনি শিল্প। ২৪টির মতো সহযোগী শিল্প অনেক আগেই বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। চিনিশিল্পের পাশাপাশি সহযোগী শিল্প থাকলে করপোরেশন লাভজনক অবস্থাতেই চলতো। যেহেতু এ শিল্পের সাথে প্রায় ২২ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং প্রায় ৫০ লাখ কৃষক পরিবার জড়িত। শুধু তাই নয়, চিনি মানুষের খাদ্য তালিকার একটি অন্যতম উপাদান। খাদ্য জাতীয় শিল্পের কাঁচামালও। বাংলাদেশের আখের চিনি বিশমানের ও স্বাস্থ্যসম্মত। কাজেই এ শিল্পকে টিকিয়ে রেখে লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যেমন-নর্থবেঙ্গল চিনিকলে কোন-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২৪ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নবায়নযোগ্য জ¦ালানী ব্যবহারের মাধ্যমে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে চিনিকলের নিজস্ব প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সরবরাহ করা হবে। এ প্রকল্পের আওতায় একটি সুগার রিফাইনারীও স্থাপন করা হবে। যার মাধ্যমে ‘র’ সুগার হতে হোয়াইট সুগার উৎপাদন করে দেশে চিনির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভুমিকা রাখা হবে। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং সুগারবিট থেকে চিনি উৎপাদনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন শীর্ষক আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দর্শনায় চিনিকল ও ডিস্টিলারি কারখানা কেরু এন্ড কোম্পানী(বিডি) লিঃ। এর আধুনিকীকরণের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে বিএমআর প্রকল্প। এতে ৭৩ বছরের পুরাতন যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে চিনিকলটির বর্তমান আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন ক্ষমতা সংরক্ষতি হবে। আখ চাষিদের সুবিধার্থে অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সম্প্রতি আখের দাম বাড়ানো হয়েছে। গত চার বছরে তিন বার আখের দাম বাড়ানো হয়। এছাড়া সনাতন পুর্জি প্রথার পরিবর্তে একটি মোবাইল এসএমএস’র মাধ্যমে সকল আখচাষির কাছে মিলে আখ সরবরাহের আগাম বার্তা পৌছে দেয়া(ই-পুর্জি)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ২০১০ সালের ১২ ডিসেম্বর একযোগে সকল চিনি কলে ই-পুর্জি কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এরফলে লাখ লাখ চাষির দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া হচ্ছে ডিজিটাল সেবা। নিশ্চিত করা হয়েছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। ই-পুর্জির সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন ভারতের মস্থন এওয়ার্ড সাউথ এশিয়া ২০১০ পুরষ্কার লাভ করে। এছাড়াও ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা-২০১০-এ ই-সেবা ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরষ্কারসহ বিভিন্ন পুরষ্কার লাভ করে। ই-পুর্জি ব্যবস্থাপনায় সফলতার পর সেবার পরিধি আরো বিস্তৃতি করতে চালু করা হয়েছে ই-গেজেট। এর মাধ্যমে চাষি ই্উনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে অনলাইনে পুরো মৌসুমের কেন্দ্র ও ইউনিট ভিত্তিক আখ ক্রয়ের আগাম কর্মসূচি দেখতে পারেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আখমাড়াই মৌসুমে ফরিদপুর চিনিকলে পূর্ণাঙ্গরূপে চালু হয় এবং চলতি ২০১৬-১৭ আখ মাড়াই মৌসুমে সকল চিনিকলে চালুর কর্মসূচি নেয়া হয়। ই-পুর্জি ও ই-গেজেট প্রচলনের পর চিনিকল গুলোতে এবার মোবাইল ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে আখের মূল্য পরিশোধ করার যুগান্তকারি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। ভোক্তা যাতে সহজে চিনি পান সে লক্ষ্যে ১ ও ২ কেজির প্যাকেটজাত চিনি বাজারজাত করা হচ্ছে। চিনিকলের প্রেসমাড ও ইথানল প্লান্টের বর্জ্য হতে বায়োকম্পোস্ট উৎপাদনপূর্বক রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জমিতে ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ দূষণ রোধ করতে কেরু এন্ড কোম্পানীতে স্থাপন করা হয়েছে জৈব সারকারখানা। বাংলাদেশে এখনও প্রচুর আখ চাষের জমি আছে। আর আখচাষ এখন লাভজনক অবস্থায় দাড়িয়েছে। আখের সাথে এখন নানা ধরণের সাথী ফসলের চাষ করা হচ্ছে। চাষিরা কিন্তু আখ চাষের প্রতি আগ্রহ হারাননি, বরং আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে। চাষিদের যেসব সমস্যা ছিল বা আছে সেগুলো দুর করা হয়েছে বা হচ্ছে। এতে চাষি আখ চাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ক্রমান্বয়ে আখ চাষ ও চিনির উৎপাদন বাড়তে শুরু করেছে, সেই সাথে করপোরেশনের লোকসানও কমছে।
লেখক : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাষ্ট্র


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ