Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের আবাসিক সমস্যা চরমে

সরকারিভাবে পর্যটন মোটেল নির্মাণ হলে রাজস্ব বাড়বে

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মাহফুজুল হক আনার/আবু তাহের আনসারী পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া থেকে : বাংলাদেশ থেকে কাঞ্চন জংঘা’র সৌন্দর্য উপভোগ করার কথা উঠলেই চলে আসবে দেশের সর্বউত্তরের জেলা শহর পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলার নাম। দুই দেশকে সীমানা রেখা বরাবর বয়ে চলা মহানন্দা নদী ঘেষে উচু টিলার উপর অতি পূরাতন ডাকবাংলোটি যেন সৌন্দর্য উপভোগের নিরব স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে। আবাসিক সঙ্কটের কারণে তেুুলিয়া’র সান্ধৃকালীন দৃশ্য দেখা থেকে পর্যটকেরা বঞ্চিত হয়ে আসছে। এর উপর যোগ হয়েছে ঐতিহ্যগতভারে তেুুলিয়ার গ্রহনযোগ্যতার পাশাপাশি যোগ হয়েছে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দরের গুরুত্ব ও ব্যস্ততা। দেশের একমাত্র এই বন্দর দিয়েই মাত্র অর্ধ শত কিলোমিটার দুরত্বের মধ্যে ভারত নেপাল ও ভুটানের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের সুযোগ বিদ্যমান। আর এ কারনে প্রতিনিয়ত এই বন্দরটির গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। কিন্তু আবাসিক সুবিধা না থাকায় স্থল বন্দরে আমদানী রফতানির জন্য আসা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণির ও পেশাজীবি মানুষদের রাত্রী যাপনের জন্য ফিরে আসতে পঞ্চগড় জেলা শহরে। এ অবস্থায় অতি দ্রæত সরকারী ও বেসরকারীভাবে পর্যটন মোটেল গড়ে তোলা না হলে তেঁতুলিয়া ও বাংলাবান্ধা বিমুখ হয়ে পড়বে পর্যটক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ। রাজস্ব হারাবে সরকার।
দেশের দূরদূরান্ত থেকে আগুন্তক পর্যটকরা দর্শনীয় স্থান সমূহ এবং হিমালয় পর্বত দৃশ্য স্বচক্ষে উপভোগ করার জন্য মহানন্দার কোল ঘেঁষে শতাধিক বছরের পুরনো জেলা পরিষদ ডাকবাংলো বা ১৯৮৬ সালে নির্মিত পিকনিক কর্ণারে পর্যটকরা রাত যাপনের সুযোগ খুজে। ২০১৫ কিন্তু জেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের কাছে কমপক্ষে সপ্তাহ খানেক আগে বাংলো বুকিং নিতে হয়। ডাকবাংলো ও পিকনিক কর্ণারে আবাসিক রাত যাপনের পর্যাপ্ত কক্ষও নাই। দু’টি বাংলোর গোটা কুড়িজন পর্যটক রাত যাপন করতে পারে। কিন্তু সরকারি কোন ভিআইপি অনুষ্ঠান থাকলে সেগুলো পর্যটকরা পায় না। এছাড়া আরডিআরএস বাংলো, পাবলিক হেলথ বাংলো, ফ্যাসিলিটিজ ডিপার্টমেন্ট বাংলো খুব কম সময়ে খালি থাকে। এসব বাংলোয় সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা ও তাদের আত্মীয় স্বজনের নামে বুকিং বরাদ্দ থাকে। ব্যাক্তি মালিকানায় গড়ে উঠা টিনশেড পাকা ‘‘হোটেল সীমান্তের পাড়’’ এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ৩ তলায় স্বল্প পরিসরে পর্যটকরা থাকতে পারে। কিন্তু এই আবাসিকগুলোতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের ব্যবস্থা না থাকায় এবং পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের বেশ দূর্ভোগ পোহাতে হয়। বনবিটের সাড়ে এগারো একর জমির মাঝখানে নির্মিত নবনির্মিত ইকো-কর্টেজ এবং উত্তরা বন বিশ্রামাগারের বাংলো রয়েছে কিন্তু ভিতরে কোন আসবাবপত্র নেই। ছায়া নিবিড় সবুজ গাছপালার সুন্দর পরিবেশে এই বাংলো দু’টিতে শুধু আসবাবপত্রের অভাবে কোন পর্যটক রাত যাপন করতে পারে না। বাংলাবান্ধা স্থলবন্ধর ও ইমিগ্রেশন চালুর পর দেশি ও বিদেশি পর্যটকরা এ স্থলরুটে ভারতের দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি সহ নেপাল, ভুটান ও চীনে ভ্রমণে যান। এসব পর্যটকদের মধ্যে অনেকই তেঁতুলিয়া শহরে আবাসিক ব্যাবস্থা না পেয়ে বিপাকে পড়েন।
এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হলো মহানন্দার তীরে ডাকবাংলোয় দাঁড়িয়ে কাঞ্জনজঙ্খা হিমালয়ের পর্বতের দৃশ্য খুব কাছে থেকে অবলোকন করা যায়। কারণ শহর থেকে হিমালয় পর্বতের দূরত্ব হলো প্রায় ৬০ কিলোমিটার। মার্চ-মে মাস ও আগষ্ট-অক্টোবর পর্যন্ত আকাশ পরিস্কার থাকে তাই দিন ও রাতে পরিস্কার ঝকঝকে দেখা যায় । এছাড়া নভেম্বর- জানুয়ারী শীত মৌসুমে পর্যটকরা বেশি আসে এক নজর দেখতে । সাধারণত ষড়ঋতুর প্রত্যেক মাসে কমবেশী হিমালয় পর্বতের বাস্তব এই দৃশ্যপট পরিলক্ষিত হয়। বর্তমানে শীত মৌসুমে পর্যটক ও ভ্রমন পিপাসুদের ভীর বাড়ছে তেঁতুলিয়ায়।
কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেটের রওশনপুর আনন্দ ধারা, আনন্দগ্রাম, মিনাবাজার পর্যটকদের দেখতে মনকড়া আকর্ষণ থাকে। এছাড়া দর্শনীয় প্রাচীন স্থাপত্য পুরাতন বাজারে শিব মন্দির, দর্জিপাড়ায় কমলা ও সবুজ চা বাগান এবং বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও ইমিগ্রেশন জিরোপয়েন্ট। উপজেলা প্রশাসন মহানন্দার পাড়ে নব নির্মিত পিকনিক কর্ণার এবং প্রাচীন জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর মাঠে পর্যটকদের দৃষ্টি আকষর্ণের জন্য বেশ কিছু কৃত্রিম ভাস্কর্য ও পশু প্রাণি স্থাপন সহ শিশুদের খেলনা স্থাপনসহ আরো কিছু দৃষ্টি নন্দন ফোয়ারা তৈরি করছে। শহরের বাইপাস রবীন্দ্রনাথ স্মরণী, কবি নজরুল স্মরণী, তিরনইহাট মোড়, বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট, সিপাইপাড়া বাজার, কালান্দিগঞ্জ এবং ভজনপুর ব্রীজের পাশে এবং চৌরাস্তা বাজারে দৃষ্টি নন্দন কিছু মোড়াল ফলক ও ভাস্কর্য স্থাপন করেছে। এতো কিছুর পরও স্বপ্নের শহর তেঁতুলিয়ায় রাত যাপনের আবাসিক ব্যবস্থা না পেয়ে পর্যটকরা নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে জেলা শহরে।
এব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শাহীন বলেন, পর্যটকদের জন্য তেঁতুলিয়ায় আবাসিক সমস্যা অনেকটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের অধীনে সরকারি দু’টো বাংলো থাকলেও সরকারি ভিআইপি বা কোন অনুষ্ঠানের কারণে সেগুলো অনেকে বরাদ্দ পায় না। বেসরকারি ভাবে পর্যটকদের জন্য মানসম্মত কোন আবাসিকও গড়ে উঠেনি। এমতাবস্থায় সরকারি ভাবে একটি পর্যটন মোটেল নির্মাণ করা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সানিউল ফেরদৌস জানান, ব্যাক্তি বা সরকারি কোন কর্পোরেশন আগায় না আসলে আমাদের এখানকার আবাসন সমস্যা দুর হবেনা। এছাড়া যদি কোন বড় ব্যাবসায়ী এগিয়ে আসে তাহলে আবাসন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পর্যটন

৩১ ডিসেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ