Inqilab Logo

বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জবিতে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী পরিবহন সুবিধা বঞ্চিত

সান্ধ্যকালীন শিক্ষার্থীদের জন্য বাস বরাদ্দে ক্ষুব্ধ নিয়মিতরা

| প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নাইমুর রহমান নাবিল : দেশের একমাত্র অনাবাসিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তিযুদ্ধে চাহিদার শীর্ষে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালটি। অধ্যয়নরত প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য নেই পর্যাপ্ত পরিবহন সুবিধা। শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে মাত্র ১৬টি বাস। গড়ে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীই পরিবহন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শুধুমাত্র ১০ ভাগ শিক্ষার্থী পরিবহন সুবিধা পায়। পরিবহন সংকট সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্যত কোন উদ্যোগ নেয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। উল্টো শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাসগুলোকেই শিক্ষকদের কাজে ব্যবহার করছে বলে জানায় তারা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি ঠিক না, আগামী পনেরো দিনের মধ্যে নতুন তিনটি বাস শিক্ষার্থীর জন্য দেয়া হবে। এদিকে পরিবহন সঙ্কট নিরসন না করে সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধার আওতায় আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তর সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্যে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ১৬টি রুটে ২৭টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে শিক্ষকদের ১০টি বাসের মধ্যে ২টি নষ্ট। শিক্ষার্থীদের ১৬টি বাসের মধ্যে ৪টি একতলা বাস নিজস্ব মালিকানাধীন এবং ১২টি দোতলা বাস বিআরটিসির ভাড়া করা। এই ১৬টি বাসের ধারণক্ষমতা প্রায় ২ হাজার। আর বাকি হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জন্য কোনো পরিবহন ব্যবস্থা নেই। ফলে ধারনক্ষমতা ২ থেকে ৩ গুন শিক্ষার্থী বাসে ঝুঁিক নিয়ে যাতায়াত করছেন প্রতিনিয়ত। এর ফলে প্রায় সময় দুর্ঘটনায় কবলে পরে শিক্ষার্থীরা।
২০১৫ সালের ২৪শে নভেম্বর সাভার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা বংশী বাস থেকে পড়ে গিয়ে মাসুক এক শিক্ষার্থী মারা যান। অন্যদিকে নৃবিজ্ঞানের আতিকুর রহমান পাবলিক বাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার পথে বাস দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস মাত্র এক ট্রিপে চলাচল করায় শিক্ষার্থীদের একদিকে যেমন সময় নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের দুপুরে ক্লাস থাকলেও সকালে আসতে হচ্ছে আর সকালে ক্লাস শেষ করার পর বিকালে বাসের জন্য বসে থাকতে হচ্ছে। কোন কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বাস ধরতে না পারলে ড্রাবলট্রিপের ব্যবস্থা না থাকায় ক্লাস-পরীক্ষা মিস হচ্ছে। আর পাবলিক বাসে আসলে যানজটে ভোগান্তির পরিমাণ বেশি। ফলে শিক্ষার্থীদের ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট হচ্ছে। এদিকে খুব ভোরে বাস ধরতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের দুর্ঘটনায়ও পরতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞানে ছাত্র নাইম ইসলাম বাড়ি থেকে নারায়নগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরার জন্য ভোরে রওয়ানা হলে সোনারগাঁ এলাকার মদনপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত হন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষকদের একই বাস কয়েকট্রিপে যাতায়াত করলেও শিক্ষার্থীদের বাস বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ট্রিপ দিয়েই অলস সময় পার করে। তাদের দাবি শিক্ষার্থীদের এ বাস দিয়েই স্বল্প দূরত্ব হলেও একাধিক ট্রিপের ব্যবস্থা করা যাবে। এছাড়া মেয়েদের জন্য আলাদা বাসের ব্যবস্থা না থাকায় মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয় বাসে প্রায় সময় হয়রানির শিকার হন।
পরিবহন সংকট নিরসনে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের কাছে বার বার বাস বৃদ্ধির দাবি রেখে আসছে। কয়েকবার রাস্তায় নেমে আন্দোলনও করে তারা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলে ইউজিসি ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে বাস যুক্ত হলে তা শিক্ষার্থীদের পরিবহনে যুক্ত না করে শিক্ষকদের পরিবহনে যুক্ত করা হয়। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যার সমাধান না করে সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধায় এনেছে প্রশাসন। শিক্ষার্থীদের সংকট নিরসনের ব্যবস্থা না করে নতুন বাস শিক্ষকদের জন্য এবং ডাবল ট্রিপের ব্যবস্থা না করে সান্ধ্যকালীন কোর্সের শিক্ষার্থীদের পরিবহন সুবিধার আওতায় আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনকারীরা বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরিবহন সমস্যা একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নজর দিচ্ছে না। সরকার ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমুহ শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাস দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে বাস শিক্ষার্থীদের পরিবহনে যুক্ত না করে শিক্ষকদের পরিবহনে যুক্ত করছে।
শিক্ষকদের নতুন বাস:
ম্যাকসন্স স্পিনিং মিলস্ লিমিটেড পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষকদের একটি ত্রিশ আসন বিশিষ্ট বাস প্রদান করা হয়। গত বছর মেঘনা গ্রুপ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য দুটি বাস দেয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাস দুটি শিক্ষকদের পরিবহনে যুক্ত করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ইনকিলাবকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন তিনটি বাস কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছে। আগামী পনেরো দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ৫২ সিটের নতুন তিনটি বাস যুক্ত হবে পরিবহন পুলে। এতে করে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট অনেকটাই লাঘব হবে। এছাড়াও খুব দ্রুত আরো বাস কেনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিক্ষার্থী

১০ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ