পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পঞ্চায়েত হাবিব: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রশাসন সাজানো শুরু করেছে সরকার। নির্বাচনকালীন সরকারের প্রশাসনে কিছুটা রদবদল করতে হলেও পছন্দ মতো ব্যক্তিরাই যাতে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকেন- এমন চিন্তা-ভাবনা থেকেই তা করা হচ্ছে। গত নির্বাচনের সময়ও প্রশাসন সাজানো হয়েছিল। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে ডিসি-এসপি এবং ইউএনওদের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করার দাবি করেছে প্রশাসন ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) মাঠ প্রশাসনের কাজ পর্যবেক্ষণের সময় পাচ্ছে। ইসি দেখবে তারা নিরপেক্ষ আচরণ করছে কিনা। যদি নিরপেক্ষ না মনে হয়, তবে সংসদ নির্বাচনের আগেও তারা পরিবর্তন করতে পারবে। সেই সঙ্গে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিতর্কিত ডিসি-এসপি এবং ইউএনওদের নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম তদারকি করতে বলা হয়েছে। প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকাল রয়েছে আর মাত্র দশ মাস। এ সময়ে সরকারকে নানা ধরনের চাপে ফেলার আশঙ্কা রয়েছে। একদিকে সরকারবিরোধীদের আন্দোলন, অন্যদিকে প্রশাসনের ভেতরের একটি অংশের নানা ধরনের ষড়যন্ত্র। বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্র যাতে সফল না হয়, সে জন্য সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল সচেতন। প্রশাসনের কয়েকটি পর্যায়ে রদবদলের এটিও একটি কারণ। এর মধ্যে ৪৫ জেলায় ডিসি এবং পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার ২৯ কর্মকর্তাকে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি-পদায়ন এবং ১৩০ ইউএনওকে পদায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিশনের মাঠপর্যায়ের ১০টি শীর্ষ পদে রদবদল করা হয়। সারা দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দফতরও হয়েছে পরিবর্তন। এছাড়া আরো বেশ কিছু ডিসি এসপি এবং ইউএনওকে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োজিত থাকেন জেলা প্রশাসকরাই। সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা থাকেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে। তবে কয়েকটি এলাকায় সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন অফিসারকেও সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়ার নজির রয়েছে। আর ভোটকে সামনে রেখেই জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের বদলি করা হচ্ছে। সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের ভোট প্রক্রিয়া থেকে বিরত রাখতে মাঠ প্রশাসনের কার্যক্রম তদারকি করতে হবে ইসিকে। ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসনে রদবদল শুরু হয়েছে। তবে এটা সরকারের রুটিন ওয়ার্ক হলেও ব্যাপক পরিবর্তন অনেকের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে গত রবিবার মাঠ প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল করা হয়। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহসহ ২২ জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) পরিবর্তন হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এক আদেশে ১৯ জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে নিয়োগ এবং তিন ডিসিকে অন্য জেলায় বদলি করে আদেশ জারি করে। এ নিয়ে গত সাত মাসে দেশের ৪৫ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে গত বছরের ২ মে ২৪ জন এবং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বলদি করা হয় ২২ জনকে। এরা হলেন, বগুড়া জেলা প্রশাসক আশরাফ উদ্দিনকে যশোরে, ফেনী জেলা প্রশাসক আমিন উল আহসানকে খুলনায়, লক্ষীপুরের জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান চৌধুরীকে চট্টগ্রামে, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নূরুল আমিনকে টাঙ্গাইলে, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদারকে নোয়াখালীতে এবং নড়াইলের জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরিফকে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক পদে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া খালেদ রহিমকে নীলফামারীতে, নাজমুস সাদাত সেলিমকে মানিকগঞ্জে, মনোজ কুমার রায়কে ফেনীতে, সাবিরুল ইসলামকে সুনামগঞ্জে, ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে গাজীপুরে, মাছুমুর রহমানকে পটুয়াখালীতে, শওকত আলীকে রাজবাড়ীতে, জিয়া উদ্দিন আহমেদকে চুয়াডাঙ্গায়, মোকাম্মেল হককে জয়পুরহাটে, জাকির হোসেনকে ঝিনাইদহে, ওয়াহিদুল ইসলামকে মাদারীপুরে, আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানকে কুড়িগ্রামে, গৌতম চন্দ্র পালকে গাইবান্ধায়, বেগম হুমায়রা বেগমকে লক্ষীপুরে, এমদাদুল হক চৌধুরীকে নড়াইলে, মোহাম্মদ আতিকুর রহমা কে মাগুরায়, নুরে আলম সিদ্দিকীকে বগুড়ায় এবং হামিদুল হককে ঝালকাঠিতে বদলি করা হয়।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, রংপুরসহ দেশের ২২ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে তিনজন ডিসিকে এক জেলা থেকে আরেক জেলায় বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদীর ডিসি সুভাস চন্দ্র বিশ্বাসকে ময়মনসিংহে, ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি আবদুল আওয়ালকে যশোরে এবং কুড়িগ্রামের ডিসি আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খানকে ঢাকার ডিসি করা হয়েছে। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম আবদুল কাদেরকে রাজশাহীর ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া এনামুল হাবীবকে রংপুরে, মাজেদুর রহমান খানকে চাঁদপুরে, আবুল ফজল মীরকে কুমিল্লায়, আসলাম হোসেনকে বান্দরবানে, মঈন উল ইসলামকে নেত্রকোনায়, মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেনকে সাতক্ষীরায়, কাজী আবু তাহেরকে শরীয়তপুরে, আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুরকে দিনাজপুরে, মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনকে চট্টগ্রামে, নুমেরী জামানকে সিলেটে, মো. আখতারুজ্জামানকে ঠাকুরগাঁওয়ের, এ কে এম মামুনুর রশিদকে রাঙামাটি, কামাল হোসেনকে কক্সবাজারে, সরোজ কুমার নাথকে ঝিনাইদহে, মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিককে ভোলায়, মোছা. সুলতানা পারভীনকে কুড়িগ্রামে, সৈয়দা ফারহানা কাউনাইনকে নরসিংদীতে এবং মাহমুদুল কবীর মুরাদকে হবিগঞ্জের ডিসি হিসাবে বদলি করা হয়েছে।
২৯ এসপি পদে রদবদল
পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার ২৯ কর্মকর্তাকে গত ২৫ ফেব্রæয়ারি দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলি-পদায়ন করা হয়েছে। এরা হলেন, শরিয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল্লাহ আল মামুনকে নরসংদী জেলায়, কিশোরগঞ্জের এসপি মো. আনোয়ার হোসেন খানকে পুলিশ অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি), গাইবান্ধার এসপি মো. মাশরুকুর রহমান খালেদকে কিশোরগঞ্জে, বান্দরবানের এসপি সঞ্জিত কুমার রায়কে টাঙ্গাইলে, ডিএমপির ডিসি মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনকে নড়াইলে, ডিএমপির ডিসি খান মুহাম্মদ রেজোয়ানকে মাগুরায়, ডিএমপির জাকির হোসেন মুজমদারকে বান্দরবানে, ডিএমপির রিফাত রহমান শামীমকে মানিকগঞ্জে, পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত) মো. আশরাফ আলী ভুঁঞাকে বগুড়ায়, ঢাকার এনটিএমসির এসপি আবদুল মান্নান মিয়াকে গাইবান্ধায় বদলি করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (বর্তমানে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত) মো. শহিদুল্লাহকে রাজশাহীর এসপি, রাজশাহীর এসপি মোয়াজ্জেম হোসেন ভূঁঞাকে বরিশাল মহানগর পুলিশের (বিএমপি) ডিসি, নীলফামারীর এসপি জাকির হোসেন খানকে ফরিদপুরে, সিলেট মহানগর পুলিশের (এসএমপি) ডিসি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহকে ঢাকার টিঅ্যান্ড আইএমএতে, চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশের এসপি মো. নজরুল ইসলামকে কুমিল্লার হাইওয়ে পুলিশে, রাঙামাটির এসপি সাঈদ তারিকুল হাসানকে পুলিশ অধিদপ্তরের এআইজি, ডিএমপির ডিসি মো. হাসানুজ্জামানকে পুলিশ অধিদপ্তরের এআইজি, ডিএমপির ডিসি আলমগীর কবিরকে রাঙ্গামাটিতে, পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদকে পুলিশ অধিদপ্তরের এআইজি, রাজশাহী পুলিশ একাডেমি সারদার এসপি মো. আবুল খায়েরকে ঢাকা পরিবহন সমম্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ট্রাফিক অ্যানফোর্সমেন্ট অফিসার হিসেবে বদলি করা হয়েছে। ঢাকা পরিবহন সমম্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) ট্রাফিক অ্যানফোর্সমেন্ট অফিসার মোহাম্মদ জাকারিয়াকে পুলিশের স্পেশাল আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নে (এসপিবিএন), পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলামকে পুলিশ অধিদপ্তরের এআইজি, পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ডিসি, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত এসপি আবদুল মোমেনকে শরিয়তপুরের এসপি, ডিএমপির ডিসি ওয়ালিদ হোসেনকে ঢাকার এন্টি টেরোরিজম ইউনিটে, টাঙ্গাইলের এসপি মো. মাহবুব আলমকে পুলিশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক, রাজবাড়ীর এসপি সালমা বেগমকে ডিএমপির ডিসি, ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আসমা সিদ্দিকা মিলিকে রাজবাড়ীর এসপি এবং ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনকে নীলফামারীর এসপি হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
এ ছাড়া গত বছরের জুলাইয়ে কমিশন সচিবালয়ের মাঠ পর্যায়ের ১০টি শীর্ষ পদে রদবদল আনা হয়। সারা দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার দফতরও হয়েছে পরিবর্তন। একই সঙ্গে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি সচিবালয়ের মাঠ কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে রদবদল করা হয়েছে। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর ১৫ দিন পার না হওয়া পর্যন্ত ডিসি, এসপি, ইউএনওসহ কিছু কর্মকর্তাকে ইসির সঙ্গে পরামর্শ না করে বদলি করা যাবে না। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলতি বছরের শেষে বা ২০১৯ সালের প্রথম দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তিনি বলেছেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদ ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি শেষ হবে। তাই ডিসেম্বরের শেষের দিকে অথবা ২০১৯ সালের প্রথম দিকে যে কোনো দিন একাদশ সংসদ নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হবে। এর অংশ হিসেবে আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জানা গেছে, মূলত ভবিষ্যৎ নির্বাচনী প্রশাসন সাজানোর ছক মহাজোট সরকার ২য় বার ক্ষমতায় এসেই শুরু করে। দায়িত্ব নেয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যে সরকারবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত ও সন্দেহভাজন বেশ কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়। যাদের আর পোস্টিং দেয়া হয়নি। কিছু অংশকে ডাম্পিং কিংবা হয়রানিমূলক পোস্টিং দিয়ে কাবু করা হয়। এছাড়া এ তালিকার বেশিরভাগ কর্মকর্তাকে দফায় দফায় পদোন্নতি না দিয়ে একেবারে পেছনের কাতারে বন্দী করে ফেলা হয়। পদোন্নতি ও ভালো পোস্টিং না পাওয়ায় প্রশাসনের মধ্যে গত ৯ বছরে তেমন কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারেননি বিএনপিপন্থী কর্মকর্তারা। আর যারা তদবির করে পোস্টিং নিতে পেরেছেন তারাও ছিলেন কোণঠাসা। সরকার জানে, যাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হচ্ছে সরকার পরিবর্তন হলে তারা ফের চাকরিতে ফিরে আসবেন। কিন্তু তা সত্তে¡ও এখন বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকার ক্ষমতা থেকে যাওয়ার আগে ২০ দলীয় জোটপন্থী হিসেবে চিহ্নিত কিংবা সন্দেহভাজন প্রথম সারির কাউকে চাকরিতে বহাল রাখতে রাজি নয়। বিশেষ করে যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছর হয়েছে তাদের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হবে। এমনকি সরকারের একটি মহল এ বয়সসীমা ২৫ থেকে ২০ বছরেও নামিয়ে আনতে আইন সংশোধন করার পক্ষে জোরাল অবস্থান নিয়েছেন। এর বাইরেও চিহ্নিত ও সন্দেহভাজন তালিকার যেসব কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বিদায় করা সম্ভব হবে না তাদের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে। উদ্দেশ্য, যাতে তাদের কাউকে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদায়ন না করা হয়। এখন যেসব যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হচ্ছে তাদের ব্যাচের জুনিয়ররা অনেক আগে থেকে সচিব পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর তারা চাকরিতে থাকলে অনেকে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে পোস্টিং পেয়ে যেতে পারেন। কেন না, ব্যাচের জুনিয়র কিংবা জুনিয়র ব্যাচের সচিবদের অধীনে এসব অতিরিক্ত সচিবদের পোস্টিং দেয়া সম্ভব হবে না। একইভাবে দীর্ঘদিন অন্যায়ভাবে ওএসডি থাকায় অনেক যুগ্ম-সচিব প্রশাসনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং পেয়ে যেতে পারেন। ফলে দৃশ্যত এসব কর্মকর্তাকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত চাকরির বাইরে রাখতে আগাম এ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে এ সরকারের আমলে সাড়ে তিনশত কর্মকর্তাকে অবসর দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ক্ষমতায় থাকার আগামী কয়েক মাসে পুরো প্যাকেজ বাস্তবায়ন করা হবে। অনেকে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে এখনও উপসচিব রয়ে গেছেন। ফলে শুধু অতিরিক্ত ও যুগ্ম সচিব নয়, শেষ মুহূর্তে বেশ কিছুসংখ্যক উপ-সচিবকেও বাড়ি পাঠানোর যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।
নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার বিষয়ে বিস্ময়কর কিছু তথ্য দিয়েছেন এর আগে জাতীয় নির্বাচনকালীন ডিসি, ইউএনও এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এমন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনকালীন নির্বাচন কমিশন যতই নিরপেক্ষ ও কঠোর হোক না কেন যেসব কর্মকর্তা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পদে দায়িত্ব পালন করবেন তারা সত্যিকার নিরপেক্ষ না হলে সুকৌশলে ও সুস্থভাবে নির্বাচনী ফলাফলে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। বিশেষ করে অনেক আগের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনে সিভিল ও পুলিশ প্রশাসন একযোগে কাজ করলে তা শতভাগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব। দেশের সব কটি আসনকে টার্গেট না করে সর্বোচ্চ ১০০ আসনকে টার্গেট করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট পদে পছন্দের কর্মকর্তা পদায়ন করা হয়। এখানে কর্মকর্তারা যে প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করবেন তার ভোট ব্যাংক সংশ্লিষ্ট ভোট কেন্দ্রগুলো মূলত টার্গেটের আওতায় আনা হবে। ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর যখন বিপুলসংখ্যক ভোটারের উপস্থিতি তৈরি হবে তখন কৃত্রিমভাবে তুচ্ছ ঘটনা সৃষ্টি করে পুলিশকে দিয়ে লাঠিচার্জ করা হবে। এতে করে ভীতি আতঙ্কে মহিলাসহ সাধারণ ভোটারদের অনেকে ভোট না দিয়েই চলে যাবেন। এ রকম আরও অনেক সূ² পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এতে এসব কেন্দ্রে যে প্রার্থীর বিপুল ভোটে পাস করার কথা ছিল তা আর হয় না। বিপরীতে যে প্রার্থীর পক্ষে প্রশাসন কাজ করবে তার ভোট ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে সব বিষয়ে ব্যাপক ছাড় দেয়া হবে। আর এ সূ² ভোট কারচুপির মোট হিসাবে দেখা যাবে যেখানে যার পাস করার যথেষ্ট সম্ভাবনা ছিল তিনি সেখানে পরাজিত হবেন। কর্মকর্তারা বলেন, সংসদীয় নির্বাচন ব্যবস্থায় কারচুপির এ গোপন ফর্মুলা অন্তত দুটি নির্বাচনে প্রয়োগ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও এ ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়। বাস্তবায়ন করতে হলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সিভিল প্রশাসনকে একযোগে কাজ করতে হবে। তবে ম্যাজিস্ট্রেটদের প্রভাব বেশি থাকে। সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষ এ ফর্মুলা বিশ্বাস না করলেও রাজনীতিবিদরা ঠিকই করেন। আর তাই ঘুরে ফিরে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলো যাওয়ার আগে নিজেদের মতো প্রশাসন সাজানোর কাজটি করে যেতে চান। নির্বাচনের সময় সিভিল প্রশাসনে ডিসি, ইউএনও ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। স্ট্রাইকিং ফোর্স ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বিচার বিভাগীয় পৃথকীকরণ হওয়ায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরাও এ দায়িত্ব পালন করবেন। ওই সময় ডিসি, এডিসি ও ইউএনও ছাড়াও জেলা প্রশাসনে কর্মরত সব সিনিয়র সহকারী সচিব নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা পান। এছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় ম্যাজিস্ট্রেট স্বল্প হওয়ায় সচিবালয় থেকে সিনিয়র সহকারী সচিবদের ম্যাজিস্ট্রিয়াল পাওয়ার দিয়ে ভোট কেন্দ্রে পাঠানো হয়। কিন্তু কাকে কোথায় দায়িত্ব দেয়া হবে তা নির্ভর করে ডিসির ওপর। এছাড়া প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে থাকেন ইউএনও। যাদের একটি বড় অংশ থাকেন শিক্ষক এবং তাদের অধিকাংশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। এ জন্য কাকে কোন কেন্দ্রের দায়িত্ব দেয়া হবে তার ওপরও সূ² ভোট কারচুপির অনেক কিছুই নির্ভর করে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকার এখন থেকেই প্রশাসন সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
জানা গেছে, ১০টি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কয়েকজন দক্ষ অতিরিক্ত সচিবকে পদোন্নতি দিয়ে তাদের পদে বসানো হতে পারে। অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিব পর্যায়ে আরও কয়েকজন দপ্তর-প্রধানকেও সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। ওইসব পদে আসবেন চৌকস কর্মকর্তারা, যারা সঠিক সময়ে সরকারের নির্দেশনা পালনে সক্ষম। একই সঙ্গে যারা তিন বছর ডিসি ও ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদের প্রত্যাহার করা হবে। তাদের স্থলে মেধাবী কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হবে। নির্বাচনের সময় ২০ ও ২১ ব্যাচের কর্মকর্তারাই ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে ইউএনও পদে ১৩০ জনকে বদলি করা হয়েছে তারা নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে। ২১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের ডিসি ফিটলিস্টের কাজও শিগগির শুরু হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোজাম্মেল হক খান ইনকিলাবকে বলেন, প্রশাসন সাজানোর কিছু নেই। কোনো উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রশাসন সাজানোর বিষয়টি সঠিক নয়। কারণ সব সময়েই মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তা নিয়োগের তালিকা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় তালিকা করা হয়েছে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সরকার ইচ্ছা করলে কর্মকর্তাদের বদলি করতে পারে। ইসিকে সেটা দেখাতে হবে এসব কর্মকর্তারা সরকারি দলের প্রভাব বিস্তার করছে কি না। তখন ভোটের তফসিলের পরও (ডিসি-এসপি) বদলি করতে পারে ইসি। তিনি বলেন, ভারতে ভোটের এক বছর আগেই প্রশাসনের কর্মকতাদের বদলি করা হয়।
সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খান ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রতিফলন ঘটে। আর এ নির্বাচন সম্পন্ন করেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তাদের দলমতের ঊর্ধ্বে থেকেই কাজ করতে হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।