Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নানাবিধ রোগে আক্রান্ত খালেদা জিয়া, সুচিকিৎসা দাবি চিকিৎসকদের

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নানাবিধ রোগে আক্রান্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা দাবি করেছেন সচেতন চিকিৎসক সমাজ। তারা অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ একটি মেডিক্যাল টিম পাঠিয়ে কারাবান্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সুকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। গতকাল (সোমবার) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সচেতন চিকিৎসক সমাজ আয়োজিত সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বিশিষ্ট অর্থপোডিক বিশেষজ্ঞ ও বিএমএর সাবেক সহ সভাপতি প্রফেসর ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে জাতি আজ উদ্বিগ্ন। অনতিবিলম্বে খালেদা জিয়ার জামিন মঞ্জুর করে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো আশু সমাধান করা প্রয়োজন। এর মধ্যে অতি সত্তর কারাগারে বিশেষজ্ঞ একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়ে খালেদা জিয়ার শরীরের সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সু-চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা সচেতন চিকিৎসক হিসাবে ভীষণভাবে উদ্বিগ্ন দেশনেত্রীর স্বাস্থ্যগত কারণে। আপনারা জানেন, ৭৩ বছর বয়স্ক এই মহিয়ষী বিদূষী মহিলা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বক্ষ্যব্যাধিতে আক্রান্ত বহু বছর থেকে, বিশেষ করে শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে। উনাকে উদ্দেশ্যম‚লকভাবে যে পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ ভবনে রাখা হয়েছে, সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশের জন্য উনার প‚র্বের শ্বাসকষ্ট জনিত বক্ষ্যব্যাধি মারাত্মকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যা নিয়ন্ত্রণ করার কোনো ব্যবস্থা ঐ পরিত্যক্ত জেলখানায় নাই।
খালেদা জিয়া বিগত ২০ বছর ধরে ডায়াবেটিসে ভুগছেন জানিয়ে রফিকুল কবির লাবু বলেন, জরাজীর্ণ পরিবেশ, একাকীত্ব এবং সরকারের মানসিক নির্যাতনের কারণে উনার রক্তের শর্করা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে অথবা কমেও যেতে পারে। যা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। অথচ ওখানকার অব্যবস্থার মধ্যে যা কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। ফলে যে কোনো সময় দেশনেত্রীর শারীরিক অবনতি ঘটতে পারে, যার জন্য এই সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে। উনি (খালেদা জিয়া) একজন হার্টের রোগী। বিগত ১০ বছর ধরে উনি উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। পরিত্যক্ত জরাজীর্ণ পরিবেশ এবং একাকীত্বের কারণে উনি যে কোনো সময় একউট হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। উনি একজন চোখের রোগী। কিছুদিন প‚র্বে উনি বিদেশ থেকে চোখের অপারেশন করে ফিরেছেন। এ অবস্থায় উনার চোখের নিবীড় পরিচর্যা প্রয়োজন। যা জেলখার পরিত্যাক্ত জায়গায় কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয়। জরুরী ভিত্তিতে উনাকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
খালেদা জিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যা হাঁটু সংক্রান্ত রোগ উল্লে করে বিশিষ্ট এই চিকিৎসক বলেন, উনি ৩০ বছর ধরে অষ্টিও আর্থোসিস রোগে ভুগছিলেন। যা উনার স্বাভাবিক চলাফেরায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিল এবং প্রচÐ হাটু ব্যাথায় ভুগছিলেন। এক পর্যায়ে হাঁটু সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শে উনি দুটি হাঁটুই প্রতিস্থাপন করে নেন। অর্থাৎ কৃত্রিম হাঁটুর জোড়া লাগানোর অপারেশন করেন। কিন্তু জোড়া প্রতিস্থানের পর এর ফলাফল এবং জোড়া ভালো থাকার সময়কাল সম্প‚র্ণ নির্ভর করে অপারেশন পরবর্তী চলাচল ও হাঁটু ভাঁজের নিয়মের উপর। এই নিয়মগুলো মেনেই উনি এতদিন ভালো ছিলেন। অবৈধ সরকারের স্বঘোষিত জরাজীর্ণ পরিত্যক্ত জেলখানায় উনি কি অবস্থায় আছেন। উনার চলাচলের অবস্থা, উনার ওয়াশরুম ব্যবহারের পদ্বতি, সবকিছুর ব্যাপারেই একজন হাঁটু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ জরুরী প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। কারণ এই নিয়মগুলি বর্তমান অবস্থায় সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী সম্পাদন না হলে খালেদা জিয়ার মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। সেখানকার অব্যবস্থাপনার জন্য উনার কৃত্রিম জোড়া দুটি কোনোভাবে ঢিলে হয়ে যায় তাহলে দেশনেত্রীর চলাফেরা মারাত্মক হুমকির মুখে পরতে পারে।
চিকিৎসক নেতৃবৃন্দ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ ও হাটু সংক্রান্ত রোগে ভুগছিলেন। কারাগারে যাওয়ার পর সেসব সমস্যা বেড়ে গেছে। ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়া বাইরের ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চাইলেও কারা কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেছেন কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।
ডা. রফিকুল কবির লাবু বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ দেখা করার অনুমতি দেয়নি। পরে আইজি প্রিজনের কাছে চিঠি দিলেও কোনো সাড়া পাইনি। আমরা বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে দেখা করতে গিয়েছিলাম। দেখে চিকিৎসা দিলে অবশ্যই তিনি ভালো হতেন বলে আশাবাদী। খালেদা জিয়া নিজেও বাইরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ নিতে চেয়েছেন। অথচ কারাগারের একজন জুনিয়র ডাক্তার বলে দিলেন তিনি দীর্ঘদিন ধরে হাটুর সমস্যায় ভুগছেন, এখন সেই ব্যথা বেড়েছে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশে মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. একেএম আজিজুল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আব্দুস সালাম, ড্যাবের সহ-সভাপতি প্রফেসর ডা. শহীদ হাসান, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যানসার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম, প্রফেসর ডা. মোস্তাক আহমেদ, ডা. হারুন-উর রশিদ, ডা. মো. শহিদুল আলম. ডা. গাজী আব্দুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • আরজু ৬ মার্চ, ২০১৮, ৩:১৪ এএম says : 0
    সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া
    Total Reply(0) Reply
  • এনায়েতুল্লাহ ৬ মার্চ, ২০১৮, ৩:১৯ এএম says : 0
    আল্লাহ তাকে দ্রুত সুস্থতা দান করুক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২৫ অক্টোবর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ