পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টাইমস অব ইন্ডিয়া : চীনের অবিরাম উত্থান ও তার সাম্প্রতিক দমনমূলক কৌশল অবলম্বন মাও জামানার কথা মনে করিয়ে দেয়- যে প্রক্রিয়া প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার জন্য গ্রহণ করেছেন। আর তা বেইজিংয়ের সাথে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ব্যাপারে ওয়াশিংটনের গভীরে প্রোথিত বিশ্বাসকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে। মূলত ক্ষমতার উপর শি’র নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় হওয়ার প্রেক্ষিতে যুুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে চীনের সাথে যুদ্ধ অনিবার্য দেখছে।
ক‚টনীতিক, পন্ডিত ও ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে ব্যাপক ভিত্তিক ঐকমত্য ছিল যে চীন ক্রমান্বয়ে যুুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্মিলনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এবং সে কারণে আমেরিকানদের দু’দেশের মধ্যে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর সম্পর্ক সৃষ্টি পরিহার করে চলা উচিত। সে জোর ধারণা এখন দুর্বল হয়ে গেছে। চীন এখন খোলাখুলি তার নিজের পথে হাঁটছে যে পথ পাশ্চাত্যের উদার গণতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতির সাথে মিলিত হওয়ার জন্য নয়, আলাদা পথ। আর এর অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে যুদ্ধ।
পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সাবেক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং ওবামা প্রশাসনের প্রাচ্যাভিমুখী নীতির প্রণেতা ক‚র্ট এম. ক্যাম্পবেল বলেন, এমনকি যারা চীন-মার্কিন সম্পর্ক নিয়ে অত্যন্ত কল্পনাপ্রবণ, আশাবাদী ও কিছুটা রোমান্টিক মনোভাবের ছিলেন তারাও এখন এক নতুন চীনের সাথে যুদ্ধের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন।
এশিয়া সোসাইটির মার্কিন-চীন সম্পর্ক বিষয়ক কেন্দ্রের পরিচালক অরভিল শেল বলেন, শি’র ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ চীনকে নতুন এক পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষেপ করেছে যা চীন ও উদার গণতান্ত্রিক বিশে^র মধ্যকার বিদ্যমান বিচ্যুতি রেখা বিঘিœত করেছে।
তিনি বলেন, শি ক্ষমতায় তার নিয়ন্ত্রণ দৃঢ় করার আগে থেকেই চীনের ব্যাপারে মোহ নিরসন হওয়া শুরু হয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগরে সামরিক শক্তি প্রদর্শন, মার্কিন কলেজ ক্যাম্পাসগুলোতে ধর্মপ্রচার, কর্পোরেট গোপনীয়তা চুরি বা ওয়েবের সেন্সরশিপ ইত্যাদির ফলে চীন যুক্তরাষ্ট্রে একের পর এক ক্ষেত্রে ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে থাকে।
শেল বলেন, চীনের দিক থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনী, সংবাদপত্র, বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, এখন ব্যবসায়ী সমাজও মুখ ফেরাচ্ছে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে দেখলে কোনো সন্দেহ নেই যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন পথে চলেছে।
বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কর্মকর্তারা বলেন, সাধারণ উত্তেজনা বিরাজ করা সত্তে¡ও এই বিভক্তি বৃদ্ধির পরিণতি সম্পর্কে আগাম কিছু বলা কঠিন। কারণ তা ঘটছে বেইজিং ও ওয়াশিংটনে অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শি’র ঊর্ধারোহণ শুধু তার অপরিসীম ক্ষমতারই প্রতিফলন নয়, চীনের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতারও প্রতিফলন। গত সপ্তাহে বাজারে খারাপ খবর ছড়িয়ে ছিল যে চীন সরকার আনবাং ইন্স্যুরেন্স গ্রæপ জব্দ করেছে। এটি একটি ঋণ জর্জরিত কংগেøামারেট যা ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়া হোটেলের মালিক এবং এক সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জেয়ার্ড কুশনারের পরিবারের মালিকানাধীন একটি ম্যানহাটান স্কাইস্ক্র্যাপারে বিনিয়োগের আলোচনা করেছিল।
চীনের সাথে ট্রাম্পের আচরণ শুধু তার সংরক্ষণবাদী বাণিজ্য কর্মসূচি ও আমেরিকা ফার্স্ট পররাষ্ট্র নীতির প্রতিফলন নয়- শি’কে বৈরি করতে তার ব্যক্তিগত অনীহারও পরিচয়। এ এক বিচিত্র ব্যাপার।
একজন অর্থনৈতিক শীর্ষব্যক্তি হিসেবে চীনের কঠোর সমালোচনা করলেও ট্রাম্প এখনো দেশটির বিরুদ্ধে ব্যাপক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি। গত বছর তিনি চীনকে মুদ্রা ম্যানিপুলেটর হিসেবে চিহ্নিত করতে অস্বীকৃতি জানান। কারণ হিসেবে তিনি সময় খারাপের কথা বলেন। শি যুক্তরাষ্ট্রকে সাহায্য করতে পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি হ্রাসে উত্তর কোরিয়াকে চাপ দিতে রাজি হন।
চীনকে শি’র অনির্দিষ্ট কাল নেতৃত¦ দেয়ার কথা প্রকাশের এক দিন পর ট্রাম্প সোমবার গভর্নরদের সাথে বৈঠকে বলেন, গত বছর চীনের কাছে আমরা বাণিজ্য ক্ষেত্রে সম্ভবত ৫০৪ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছি। তবে তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রেসিডেন্ট শি চৌকস ব্যক্তি। তিনি উত্তর কোরিয়ার ব্যাপারে আমাদের সাহায্য করছেন।
হোয়াইট হাউস ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের উপর শুল্ক আরোপের উদ্যোগ নিচ্ছে। চীন ও অন্যান্য রফতানি কারকরা এর লক্ষ্য। হোয়াইট হাউস চীনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরির বিষয়েও তদন্ত করেছে যার পরিণামে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা বিনিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও দেশটির ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী বিপণনের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নিতে পারে।
মধ্যবর্তী নির্বাচনের বছরে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ট্রাম্পকে কঠোর অবস্থান গ্রহণে চালিত করতে পারে। ডেমোক্র্যাটরা ইঙ্গিত দিয়েছে যে তিনি দ্রæত পদক্ষেপ না নিলে তারা চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের কঠোর অবস্থানকে তার বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে।
ডেমোক্র্যাট নেতা নিউইয়র্কের সিনেটর চাক শুমার বলেন, এখন এটা পরিষ্কার যে প্রেসিডেন্ট শি কোথাও যাচ্ছেন না, চীনের উপর কঠোর হওয়া প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কিছু। যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও কংগ্রেস তাদের লোভী বাণিজ্য আচরণ ত্যাগ না করলে চীন আগামী বছরগুলোতে আমাদের লাঞ্চ খাওয়া অব্যাহত রাখবে।
জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ে প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা পরিকল্পনায় মার্কিন প্রশাসন চীনের প্রতি একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। রিপোর্টে চীনকে স্নায়ু যুদ্ধকালীন সময়ের ভাষায় সংশোধনবাদী শক্তি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে যে আমেরিকার নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধিকে ধ্বংস করবে।
উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে চীনের প্রভাবও মার্কিন যাচাইয়ের আওতায় এসেছে। এফবিআই-র পরিচালক ক্রিস্টোফার রে সম্প্রতি সাক্ষ্য দিয়েছে যে মূল্যবান জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে চীনা ছাত্রদের সক্ষমতাকে বিশ^বিদ্যালয়গুলো উপেক্ষা করেছে। তিনি চীন সরকারের আনুক‚ল্যপুষ্ট বৈশি^ক শিক্ষা নেটওয়ার্ক কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এ প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ সমালোচনার সৃষ্টি করেছে যে এটি চীনের ব্যাপারে জনমতকে প্রভাবিত করার একটি উপাদান কিনা।
কিছু সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ক্ষমতায় থাকার জন্য শি’র পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বৃহত্তর বিরোধ সৃষ্টি হওয়া উচিত নয়। শি ওয়াং কিশানকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে চাইছেন। তিনি একজন সিনিয়র অর্থনৈতিক উপদেষ্টাকে এ সপ্তাহে মার্কিন প্রশাসনের সাথে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন পাঠিয়েছেন। তারা উভয়েই যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিত ও সম্মানিত।
বারাক ওবামার সাবেক চীন বিষয়ক উপদেষ্টা জেফ্রি এ.ব্যাডার বলেন, আমার মতে স্বৈরাচার ও একদলীয় শাসনে এমন সহজাত ব্যাপার নেই যা মূল্যবোধের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করলেও মার্কিন স্বার্থের সাথে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে।
কিছু চীন বিশেষজ্ঞের মতে, চীন সম্পর্কে মোহ নিরসনের ঢেউয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্মিলনে চীন কতদূর অগ্রসর হয়েছে সে ব্যাপারে অবাস্তব প্রত্যাশারই প্রতিফলন ঘটেছে। গোল্ডম্যান স্যাকস-এর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বেইজিংয়ের তিংহুয়া বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষক ছিলেন জন থর্নটন। তিনি বলেন, এ গোলমেলে বিশ্ব দু’দেশের উচিত কি তাদের বিভক্ত করে সেদিকে নয়, কি তাদের ঐক্যবদ্ধ করে সেদিকে গুরুত্ব দেয়া।
তিনি বলেন, বর্ণালির একদিকে রয়েছে শৃঙ্খলা আরেকদিকে রয়েছে বিশৃঙ্খলা। চীন ও যুক্তরাষ্ট সুস্পষ্টভাব্রে বর্ণালির একই প্রান্তে রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।