Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

অভিবাসী শত শত নারী কর্মী খালি হাতে দেশে ফিরছে

প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪৯ এএম, ৯ মার্চ, ২০১৮

শামসুল ইসলাম : অভিবাসী নারী কর্মী নিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। নানা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়ে দফায় দফায় দেশে ফিরছে সউদী কর্মরত অভিবাসী বাংলাদেশী নারী কর্মীরা। সউদী আরবে কর্মরত বাংলাদেশী নারী কর্মীদের নানা সমস্যার অন্ত নেই। প্রবাসে কর্মরত নারী কর্মীরা বিভিন্ন সময় নিয়োগকর্তার দ্বারা নানা ধরণের নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ সকল বিপদপ্রস্ত নারী কর্মীদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে সেইফ হোম স্থাপন করা হয়েছে। সেইফ হোম তত্ত¡াবধানে জনবল, আশ্রয় গ্রহণকারী নারী কর্মীদের খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যয় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড থেকে বহন করা হচ্ছে। বর্তমানে সউদী আরবের রিয়াদে একটি, জেদ্দায় দু’টি, ওমান এবং লেবাননে একটি করে সেইফ হোম বিদ্যমান রয়েছে। ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে এসব সেইফ হোমের ব্যয় নির্বাহ করতে কল্যাণ বোর্ড থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হয়েছে। নানা সমস্যায় পড়ে অনেক নারী কর্মী সউদী আরব থেকে দেশে ফিরতে দেশটি’র তিনটি সেইফ হোমে প্রহর গুনছে। রিয়াদ সফর জেল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় ইত্তেহাদ এয়ার ওয়েজ-এর একটি ফ্লাইট (ইওয়াই-২৫৮) যোগে ২৭ জন নারী কর্মী খালি হাতে দেশে ফিরেছে। একই সফর জেলে ১শ’ ৪০জন নারী কর্মী দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছে। সউদী আরবসহ বিভিন্ন দেশে সেইফ হোমে অভিবাসী বাংলাদেশী নারী কর্মীদের দেখভাল এবং সেইফ হোমের ব্যয় নির্বাহ করতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোডকে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। গত ৫ মার্চ বিমানের একটি ফ্লাইট যোগে রিয়াদ সফর জেল থেকে ২৩ জন নারী কর্মী দেশে ফিরেছে। ব্র্যাক ও ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সহযোগিতায় এসব অভিবাসী নারী কর্মী দেশে ফিরছেন। নানা নির্যাতনের শিকার খালি হাতে দেশে ফেরা এসব নারী কর্মী চরম হতাশায় ভুগছে। সউদী থেকে প্রচুর রেমিটেন্স আয়ের স্বপ্ন নিয়ে গিয়ে যারা নিরাশ মনে যেসব নারী কর্মী দেশে ফিরেছে তারা হচ্ছে, চুয়াডাঙ্গার দুলশানা, খুলনার রেবেকা, ফরিদপুরের পারভীন, বরিশালের শারমীন (বর্হিগমন ছাড়পত্র ছাড়া যাওয়া), বি-বাড়িয়ার স্বপ্না , চাপাইনবাবগঞ্জের রোজীনা ও ঢাকার শারমীন।
রিয়াদ সেইফ হোমে আশ্রিত নারী কর্মীদের সংকট নিরসনে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে হিমসিম খেতে হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে, সউদী নিয়োগকর্তাদের কাছে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ অসহায় । সউদী আরবে বাংলাদেশী নারী কর্র্মীদের সৃষ্ট সংকট নিরসন করতে গিয়ে দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গলদর্ঘম পোহাতে হচ্ছে। উভয় দেশের নিয়োগকর্তা ও জনশক্তি রফতানিকারকগণের মাঝে সমন্বয়হীনতার দরুন টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই সজাগ না হলে সউদীর বৃহৎ শ্রমবাজারে অশনি সংকেত দেখা দিতে পারে । জনশক্তি রফতানি’র সাথে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্র এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ সউদীতে অভিবাসী নারী কর্মীদের কোনো সমস্যার কথা জানতে পারলে তাৎক্ষণিকভাবে তা’ সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেন। রাষ্ট্রদূত সউদীর শ্রমবাজার সম্প্রসারণে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন। দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা এতথ্য জানিয়েছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি গতকাল বৃহস্পতিবার তার দপ্তরে ইনকিলাবকে বলেন, হোম সেক-এর কারণে সউদীতে কর্মরত অভিবাসী নারী কর্মীদের কেউ কেউ দেশে ফিরে আসছে। সউদী আরবে গিয়ে আমাদের নারী কর্মীদের অনেকই পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে দেশে ফিরে আসছে। নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়ার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন। সউদীতে সেইফ হোমে আশ্রিত এবং সফর জেলে অবস্থানকারী বাংলাদেশী নারী কর্মীদের রিয়াদ দূতাবাসের মাধ্যমে আইনী সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলেও প্রবাসী মন্ত্রী উল্লেখ করেন। সউদী’র দাম্মামস্থ ঈসা’দ ম্যানপাওয়ার সার্ভিস কোম্পানী (নিয়োগকর্তা) লাখ লাখ রিয়াল পাওয়ার এক লিখিত অভিযোগে রিয়াদস্থ দূতাবাসের সুপারিশে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় রাজধানী ট্রেড ইন্টারন্যাশনালসহ ৬টি নারী কর্মী প্রেরণকারী রিক্রুটিং এজেন্সি’কে নিয়োগকর্তার দাবীকৃত রিয়াল পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে। উল্লেখিত সউদী নিয়োগকর্তা ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সি’র কাছে আদৌ লাখ লাখ রিয়াল পাবে কিনা তা’খতিয়ে দেখা হয়নি। উল্লেখিত ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সি’র নারী কর্মী প্রেরণে অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। অভিযুক্ত রিক্রুটিং এজেন্সি’র একজন স্বত্বাধিকারী এতথ্য জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বায়রার যুগ্ন-মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমানের নেতৃত্বে অভিযুক্ত ৬ রিক্রুটিং এজেন্সি’র মালিকরা ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করে সউদী নিয়োগকর্তার কাছে তাদের পাওনাদি’র হিসাব দাখিল করেন। দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সউদী নিয়োগকর্তার কাছে তাৎক্ষণিকভাবে উল্লেখিত হিসাবের নথিপত্র প্রেরণ করেন। সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সি’র সৃষ্ট সংকট সমাধানে সর্বাতœক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। বায়রার নেতা শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান রাতে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, গত ৬ মার্চ সকালে বায়রার সভাপতি বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে অভিযুক্ত এসব রিক্রুটিং এজেন্সীর স্বত্বাধিকারীরা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র সাথে তার দপ্তরে সউদী নিয়োগকর্তার দাবীকৃত লাখ লাখ সউদী রিয়াল পাওয়ার অভিযোগের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরেন। বায়রা নেতৃবৃন্দ অভিযুক্ত ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সি’ ওপর যাতে কোনো অবিচার না হয় এবং দ্রæত নারী কর্মী পাঠানোর কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে পারে তার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সীর সৃষ্ট সংকট দ্রæত সমাধানের আশ্বাস দেন। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষ সৃষ্ট সংকট সর্ম্পকে বিস্তারিত অবহিত হয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৬টি রিক্রুটিং এজেন্সি’র ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানিয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে দ্বিতীয় দফায় আরেকটি চিঠি দিয়েছে। বাংলাদেশী নারী কর্মী প্রেরণকারী সংশ্লিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর বকেয়া পাওনাদিও যথাসময়ে পরিশোধ করছে না অনেক সউদী নিয়োগকর্তা। সউদী আরবে কর্মরত অভিবাসী নারী কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং সৃষ্ট সংকট দ্রæত সমাধানের বিষয়টি আগামী ১৪ মার্চ রিয়াদে অনুষ্ঠিতব্য দু’দেশের যৌথ কমিটি’র বৈঠকে উত্থাপনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড.নমিতা হালদার। গত ২৫ ফেব্রæয়ারী প্রবাসী সচিব ড. নমিতা হালদার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইনসিডিন বাংলাদেশ আয়োজিত অভিবাসী নারী শ্রমিকের ন্যায্য নিয়োগ নিশ্চিতকল্পে আন্তর্জাতিক রিক্রুটিং এজেন্সী’র আইন বিষয়ক ওরিয়েন্টেশনে বায়রার সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, অভিবাসী বাংলাদেশী নারী কর্মীদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং তাদের অধিকার রক্ষায় আমাদের সর্বাতœক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বায়রার সাবেক যুগ্ন-মহাসচিব-১ আলহাজ আবুল বাশার গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সউদী আরবে বাংলাদেশী নারী কর্মীদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। উভয় দেশের নিয়োগকর্তাদের মাঝে বেশি বেশি যোগাযোগ রক্ষা করা এবং নানাভাবে হয়রানির শিকার অভিবাসী নারী কর্মীদের দেখভাল করতে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসকে আরো জনবল বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, আল-রাবেতা ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে সউদী আরবে পাঠানো নারী কর্মী নার্গিস (পিপি নং-বিএন ০১৮৭৪১২) এর সৃষ্ট সংকট নিরসনের জন্য রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম সচিব সরওয়ার হোসাইনের কাছে গত ১১ জানুয়ারী, ৫ মার্চ ও ১০ মার্চ তিন দফা লিখিত চিঠি দেয়ার পরেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আগামী ১৪ মার্চ সউদী আররেব রিয়াদে উভয় দেশের জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি’র মিটিংয়ে সউদীতে বাংলাদেশী নারী কর্মীদের উপর নানা হয়রানি বন্ধ এবং তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যথাযথ প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে। প্রবাসী মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এতথ্য জানিয়েছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অভিবাসী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ