Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশ

২৭০ কোটি ডলার রপ্তানি ক্ষতির আশংকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

০ বিদেশী বিনিয়োগ ও মানব উন্নয়নের উপর জোর দেওয়ার আহবান সিপিডি’র

০ সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জ - গওহর রিজভী
উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে। গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি জানিয়েছে, ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হতে বিদেশী বিনিয়োগ ও মানব উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য মোকাবেলা করে সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশ ও ২০২৪ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের যাত্রায় বাংলাদেশ। এ মাসেই আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে আবেদন করবে বাংলাদেশ।
এ উপলক্ষে সিপিডি গতকাল শনিবার গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে ‘বাংলাদেশ গ্র্যাজুয়েশন অব দ্য এলডিসি গ্রæপ’ শীর্ষক পাবলিক ডায়ালগের আয়োজন করে।
এতে জানানো হয়, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানর খাত এবং বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরতা কমার জন্য বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। ভবিষ্যতে করণীয় নিয়ে পরামর্শ দেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। ডায়ালগে সরকারের প্রতিনিধি গওহর রিজভী জানান, মাথাপিছু আয়সহ বেশ কিছু সূচকে অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য হলেও বৈষম্য বাড়ছে। সুশাসন ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তবে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরনের ফলে রপ্তানিতে ৭ শতাংশ শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ২৭০ কোটি ডলার রপ্তানি ক্ষতির আশংকা করেছে সিপিডি।
সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরুচ্ছে। যা সা¤প্রতিক উন্নয়ন ইতিহাসের অনন্য ঘটনা। এর আগে যারা এলডিসি থেকে বের হয়েছে তারা ছিল ছোট ছোট দেশ। তাদের জনসংখ্যা ছিল কম, উৎপাদন ছিল কম। আর বাংলাদেশের উত্তরণটি আরও একাধিক উত্তরণের সঙ্গে যুক্ত হবে। বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে ইতোমধ্যে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশে গেছে। বাংলাদেশ এখন এসডিজি বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে এবং উন্নত দেশের দিকে যাবার চেষ্টা করছে। এ অবস্থায় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হয়ে আসা বাংলাদেশকে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে বলে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, তবে যারা এলডিসি থেকে বের হয়েছে তাদের প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক সাহায্যের পতন ঘটে, রেমিটেন্সও কমেছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর চাপ সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে কর আদায়ের পরিমাণ যদি না বাড়ে। তবে এসব দেশগুলো পর্যাপ্ত বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ পাবে কিনা-সেটা চিন্তা করতে হবে।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ যদিও প্রক্রিয়াকরণ খাতকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, রপ্তানী বাড়ছে। এ রপ্তানী একটি মাত্র পণ্যের উপর নির্ভরশীল। অপরদিকে প্রক্রিয়াকরণ খাতে শ্রমের উৎপাদনশীলতা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এতে যে জিনিসটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে আসছে তা হলÑ এলডিসি থেকে বের হলে রেয়াতি সুদের সুযোগ হারাবে বাংলাদেশ। এজন্য নতুন উচ্চ সুদে টাকা নিয়েÑযাতে ঋণের বোঝা সৃষ্টি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বেরবাজারে শুল্কমুক্ত যে সুবিধা পেত, সেটি থাকবে না। এজন্য বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদনও বাড়াতে হবে। এবং একই পণ্যে নির্ভর না করে পণ্যের বহুমূখীকরণ করতে হবে। বাংলাদেশ আবহাওয়াগত কারণে বিরুপ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। সেগুলোকে মোকাবেলার বিষয়টি উঠবে। রোহিঙ্গাদের আগামীতে কিভাবে নেওয়া হবে সেটি সামনে আসবে। সবচেয়ে বড় বিষয় বাংলাদেশ যখন এলডিসি থেকে বের হচ্ছে তখন বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলেও জানান তিনি। এজন্য বাংলাদেশকে সপ্তম-পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা মাথায় রেখেই টেকসই অর্থনীতি ধরে রাখতে উত্তরণকালীন কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। কৃষিখাতের নবায়ন দরকার হবে। মানবসম্পদের উন্নয়ন ধারা জোরদার করতে হবে। জলবায়ু প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হবে। নৃ-গোষ্ঠী ও নারীর প্রতি বৈষম্য কমাতে হবে। নতুন অর্থায়ণ খুঁজতে হবে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং ঐক্যমত না থাকলে বাংলাদেশ এ উত্তরণের সুফল থেকে পিছিয়ে পড়বে বলে জানান ড. দেবপ্রিয়।
অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অর্থনীতিতে এগিয়ে নিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উৎপাদন ও প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বাড়াতে হবে। নতুন শিল্পায়ণ ও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টি করতে হবে। পণ্যের বহুমূখিকরণ করতে হবে। প্রাইমারী ও মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। সবচেয়ে জরুরি সুশাসন নিশ্চিত করা। না হলে সুযোগ ব্যাহত হবে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেনÑ পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হাসান প্রমূখ।



 

Show all comments
  • Sumon ১১ মার্চ, ২০১৮, ১২:১৭ পিএম says : 0
    বর্তমান বাংলাদেশের ইংয় জেনারেশন বলদ না যা বোজাবে তাই বোজবে, সোজা বললে বেকা দিয়া বোজাবে!
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ