Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমেছে, বেড়েছে পরিবারতন্ত্র

সিপিডির গবেষণায় তথ্য

| প্রকাশের সময় : ৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : গত চার বছরে (২০১২-২০১৬) তৈরি পোশাকখাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমলেও বেড়ে গেছে পরিবারতন্ত্র। তাই রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এই খাতের পরিচালনা পরিষদে পরিবারতন্ত্র কমিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে জোর দিতে হবে।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার শ্রমিকের মধ্যে জরিপ চালিয়ে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে সিপিডি। রাজধানীর গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় গতকাল শনিবার গবেষণাটির প্রাথমিক তথ্য তুলে ধরে হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিপিডির চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান, বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক শ্রমসচিব মিকাইল শিপার, শ্রমিকনেতা বাবুল আক্তার, শামছুন্নাহার ভূঁইয়া প্রমুখ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এই চার বছরে পোশাক খাতে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যা ২০০৫ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ছিল ৪ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। সেই হিসেবে চার বছরে কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধি কমেছে দশমিক ৭১ শতাংশ। আর সার্বিকভাবে এই খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যাও কমেছে। এতে বলা হয়, রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর গেলো কয়েক বছরে দেশের পোশাক খাতে সামাজিকভাবে অগ্রগতি হলেও অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি পিছিয়ে রয়েছে।
পোশাক কারখানাগুলোর পরিচালনা পরিষদে পরিবারতন্ত্র বাড়ছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ খাতে পরিবারতন্ত্রে পরিচালিত বোর্ডের হার শতকরা ৮৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডের অধিকাংশই একই পরিবারের সদস্য।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, তৈরি পোশাকশিল্পে নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মজুরি বৈষম্য কমছে। বর্তমানে পোশাক খাতে কর্মরত পুরুষ শ্রমিকেরা গড়ে সাত হাজার ২৭০ টাকা ও নারী শ্রমিকেরা সাত হাজার ৫৮ টাকা মজুরি পান। নারী ও পুরুষ শ্রমিকের গত মজুরি ব্যবধান প্রায় তিন শতাংশ। রানা প্লাজা ধসের পরও পোশাকশিল্পে নতুন বিনিয়োগ থেমে থাকেনি। বর্তমানে যেসব পোশাক কারখানা আছে, তার ১৮ শতাংশই ২০১৩-১৬ সালের মধ্যে স্থাপিত হয়েছে। এতে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে। আবার ছোট ছোট অনেক কারখানা বন্ধ হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন অনেক পোশাকশ্রমিক।
ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের ১৯৩টি পোশাক কারখানা ও দুই হাজার ২৭০ শ্রমিকের ওপর জরিপ চালিয়ে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর পোশাকশিল্পে অর্থনৈতিক চেয়ে সামাজিক অগ্রায়ণ (অগ্রগতি) হয়েছে। পোশাকশিল্পকে টেকসই করতে হলে এই অসমতা দূর করতে হবে।
সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে, ১৬ শতাংশ পোশাক কারখানায় বিদেশি কর্মকর্তা কাজ করেন। সংখ্যার হিসাবে প্রতি কারখানায় গড়ে চার জন। বিদেশি কর্মকর্তাদের ৩৭ দশমিক তিন শতাংশ উৎপাদন পরিকল্পনা, ২০ দশমিক এক শতাংশ মার্চেন্ডাইজিং, ১১ দশমিক নয় শতাংশ মান নিশ্চিত এবং আট দশমিক দুই শতাংশ ওয়াশিং বিভাগে কাজ করেন।
গবেষণা আরও উঠে এসেছে, ৯১ শতাংশ পোশাক কারখানাতেই ওয়ার্কার পার্টিসিপেশন কমিটি (ডবিøউপিসি) আছে। অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়ন আছে মাত্র তিন দশমিক তিন শতাংশ কারখানায়। এ ছাড়া সাবকন্ট্রাক্টিং বা ঠিকা কাজ করা কারখানার ছয় দশমিক সাত শতাংশ কমে গেছে। বর্তমানে প্রায় ১৭ শতাংশ কারখানা আংশিক বা পুরোপুরি সাবকন্ট্রাক্টিং।
অর্থনীতিবীদ রেহমান সোবাহান পোশাকশিল্পের মালিকদের উনিশ শতকের ধ্যানধারণা ছেড়ে একুশ শতকের মডেলে কারখানা পরিচালনা করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ ও ভালো মজুরি দিয়ে উৎপাদনক্ষমতা বাড়ান। তাদের মুনাফার ভাগ দিন। সরাসরি সুফল পেলে শ্রমিকেরা কারখানাটিকে নিজের মনে করবেন। তখন টেকসই উন্নয়ন হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কর্মসংস্থান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ