পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
-বর্ণিল আলো, ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হচ্ছে গোটা রাজধানী
-সর্ববৃহৎ জনসভার টার্গেট আ’লীগের
তারেক সালমান : ৭ মার্চ। বাংলাদেশের ইতিহাসের এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলাদেশ অর্থাৎ বাঙ্গালী জাতির আত্ম-স্বীকৃতি, মর্যদা ও গৌরবোজ্জল দিন। এই দিনকে ঘিরে প্রতিবছর সভা-সেমিনার ও জনসভা করে আসছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে প্রতিবছরের চেয়ে এবার আগামী ৭ মার্চের জনসভা হবে কৌশলী। কারণ, বছরের শেষ নাগাদে হচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। আর ওই নির্বাচনকে টার্গেট করেই স্মরণকালে সর্ববৃহৎ নির্বাচনী জনসভা করার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। এছাড়া ওই জনসভা থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচন জয়ের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নেতাকর্মীদের মধ্য পৌছে দেবেন সভার প্রধান অতিথি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণে বাঙালির স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ গেল বছর ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়ার পর এবার স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভা করে দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থকসহ দেশবাসীকে চমক দিতে চায় আওয়ামী লীগ। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পাওয়ার পর প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক ভাষণের দিনটি পালনে নেয়া হচ্ছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বর্ণিল আলো ও ব্যানার-ফেস্টুনে সাজানো হচ্ছে গোটা রাজধানী। জনসভায় যোগ দিতে প্রতিদিন মাইকে প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে আহ্বানও জানানো হচ্ছে। পাড়া-মহল্লায় সরকারি দলটির বিভিন্ন অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়, ক্লাবে ক্লাবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হচ্ছে।
৭ মার্চের জনসভা সর্বকালের সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলবে এমন দাবি তুলে ধানমন্ডিতে দলের এক যৌথসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী ওই জনসভায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি অন্য সভার চেয়ে অনেক গুণ বেশি হবে।
এদিকে ওই যৌথসভার পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রীতিম সংগঠনের মধ্যে ৭ মার্চের জনসভাকে জনসোতে পরিণত করার দৃঢ়তা বেড়েছে। জনসভাকে সফল ও সার্থক করার লক্ষ্য সাংগঠনিক সকল প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও কৃষক লীগ প্রস্তুতি সভা করছে। ৭ মার্চের ওই জনসভা ঘিরে ক্ষমতাসীন দলটিতে রীতিমত নির্বাচনী উত্তাপ বিরাজ করছে।
সূত্র মতে, ৭ মার্চের ওই জনসভাকে ঘিরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জনসভায় নিজেদের শক্তি জানান দিতেই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সংগঠিত করতে ঘাম জড়াচ্ছেন বলে জানা গেছে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভায় ব্যাপক লোক সমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকারি দলটি। এ জনসভায় দলের নেতাকর্মী ছাড়াও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, পেশাজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন। সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার বিকালে ২৩বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ৭ মার্চের জনসভা সফল করার লক্ষ্যে মতবিনিময় করেছে দলের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
ঐতিহাসিক ৭মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামীলীগের জনসভা সফল করতে দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার মতবিনিময় সভায় নির্দেশনা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সমাবেশ সফল করতে দলটির প্রচারপত্র নিয়ে নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ৭ মার্চ বিশ্বস্বীকৃত, এটা এখন শুধু বাঙালির নয়; সারা বিশ্বের। প্রতিটি ঘরে ঘরে যান। পাড়ায় পাড়ায় মিটিং করুন। শেখ হাসিনার দাওয়াত, আওয়ামী লীগের দাওয়াত এই নগরীরর প্রতিটি ঘরে ঘরে, প্রতিটি নর-নারী ও নতুন ভোটার সবার কাছে পৌছে দিতে হবে। জাগরণের ঢেউ দেখিয়ে বিএনপির বড় বড় কথার জবাব দিতে চাই।
প্রসঙ্গত, গেল বছর সরকারি উদ্যোগে ৭ মার্চের ভাষণের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি উদযাপনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আর সেই স্বীকৃতির পর প্রথম ৭ মার্চ ঘিরে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দিনটিকে সর্বকালের বৃহৎ জনসভার মাধ্যমে উদযাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, লাখো জনতার অংশগ্রহণে ৭ মার্চ উদযাপন করা হবে। ওইদিন প্রমাণিত হবে, বিএনপি-জামায়াতের চেয়ে আওয়ামী লীগের সামর্থ্য অনেক বেশি।
আওয়ামী লীগের উপ-দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানে দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবী এবং বিভিন্ন পেশার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিরা বর্তমান সরকারের সফলতা-উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তুলে ধরে বক্তব্য রাখবেন।
আওয়ামী যুবলীগ দফতর সূত্রে জানা গেছে, স্মরণকালের জনসভা পরিণত করতে তাদের নেতাকর্মীদের ইতোমধ্যেই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ যুবলীগকে। নেতাকর্মীরা ওই জনভাকে ঘিরে নির্বাচনী ব্যাপক শো-ডাউন দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট বলেন, ৭ মার্চ ঐতিহাসিক দিন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। জাতির জনকের ভাষণ এখন বিশ্বের সম্পদ। তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতির জনক ঐতিহাসিক ভাষণটি দিয়েছিলেন। অন্য বারের তুলনায় এবার আমরা ভিন্ন আমেজে দিনকে উদযাপন করবো। যুবলীগ নেতাকর্মী বিশেষ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের প্রতিটি নেতাকর্মী জনসভায় যোগ দিয়ে জনসভাকে কানায় কানায় পূর্ণ করবে। আমরা ওইদিন প্রমাণ করবো-ঢাকা শহরে স্বাধীনতা বিরোধীদের কোন স্থান নেই।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, ৭ মার্চ জনসভা সফল করতে ইতিমধ্যেই মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড-ইউনিয়ন এবং থানার নেতৃবৃন্দকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আওয়ামী লীগের আওতাধীন ওয়ারী থানার সভাপতি আশিকুর রহমান চৌধুরী লাভলু বলেন, ৭ মার্চ দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের পদচারনায় মুখরিত থাকবে রাজধানী। এদিন ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ২০ হাজারের অধিক নেতাকর্মী জনসভায় যোগ দেবে। আমরা সরকারবিরোধীদের দেখাতে চাই-দেশবাসী উন্নয়নের স্বার্থে আবারো আওয়ামী লীগকে নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনবে।
ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান মোল্লা সজল জানান, আমরা নির্দেশনা মৌখিকভাবে পেয়েছি। এ নির্দেশনার পর ৭ মার্চ জনসভাকে সফল করতে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিয়ন-ওয়ার্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি।
এদিকে, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভাকে সফল করতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো। এ লক্ষে আওয়াামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৭টি সংগঠন সহযোগী এবং ৩টি ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নেতাকর্মীদের জনসভায় যোগদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষনেতা জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চ সফল করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই গুছিয়েও আনা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিশাল মঞ্চসহ বর্ণাঢ্য সাজসজ্জার কাজ প্রায় শেষের পথে। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে জনসভায় ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে দল ও সহযোগী সংগঠনের লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কয়েকটি বৈঠক, কর্মিসভা ও বর্ধিত সভাও করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরের সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন নেতা ছাড়াও দলীয় এমপিদের নিজ নিজ এলাকা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। দিবসটি পালন উপলক্ষে এ সমাবেশ রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকেও লাখ লাখ লোক অংশ নেবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা।
সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির বিষয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার বলেন, ইতোমধ্যেই সমাবেশকে সফল করার লক্ষে আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছি। আমাদের ঢাকা মহানগরসহ থানা, ওয়ার্ড এর সকল নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত থাকবে। তিনি বলেন, সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা নিরাপত্তায় থাকবে। পাশাপাশি সমাবেশ সফল করতে জেলা-উপজেলাসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।