পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভারতের ঋণের টাকায় ১১০০ বাস-ট্রাক ক্রয়ে দুটি প্রকল্প : দরপত্রের শর্ত ভেঙে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংকের শর্ত পরিবর্তন : বাস-ট্রাক হবে নিম্নমানের : শর্ত না মেনে চিঠি দিয়েও উত্তর পায়নি সড়ক পরিবহন বিভাগ
বিশেষ সংবাদদাতা : ভারতের ঋণের টাকায় ভারত থেকে ১১০০ বাস-ট্রাক কিনবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি)। কিন্তু ভারতের এক্সিম ব্যাংকের দেয়া কিছু শর্তে এ নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এক্সিম ব্যাংক যে শর্ত দিয়েছে তাতে ভারতের ছোটখাটো কোম্পানি দরপত্রে অংশগ্রহণ করতে পারবে। তাদের বাস-ট্রাক হবে অকেটাই নিম্নমানের। সেগুলোর দামও পড়বে কম। নিম্নমানের বাস-ট্রাকের বিশাল বহর নিয়ে বিপাকে পড়বে বিআরটিসি। এ কারনে ভারতের এক্সিম ব্যাংকের শর্ত মেনে নেয়নি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এজন্য মন্ত্রণালয় থেকে ফিরতি চিঠি দেওয়া হলেও তার উত্তর এখনও দেয়নি ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এতে করে পুরো প্রক্রিয়া আটকে আছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক পরিবহন বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ভারতের এক্সিম ব্যাংকের শর্ত মেনে নিলে একদিকে ঋণের বোঝা অন্যদিকে নি¤œমানের গাড়ির বোঝা দুটোই গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।
সূত্র জানায়, রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ও দূরপাল্লার সেবা উন্নয়নে ভারত থেকে ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক কেনার সিদ্ধান্ত হয়। ভারতের রাষ্ট্রীয় ঋণে (এলওসি) এসব বাস-ট্রাক কেনায় দরপত্র চূড়ান্ত করা হয় ২০১৬ সালে। তবে দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে দিয়েছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। এতে নিম্নমানের বাস-ট্রাক সরবরাহের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শর্তের জটিলতায় এলওসির আওতায় ১১০০ বাস-ট্রাক কেনা আটকে আছে। দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও দরপত্র আহŸান করা যায়নি। যদিও প্রকল্প দুটি মেয়াদ মাত্র চার মাস অবশিষ্ট রয়েছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের আগস্টে ভারতের ঋণে ৬০০ বাস ও ৫০০ ট্রাক কেনার প্রকল্প দুটি অনুমোদন করা হয়। এগুলো কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে বাসের জন্য ৫৮০ কোটি ৮৭ লাখ এবং ট্রাকের জন্য ২১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বাস-ট্রাকের সাথে ১০ শতাংশ খুচরা যন্ত্রাংশও কেনা হবে। চলতি বছরের জুনে প্রকল্প দুটি শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে। সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে বাস ও ট্রাকগুলো কেনা হবে, যাতে শুধু ভারতের কোম্পানিগুলোই অংশগ্রহণ করতে পারবে। বাস কেনায় ভারত সরকার ঋণ দিবে ৪৩৪ কোটি ৩২ লাখ এবং ট্রাকের জন্য ১৫৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।
স¤প্রতি এলওসিতে বাস-ট্রাক কেনা প্রকল্প দুটির অগ্রগতি পর্যালোচনা প্রতিবেদন প্রণয়ন করেছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রকল্প দুটি অনুমোদন করা হয় ২০১৬ সালের আগস্টে। এরপর দরপত্র দলিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) মাধ্যমে ভারতের এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়। এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দরপত্র দলিলের টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনসহ টেন্ডার ডকুমেন্টসে পরিবর্তন করে ফেরত পাঠায় এক্সিম ব্যাংক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক্সিম ব্যাংকের কিছু শর্তের সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ একমত পোষণ করে। কিন্তু দেশের চাহিদা অনুযায়ী একনেকে টেন্ডার ডকুমেন্টসসহ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) অনুমোদিত হওয়ায় এটি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। তাছাড়া এক্সিম ব্যাংক টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনের পরিবর্তনের যে প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে, সে অনুযায়ী বাস-ট্রাক হবে নিম্নমানের। এজন্য একনেকে অনুমোদিত স্পেসিফিকেশন অপরিবর্তিত রেখে পুনরায় দরপত্র দলিল ও দরপত্র বিজ্ঞপ্তি এক্সিম ব্যাংকে পাঠানো হয়। গত বছর ২ ফেব্রæয়ারি ইআরডির মাধ্যমে এ তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও ভারতের এক্সিম ব্যাংকের উত্তর মেলেনি বলে জানান সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
সূত্র মতে, ভারত থেকে ৬০০ বাস কেনার প্রকল্পের আওতায় ৩০০ দ্বিতল বাস, ১০০ এসি দূরপাল্লার বাস, ১০০ এসি সিটি বাস ও ১০০ নন-এসি সিটি বাস কেনা হবে। এগুলোর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ভ্যাট ও কর ছাড়া যথাক্রমে ৭২ লাখ, ৭০ লাখ, ৬৯ লাখ ও ৪২ লাখ টাকা। আর ট্রাক কেনার প্রকল্পের আওতায় ১৫ টনের ৩৫০টি ও ১০ টনের ১৫০টি ট্রাক রয়েছে। এগুলোর প্রতিটির দাম ধরা হয়েছে ভ্যাট ও কর ছাড়া যথাক্রমে ৩০ লাখ ও ২৬ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বিআরটিসি বিভিন্ন ধরনের ৯৫৮টি বাস কিনে। নি¤œমানের হওয়ায় সেই সব বাস-ট্রাক খুবই দ্রæত বিকল হয়ে যায়। বর্তমানে বিআরটিসির বহরে ১৪শ’র বেশি বাস রয়েছে, যার অর্ধেকের বেশি বিকল হয়ে পড়ে আছে বিভিন্ন ডিপোতে। ভারতের ঋণের টাকায় নি¤œমানের আরও ৬শ বাস কেনা হলে বিকল বাসের বহর ক্রমেই বাড়তেই থাকবে বলে মনে করছেন বিআরটিসির কর্মকর্তারা। তাতে বিপাকে পড়বে বিআরটিসি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিআরটিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, জেনে শুনে ঋণের টাকায় নি¤œমানের বাস-ট্রাক কেনা ঠিক হবে না। এক সময় সেগুলো গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।