Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানকে সকল রাজনৈতিক দলের আস্থাভাজন হতে হবে : ড. কামাল হোসেন

| প্রকাশের সময় : ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণই এদেশের মালিক। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র বেদখল হয়ে গেছে। জনগণ এখন পরিরবর্তন চায়। শিক্ষা,স্বাস্থ্য, প্রশাসনে যা চলছে-তা থেকে তারা মুক্তি চায়। তবে এ মুক্তির জন্য জনগণেরই ঐক্য দরকার। কোন রাজনৈতিক দলের ঐক্যের চেয়ে সর্বস্তরের জনগণের ঐক্য এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানকে সকল রাজনৈতিক দলের আস্থাভাজন হতে হবে।
গতকাল সোমবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে গণতন্ত্রের সংগ্রাম, রাষ্ট্রভাষার আন্দোলন ও আমাদের স্বাধীনতা শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন আরো বলেন, দেশে কোটি টাকা দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পথ বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, কোটি টাকার গণতন্ত্র জনগণ চায় না।

এর আগে ড. কামাল হোসেনের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণফোরাম নেতা আ ও ম শফিক উল্লাহ। এতে তিনি বলেন, দায়মুক্ত ব্যয়ের ক্ষমতাসহ নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি জাতীয় বাজেটের মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। মাঠ পর্যায় পর্যন্ত কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ ও নিযন্ত্রনের ক্ষমতা থাকতে হবে। নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের অবহেলা এবং আইন বিধি লংঘনজনিত অপরাধের জন্য শাস্তি প্রদানের ক্ষমতাসহ নির্বাহী বিভাগের প্রভাবমুক্ত নির্বাচনী কমিশন গঠন করতে হবে।
ড. কামাল বলেন, নির্বাচনে সকল দলের সুযোগের সমতা থাকতে হবে। একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তীব্র আকাঙ্খা জনমনে এখনও প্রত্যাশিত। আশা করি সরকার সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হবেন। পাশাপাশি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধেও চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক দল ও শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সমাজের গণতান্ত্রিক পরিবর্তনের জন্য সুনিদিষ্ট লক্ষ্য ও কর্মসূচিভিত্তিক জাতয়ি ঐক গড়ে তোলার আহŸান জানান তিনি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্রের অভাবে জনগণ এখনও মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার সমূহের জন্য আন্দোলন করে চলেছে। প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ তাদের সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে। ফলে অবাধ, সুষ্ঠু ও নির্বাচনের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ রাষ্ট্র ও সমাজের সকল স্তরে জনগণের পক্ষে জনগণের ক্ষমতা প্রয়োগ করবে এটাই বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক রাজনীতির মূল কথা।
এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট, বিকল্প ধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী জাতীয় ঐক্যের আহŸান জানিয়ে বলেন, সব ভোদাভেদ ভুলে ঐক্য করতে হবে। তিনি বলেন, দেশের এখন যে অবস্থা তাতে সব দলকে নিয়ে ঐক্য করতে হবে। কারো ব্যাপারে কোন ধরণের রির্জাভেশন থাকলে ঐক্য হবে না। সেধরনের ঐক্যে তিনি নেই বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন।
বি চৌধুরী বলেন, দেশে গণতন্ত্র এখন ক্ষতিকর জায়গায় চলে গেছে। যারা এখন সরকারে এটাকে দায়িত্ব না মনে করে ক্ষমতা পেয়েছে বলে মনে করে। এটা খুবই আপত্তিকর। আমরা আর একক ক্ষমতা চাই না, যারা বিরোধী দলকে দমন করবে, সমালোচনা সহ্য করবে না।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, দেশের পরিস্থিতি ক্রমেই ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে না দাড়ালে পরিণতি ভয়াবহ। দলমত নির্বিশেষে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির ঐক্যই পারে এ ধরণের পরিস্থিতি থেকে একটি জাতিকে রক্ষা করতে।
জাসদ সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, জনগণের বুকে লাথি মেরে গলা টিপে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা যায় না। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, এধরণের নিপীড়ণ নির্যাতনকে কারা বলবে যে দেশে গণতন্ত্র আছে। তিনি বলেন, রাষ্ট্র ক্ষমতা জনগণের কাছে নিয়ে আসতে প্রয়োজন আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেন, দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। তারা একবেলা মাটির থালায় খাবে তবু আত্মমার্যাদা নিয়ে বেঁেচ থাকতে চায়। তারা ভোটারবিহীন গণতন্ত্র চায় না। তিনি বলেন, দু’কোটি টাকার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলে যাওয়ার বিষয়টি আমার মন কেনো জানি সমর্থন দেয় না।
বাসদ সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, গণ ফোরাম নেতা এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ, ভাষাসৈনিক কর্ণেল ডা. আব্দুল লতিফ মল্লিক এই আলোচনায় অংশ নেন। সঞ্চালনা করেন গণফোরাম নেতা মোশতাক আহমদ।



 

Show all comments
  • Mohammed Shah Alam Khan ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:১৯ পিএম says : 0
    ইনকিলাব পত্রিকার সাংবাদিক যিনি এই অনুষ্ঠানের উপর সংবাদ করেছেন তাকে আমি ধন্যবাদ জানাই সুন্দর ভাবে দেশের বর্তমান নেতাদের কথা তুলে ধরার জন্য। আমি জানি আমার লিখা হুবাহু ছাপা হবে না কারন অনেক লিখা তারপরও লিখছি কারণ আমি এখানে যারা কথা বলেছেন তাদের প্রত্যেকের কথার জবাব দিতে চাই এবং আশাকরি আমার মন্তব্য ওনারাও পড়বেন এটাই নিয়ম। এখানে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণই এদেশের মালিক। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্র বেদখল হয়ে গেছে। জনগণ এখন পরিরবর্তন চায়। কথাটা তিনি কিভাবে বললেন এটাই প্রশ্ন কারন দেশ কিভাবে বেদখল হয়??? আর যদি তাই হয় মানে কেহ মালিক বনে যান তাহলে জনগণ চাইলেই কি তিনি মালিকানা ছাড়বেন?? যাইহোক ডঃ কামাল সংবিধান প্রনেতা হয়েও সংবিধান পরিপন্থী কথা অনেকবার বলেছেন তাই না?? আমরা ছোট বেলায় বাবার কাছ থেকে শুনেছি যিনি ছোট বেলা থেকেই সত্য বলেন আল্লাহ্‌ তার যেকোন কথাই সত্যে পরিণত করেন আবার এটাও বাবা বলেছেন যারা সত্যবাদী এবং সততার সাথে চলে তাদের উপদেশ সবাই শুনে। অন্যভাবে বলেছেন যারা মিথ্যা বলে তাদের কথা কখনো সঠিক হয় না আবার যারা মিথ্যা বলে বিপথে চলে তাদের উপদেশ ভাল হলেও কেহ শুনে না। তাহলে ডঃ কামাল সাহেবের অবস্থা কোনটা এটাই প্রশ্ন নয় কি??? শুধু কামাল সাহেব কেন এখানে যারা বলেছেন তাদের সবার ক্ষেত্রেই এই কথা গুলো প্রয্যজ কিনা এটাই প্রশ্ন নয় কি?? এনারা সবাই বহুদিন ধরে বলে আসছেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে রাজনৈতিক শক্তিশালী দল কিংবা জোটের দরকার তাহলেই দেশের মঙ্গল হবে। এটা খুবই সত্য কথা কিন্তু এটা হচ্ছে না কেন?? এ বিষয়ে বুদ্ধিজীবী কিংবা এসব বড় বড় নেতারা ভেবে দেখেছেন কি??? বাংলাদেশের জনগণই দুর্ভাগা এরা প্রকৃতই পিতৃহীন হয়েগেছে আগষ্ট ১৯৭৫ সালে এটাই মহা সত্য। জীতির জনকের মত মহান ব্যাক্তি বাংলায় আসেনি আসবেও না। এখন আমরা যদি ওনার ভাল দিক অনুসরণ করি এবং বাকিটা সংশোধন করে চলি তাহলে আবশ্যই দেশের মঙ্গল অবধারিত। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যেভাবে চলছে আমার মতে তিনি সঠিক রাস্তা দিয়েই হাটছেন এটাই সত্য। প্রথমেই আমাদেরকে আমাদের প্রধান শ্ত্রু পাকিস্তানের এজেন্ডা যাতে এদেশে আর না হয় সেটা বন্ধ করতে হবে তারপর স্বাভাবিক ভাবেই দেশের উন্নয়ন শুরু হয়ে যাবে এটাই মহা সত্য। জননেত্রী শেখ হাসিনা যা করছেন এটা করার কথা ছিল ’৭২ সালে সেটা জাতীর জনকের মহান ও উদারতার জন্য ব্যাঘাত ঘটেছিল তাই শেখ হাসিনা এবিষয়ে কোন উদারতা কিংবা ক্ষমার যায়গা রাখেন নি। আর আমরা এত সমস্যায় পড়েছি কারন ২১ বছরে পাকিস্তানিরা তাদের এজেন্ডা এখানে বাস্তবায়িত করেই গণতন্ত্র দিয়েছিল। ’৯১ এবং ২০০১ সালে আমরা সেই গণতন্ত্রের নমুনা দেখেছি তাই আমরা আর পাকিদের গণতন্ত্রে ফিরে যেতে চাইনা এরজন্য যত ত্যাগ করা দরকার জাতীকে করা উচিৎ অবশ্যই আমার মতে। আল্লাহ্‌ যেভাবে আমাদেরকে ’৭১ সালে হেফাজত করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী করে ঘরে ফিরিয়ে এনেছিলেন একই ভাবে এবারও বিজয়ী করবেন এটাই এই বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধার আল্লহর কাছে প্রার্থনা। আমীন
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ