Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৩৩ বছরে অর্ধশত উদ্ভাবন

দেশে আমিষের চাহিদা পূরণে অসামান্য অবদান

| প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চাঁদপুর থেকে বি এম হান্নান : নানা উদ্ভাবন আর ঐতিহ্য নিয়ে চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট ৩৩ বছর পার করেছে। ৩৩ বছরে মৎস্য নিয়ে ৫০টির মতো প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এসব প্রযুক্তি দেশের আমিষের চাহিদা পূরণে অসামান্য অবদান রেখে আসছে। পাশাপাশি নতুন নতুন কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করছে। ১৯৬০ সালে চাঁদপুর জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে ১৩ হেক্টর এলাকা নিয়ে চাঁদপুর নদী গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
চাঁদপুর মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, স¦াদু পানির মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, টেকনোলজিক্যাল ল্যাবরেটরি ও ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নামে একই সাথে তিনটি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে এখানে। ফলে মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট সদর দফতরসহ চারটি কেন্দ্রের অন্যতম নদীকেন্দ্র চাঁদপুরকে করা হয়।
১৯৮৪ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতির এক অধ্যাদেশে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বা জাতীয় মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে অপর এক আদেশে মৎস্য গবেষণার সদর দফতর চাঁদপুর থেকে ময়মনসিংহ স্বাদু পানির কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৮৮ সালে এখানে একটি জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দফতর প্রতিষ্ঠা পায়। সারাদেশে এ ধরনের তিনটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চাঁদপুর অন্যতম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের অর্থনৈতিক গুরুত্ব সম্পন্ন মৎস্য প্রজাতির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে।
২০১৭ পর্যন্ত নদী গবেষণা কেন্দ্র চাঁদপুর নানা গবেষণামূলক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করে। বিশেষ করে ইলিশ সম্পদ রক্ষায় যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। ফলে দেশের জিডিপিতে যোগ হয়েছে অর্থনৈতিক সূচক।
প্রযুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ইলিশ সম্পদের সংরক্ষণ কৌশল ও ব্যবস্থাপনা, পুকুরের পাঙ্গাস চাষে একক ও মিশ্র চাষাবাদে প্রযুক্তি, থাই পাঙ্গাস চাষের কৃত্রিম প্রজনন ও পোনা চাষের উৎপাদন, প্যানে মাছ চাষের কলাকৌশল, গৃহাঙ্গন হ্যাচারিতে গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদন, পুকুরের গলদা চিংড়ির একক ও মিশ্র চাষ, ধান ক্ষেতে মাছ চাষ, মাছ ও জলজ পরিবেশের ওপর কীটনাশকের বিষক্রিয়া নিরূপণ, কাপ্তাই হ্রদের জৈব ব্যবস্থাপনা ও জলাশয় তাত্তি¡ক সমীক্ষা, খাঁচায় তেলাপিয়া মাছ চাষ, প্যানে মাছ চাষ, নদ-নদীর পানির নবায়ন ও দূষণ বিষয়ক সমীক্ষা, ইলিশ মাছ গবেষণা ও ব্যবস্থাপনা, শিলন মাছের প্রতিপালন ও গবেষণা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের সুফল সারা দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। দেশে মৎস্য সম্পদের যথেষ্ট উন্নতি সাধন হয়েছে। ২০১৭ সালের সর্বশেষ তথ্যমতে, সকল উৎসের মাছ উৎপাদন হচ্ছে ৮০ লাখ ৯৭৬ মেট্রিক টন। চাঁদপুর জেলায় মাছের চাহিদা ২০১৬-১৭ সালের হিসাব মতে, জনপ্রতি ৫৮ গ্রাম হারে ২৫ লাখ মানুষের বছরে ৫১ হাজার ১৪৭ মেট্রিক টন। মাছের উদ্বৃত্ত উৎপাদন হলো ২৯ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন।
একাধিকবার চাঁদপুর নদীকেন্দ্র স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছে। এটি এখন চাঁদপুরবাসীরও গর্বের বিষয়। ইলিশের ব্র্যান্ডিংয়ে সুখ্যাতির অংশীদার। দেশে সর্ব প্রথম থাই পাঙ্গাসের সফল প্রজনন, ইলিশ মাছের ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং খাঁচায় মাছ চাষে উদ্ভাবনীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান এ কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের রয়েছে।
গবেষণা পরিচালনা ও গুরুত্ব বিবেচনা করে এখানে বেশ ক’জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী বিজ্ঞানীও রয়েছেন। নদীর চলমান গবেষণা ও পোনার চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে এখানে ছোট বড় ৪০টি পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেল, ব্রিগেড, মিরর কার্প, দেশি ও থাই পাঙ্গাস, গিফট তেলাপিয়া, থাই সঁরপুটি, রিটা, বাগাইড়, চিতল, ফলি, ভাগনা, পাবদা, টেংরা, গলদা, চিংড়ির বিভিন্ন আকৃতির ব্রড ও পোনা উৎপাদন করে বাণিজ্যিকভাবে জেলার শত শত মৎস্য হ্যাচারির মধ্যে বিক্রয় ও বিতরণ করা হচ্ছে ।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. ইশতিয়াক হায়দার বলেন, ‘বর্তমানে চাঁদপুর নদী গবেষণা কেন্দ্রে পাঁচটি গবেষণা প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন তারা। মেঘনা নদীর ৬০টি স্পটের পানি সিঙ্গাপুর গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ইলিশ রক্ষায় এক মাসব্যাপী অভয়াশ্রম রক্ষায় গবেষণার কাজ চলছে’।
ইলিশ গবেষক ড. আনিসুর রহমান জানান, গত ১৭ বছরে ধরে বেশ ক’টি নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। এর মধ্যে ইলিশ মাছ গবেষণা ও খাঁচায় মাছ চাষ অন্যতম। ২০০৩ সালে থেকে জাটকা ও মা ইলিশ রক্ষায় কর্মসূচি পালনে দেশে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়ে প্রায় পাঁচ লাখ মেট্রিক টনে পৌঁছেছে।
চিফ সাইন্টিফিক অফিসার ড. মাসুদ হোসেন খান বলেন, ‘নদী সম্পদ সংরক্ষণ ও নদীদূষণ, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও জলজ পরিবেশ সংরক্ষণে চাঁদপুর নদীকেন্দ্র কাজ করছে। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর দূষণের প্রকৃতি নির্ণয়, জলজ প্রাণীর ক্ষতিকর প্রভাব, হিলশা ম্যানেজম্যান্ট অ্যাকশন প্ল্যান্ট, জলবায়ুর পরিবর্তন ও এর প্রভাব, ২০১৭-১৮ সালে বোয়াল মাছের প্রজনন ও প্রাকৃতিকভাবে পোনা সংরক্ষণ, তেলাপিয়ার রোগ ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ চলছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গবেষণা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ