Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ভিয়েতনামের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪৩ এএম, ৬ মার্চ, ২০১৮

রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ভিয়েতনামের সহযোগিতা কামনা করেছে বাংলাদেশ। গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংয়ের নেতৃত্বে দু’দেশের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় এই সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দুই দেশের মধ্যে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই অঞ্চলের দেশগুলোর শান্তি ও স্থিতিকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আমি ভিয়েতনামের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছি। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং সমস্যার একটি সম্ভাব্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রতি তার সহযোগিতার বিষয়ে সমর্থন প্রকাশ করেছেন বলে জানান তিনি।
বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার সকল বিষয়ে বৈঠকে সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে আলোচনা করেছেন এবং পারস্পারিক সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি বলেন, দু’দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককে আরো পাকাপোক্ত করার পাশাপাশি তাদের আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহযোগিতা বৃদ্ধি করা। শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতাকে এগিয়ে নেয়ার জন্য দ্বিতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন এবং ব্যবসা সংক্রান্ত যৌথ কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক এ বছর অনুষ্ঠানের বিষয়ে উভয়ে একমত হয়েছেন। তিনি বলেন, মৎস এবং প্রাণিসম্পদ, যন্ত্রাংশ তৈরী এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়ে দু’দশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় আমরা আরো খুশী হয়েছি, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করবে।
আসিয়ান ভূক্ত দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টির আগ্রহ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী ‘মেকং-গঙ্গা’ সহযোগিতা ফোরামে যোগদানে আগ্রহের কথাও জানান। আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হতে এবং ‘মেকং-গঙ্গা’ ফোরামে যোগদানের আগ্রহের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে ভিয়েতনামের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট কুয়াংকে জানিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও ফ্লাইটের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতাসহ সমুদ্র ও মহাসাগরের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং নিয়ম-ভিত্তিক আদেশ বজায় রাখায় জন্য বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, আমরা ১৯৮২ সালের কনভেনশন মতে সকল সমুদ্র আইন (ইউএনক্লজ) অনুযায়ী আঞ্চলিক ও সমুদ্র বিরোধসহ সকল আন্তর্জাতিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আস্থাশীল।
প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াং বাংলাদেশ সফরে আসার সময় ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল সঙ্গে নিয়ে আসায় ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারাই দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অগ্রগতির উপায় ও পদ্ধতি খুঁজে বের করতে সমর্থ হবেন। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম উভয়ের উদ্যোক্তা এবং ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করছি দুই দেশের অর্থনীতির জন্য সম্ভাবনা খুঁজে বের করার।
বাংলাদেশকে ভিয়েতনামের নিকট প্রতিবেশী উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম একইরকম শান্তি ও প্রগতির প্রত্যাশী। উভয় দেশের জনগণও একই ধরনের রীতিনীতি, ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধের অংশীদার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভিয়েতনামের মহান নেতা হোচি মিন দেশের জনগণের স্বাধীনতার জন্যই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। ‘অসম শক্তির বিরুদ্ধে ভিয়েতনামীদের সংগ্রাম বাংলাদেশকে মুক্তির সংগ্রামে প্রেরণা যুগিয়েছিল। ছাত্রনেতা হিসেবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিরুদ্ধে ষাটের দশকের শেষের দিকে প্রতিবাদ সমাবেশে আমিও অংশ নিয়েছিলাম। এখনও আমি সেগুলো মনে করতে পারি। সেগুলো আমার স্মৃতিতে আজও সমুজ্জ্বল।
বাংলাদেশ সফরের জন্য প্রেসিডেন্ট ত্রান দাই কুয়াংকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সফর দুই দেশের সম্পর্ককে অনেক দূর নিয়ে যাওয়ায় এবং নতুন উচ্চতায় আসীন করতে ভূমিকা রাখবে।
শিল্প ও আইটি খাতে বিনিয়োগের আশ্বাস
সংসদ ভবনের স্থাপত্য নিদর্শনে অভিভ‚ত ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট
বিশ্বের অন্যতম স্থাপত্য নির্দশন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন পরিদর্শন করে অভিভ‚ত হয়েছেন সফররত ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ট্র্যান দাই কোয়াং। গতকাল সোমবার ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে তিনি জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজা, অধিবেশন কক্ষ এবং বিভিন্ন লবি ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনকালে তিনি সংসদ ভবনের স্থাপত্য শৈলীর প্রশংসা করেন। এসময় ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট আইটি পার্কসহ বাংলাদেশে গড়ে ওঠা নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনেয়োগেরও আশ্বাস দেন।
পরিদর্শনকালে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট সাথে থাকা প্রতিনিধি দলের সদস্য ফাম বিন মিন, দাও ভিয়েত ট্র্যাং, নগুয়েন ডেক ভিনহ, নগুয়েন মিনহ হুয়েন, ট্রান ভেন খাউ ছাড়াও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ. স. ম ফিরোজ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবদুর রব হাওলাদার উপস্থিত ছিলেন।
ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সাথে তার কার্যালয়ে দুই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য, নারী ক্ষমতায়ন ও জেন্ডার সমতাকরণের জন্য নিজ নিজ দেশে গৃহীত কার্যক্রম এবং সংসদীয় রীতি-পদ্ধতি নিয়ে বৈঠকও করেন। এসময় স্পিকার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নিæ মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হয়েছে। প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক ও স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টি, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার হ্রাস এবং বাল্যবিবাহ রোধ করে ইতোমধ্যে সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আওতায় সরকার বয়স্ক ও বিধবা ভাতা প্রদানের মাধ্যমে সমাজের দারিদ্র্যের হার ২৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।
শিরীন শারমিন বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মধ্যে অর্থনৈতিক, অন্যান্য প্রযুক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ১০০টি অর্থনৈতিক জোন এবং ২৮টি আইটি পার্ক প্রতিষ্ঠার কাজ হাতে নিয়েছে- যেখানে ভিয়েতনামের বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তিনি এসব ক্ষেত্রে ভিয়েতনামকে বিনিয়োগের আহবান জানান। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ট্র্যান দাই কোয়াং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে সর্বাÍক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্টের শ্রদ্ধা
সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে জানান, সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশ সফরত ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান ডাই কুয়াং।
কড়া নিরাপত্তায় মোটর শোভাযাত্রা সহকারে সোমবার সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সড়ক পথে তিনি স্মৃতিসৌধে পৌছেন। এসময় সেদেশের কয়েকজন মন্ত্রী তার সফরসঙ্গী ছিলেন।
সেখানে তাকে স্বাগত জানান, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা:এনামুর রহমান, নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান ও ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান। ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান ডাই কুয়াং স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এসময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তাকে গার্ড অব অনার সম্মান প্রদান করেন।
এক মিনিট নীরবে দাড়িয়ে থাকেন তিনি। তখন বিউগলে বেজে ওঠে করুন সুর। প্রায় ১৫ মিনিট জাতীয় সৃতিসৌধে অবস্থান কালে ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রান ডাই কুয়াং স্মৃতিসৌধের পরিদর্শন বইতে স্বাক্ষর করেন। পরে তিনি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে একটি ‘গ্যস্টোভা’ গাছের চারা রোপণ করেন।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে রোববার বিকালে স্ত্রী গুয়েন থি হিয়েনকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছেছেন ভিয়েতনাম প্রেসিডেন্ট ত্রান ডাই কুয়াং। কয়েকজন মন্ত্রী, ৪৫টি প্রতিষ্ঠানের ১০০ জন ব্যবসায়ী প্রতিনিধি রয়েছেন তার সফরসঙ্গী হিসেবে।



 

Show all comments
  • নেসার উদ্দিন ৬ মার্চ, ২০১৮, ৩:১৯ এএম says : 0
    প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ