Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যাংক খাতে অবহেলিত বাংলা

প্রকাশের সময় : ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

অর্থনৈতিক রিপোর্টার :  দেশের ব্যাংকিং খাতে মাতৃভাষা বাংলা চরমভাবে অবহেলিত। বাংলা আন্তর্জাতিক ভাষা হওয়া সত্তে¡ও ব্যাংক খাতে ইংরেজি ভাষার দাপট চলছে যুগের পর যুগ। নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকও ইংরেজির দাপট থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে ৪৮টি ব্যাংকই দেশি উদ্যোক্তাদের। এছাড়া আমানতকারীদের মধ্যে বাঙালি গ্রাহকের সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি। শুধু তাই নয়, যারা এই খাত থেকে ঋণ নিচ্ছেন, তারাও শতভাগ বাঙালি। অথচ ব্যাংক খাতের যাবতীয় দালিলিক কর্মকান্ড চলছে ইংরেজি ভাষায়। ব্যাংকের পরিষদে উপস্থাপন হচ্ছে ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন ডকুমেন্ট। কোটি কোটি গ্রাহককে বাংলার পরিবর্তে ইংরেজি কাগজে সই করতে হচ্ছে। তাদের লেনদেনও করতে হয় ইংরেজি ফরমে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি জরুরি হলেও দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ইংরেজি একেবারেই জরুরি নয়। তিনি বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ সব ধরনের লেনদেন, ডকুমেন্ট ও আদেশ-নির্দেশ বাংলা ভাষায় হওয়া উচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকে সীমিত আকারে বাংলা ভাষার ব্যবহার চললেও বেশিরভাগ ব্যাংকের কার্যক্রম চলছে ইংরেজিতে। বাংলাদেশ ব্যাংক এক্ষেত্রে কোনও ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বরং দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকটিতেও বাংলা ভাষা উপেক্ষিত রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সব বিভাগের নামই রাখা হয়েছে ইংরেজিতে। ব্যাংকটির প্রজ্ঞাপন জারি থেকে শুরু করে অধিকাংশ প্রতিবেদন ইংরেজিতে তৈরি করা হয়। ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয় ইংরেজিতেই।
অবশ্য গত বছর ব্যাংক খাতে বাংলার ব্যবহার বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু উদ্যোগ নিলেও বাস্তবে তা খুব বেশি কাজে আসেনি। গত বছরের ১ এপ্রিলের মধ্যে সব ব্যাংককে হিসাব খোলার অভিন্ন আবেদন ফরম ও গ্রাহক পরিচিতি সম্পর্কিত ফরম চালু করার নির্দেশ দিয়েছিল বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বিএফআইইউ’র নির্দেশ অনুযায়ী, হিসাব খোলার আবেদন ফরম ও গ্রাহক পরিচিতি বাংলা অথবা ইংরেজি অথবা উভয় ভাষায় মুদ্রণ করার কথা বলা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যাংক খাতে বাংলার ব্যবহার আরও বাড়ানো জরুরি। বিশেষ করে দেশের অভ্যন্তরীণ লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো ইচ্ছে করলে গ্রাহকদের সঙ্গে বাংলা ভাষায় করসপন্ডিং করতে পারে। তবে বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে ইংরেজিতেই করসপন্ডিং করতে হয়। ফলে এক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষাটাও গুরুত্বপূর্ণ।
অবশ্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, অগ্রণী, জনতাসহ কয়েকটি ব্যাংকের কার্যক্রম বাংলায় পরিচালিত হচ্ছে। তবে বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোর আবেদনপত্র ও বিভিন্ন দলিলে বাংলার অনুপস্থিতির কারণে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। যদিও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। জাতীয় সংসদে বাংলা ভাষা প্রচলন আইনও পাস হয়েছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে বাংলার প্রচলন না থাকার কারণে  সাধারণ মানুষকেও সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এ নিয়ে। কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে চাইলে তাকে কয়েকটি ইংরেজি ফরম দেওয়া হয়। স্বল্পশিক্ষিতদের পক্ষে এটা পূরণ করা সম্ভব নয়। এসব ফরমে ২০টিরও বেশি স্বাক্ষর দিতে হলেও সেখানে কী কী শর্ত লেখা থাকে, তা অনেকেই বুঝতে পারেন না।
জানা গেছে, দেশের ৫৭টি তফসিলভুক্ত ব্যাংকের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি ব্যাংকের হিসাব খোলার আবেদনপত্র ইংরেজিতে লেখা। ব্যাংক খাতে লেনদেনের অন্যতম ঋণপত্রের (এলসি) আবেদন, ঋণ বা বিনিয়োগ আবেদন, আমানত জমাপত্র বা ভাউচার, লকারে সম্পদ রাখার আবেদন ফরম, চেক বইয়ের জন্য আবেদনপত্র, চেক বই, টাকা স্থানাসন্তরপত্র, আরটিজিএস ফরম এবং বিভিন্ন স্কিমের আবেদনপত্রও ইংরেজিতে লেখা। ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটেরও একই অবস্থা। প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের ওয়েবসাইটে যাবতীয় তথ্য লেখা থাকে ইংরেজিতে। ব্যাংকের পরিচিতি, বিভিন্ন ঋণপণ্য ও আমানতের তথ্যও থাকে ইংরেজিতে। যদিও প্রতিবেশী দেশ ভারতে ব্যাংকগুলোতে প্রতিটি কাগজপত্র তিনটি ভাষায় লেখা হয়। ব্যাংকের শাখা যে রাজ্যে, সেই রাজ্যের নিজস্ব ভাষার পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা হিন্দি ও ইংরেজিতে লেখা থাকে সবকিছু।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ