Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঁচ কারণে ত্রিপুরায় জয় পেল বিজেপি

| প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উত্তরপূর্ব ভারতের রাজ্য ত্রিপুরায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি ও আদিবাসীদের সংগঠন আই পি এফ টির জোট। ত্রিপুরা বিধানসভার মোট ৬০টি আসনের ৫৯টিতে ভোট হয়েছে। এর মধ্যে বিজেপি ৩৫টিতে, আইপিএফটি ৮টিতে এবং সিপিআইএম ১৩টিতে জয়ী হয়েছে। তিনটি আসনের ফল এখনো পাওয়া যায় নি, কিন্তু বিজেপি-আইিএফটি জোট মোট ৪৩টি আসনে জেতায় তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত হয়ে গেছে। রাজ্যে ২৫ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকা বামফ্রন্ট পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে। তারা বলছে, এই ফল অপ্রত্যাশিত। কিন্তু যে বিজেপি আজ এত বিপুল ভোট পেয়ে জয়ী হলো, সেই দলই ৫ বছর আগে ওই রাজ্যে প্রায় অস্তিত্বহীন ছিল। তাহলে কীভাবে এল এই জয়? বিশ্লেষকরা যেসব কারণগুলি দিচ্ছেন, তা হল প্রথমত, প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া বা অ্যান্টি-ইনকামব্যান্সি ফ্যাক্টর: দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বামপন্থীরা। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজেই ২০ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী। তাই ক্ষমতাসীন সরকার-বিরোধী হাওয়া এবার ছিলই, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে বিজেপি নিজেদের মূল শ্লোগানও দিয়েছিল ‹চলো পাল্টাই - অর্থাৎ পরিবর্তন চাই। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা রাম মাধব আগরতলায় মন্তব্য করেছেন, চলো পাল্টাই শ্লোগানটাই যে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমর্থন পেয়েছে, সেটা তো দেখাই যাছে। বহু মানুষ যে বিজেপিকে ভালবেসে ভোট দিয়েছে, তা মনে হয় না। তারা বামফ্রন্ট সরকারকে পাল্টাতে চেয়েছে বলেই তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, বলছিলেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক গৌতম চাকমা। সি পি আই এমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ত্রিপুরার অন্যতম শীর্ষ নেতা গৌতম দাস অবশ্য বিবিসিকে বলছিলেন, অ্যান্টি-ইনকামব্যান্সি ফ্যাক্টর কতটা কাজ করেছে, সেটা ফলের বিস্তারিত বিশ্লেষণ না করলে তো বোঝা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, বেকারত্ব, দুর্নীতির অভিযোগ: বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশের ভোট পেয়েছে এবার- যাদের শিক্ষাদীক্ষা রয়েছে, কিন্তু হাতে কোনও কাজ নেই। অধ্যাপক গৌতম চাকমার কথায়, শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা এ রাজ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ। তাদের ক্ষোভ তো থাকবেই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ত্রিপুরায় প্রচারে গিয়ে বারে বারে এই বিষয়টার ওপরে জোর দিয়েছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তরুণদের হাতে কাজ দেওয়ার। সেটা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিজেপি-র পক্ষে, এবং বামফ্রন্টের বিপক্ষে। তবে ত্রিপুরাতে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ হয় নি, এটা কোনওমতেই মেনে নেওয়া যায় না। তা সত্তে¡ও যেভাবে অনুন্নয়নের কথা বলে বিজেপি জিতল, এটা সত্যিই অভাবনীয়, - মন্তব্য সাংবাদিক আশিষ গুপ্তর। তৃতীয়ত, আদিবাসী ভোট এবার বিজেপি-র দিকে: ত্রিপুরার এক-তৃতীয়াংশ আসন আদিবাসীদের জন্য সংরক্ষিত। সিপিআই এম নেতা গৌতম দাসের কথায়, ওটাই ছিল আমাদের অন্যতম শক্ত জনভিত্তি। কিন্তু দেখা যাছে, সেখানে আমরা প্রায় কিছুই জিততে পারি নি। ওটাই আমাদের সবথেকে বড় ক্ষতি। আদিবাসী ভোট নিজেদের দিকে টানতে আঞ্চলিক দল আই পি এফ টির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল বিজেপি। নয়টি আসনে আইপিএফটি লড়েছিল, যার মধ্যে আটটিতে তারা জিতেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক চাকমা অবশ্য বলছেন, আই পি এফ টি-র ঘোষিত নীতি হল পৃথক তুইপ্রাল্যান্ডের দাবী। তা থেকে তারা সরবে না। কিন্তু বিজেপির পক্ষে সেই দাবী মেনে নেওয়া কঠিন। তাই এই দুই জোট সঙ্গীর মধ্যে সংঘাত বাঁধবেই অদূর ভবিষ্যতে। চতুর্থত, তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়তে পেরেছে বিজেপি: বিগত নির্বাচনে যে দল কোনও শক্তি হিসাবেই পরিগণিত হত না, সেই দলই এবার বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হতে পারল - কারণ তারা গত প্রায় দুবছর ধরে জোর দিয়েছিল তৃণমূল স্তরে সংগঠন গড়ে তুলতে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতা সুনীল দেওধর ওখানেই ঘাঁটি গেড়েছিলেন, সঙ্গে ছিলেন আরেক আর এস এস নেতা ও বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ