Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিয়োগে জাতপাত বিতর্ক

| প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যের হাইকোর্টে জনস্বার্থে দায়ের করা একটি মামলার (পিআইএল) সূত্রে নতুন করে একটি স্পর্শকাতর বিতর্ক আবারও উসকে উঠেছে, যেখানে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জড়িত। প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে পিআইএল-এ টি দায়ের করেছে গুরগাঁওয়ের ১৯ বছর বয়সী কলেজছাত্র সৌরভ যাদব। এতে বলা হয়েছে, জাতের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যাদব বলেছে যে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করে আর্মি রিক্রুটমেন্ট অফিসের পরিচালক। নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য একটা বিজ্ঞাপন দেখেছে সে, যেখানে এই পদে আবেদনের জন্য জাত শিখ, হিন্দু জাত অথবা হিন্দু রাজপুত হওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগের জন্য সকল যোগ্যতাসম্পন্ন নাগরিকদের যে অধিকার দিয়েছে সংবিধান, এটা তার সম্পূর্ণ বিরোধী। ৮ মার্চ এই আবেদনের উপর শুনানি করবে আদালত। তবে এ ইস্যুতে আদালতে এর আগেও অভিযোগ উঠেছে। গত মাসেও এ ধরনের একটি আবেদন করা হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টে, আদালত সেটা খারিজ করে দেয়। সা¤প্রতিক আবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, শুধু এই তিন জাত থেকে প্রার্থীদের প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয়। এই পদ্ধতি জাতভেদভিত্তিক এবং বৈষম্যমূলক। প্রধান বিচারপতি দিপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ গত মাসের আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলেছিল, প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কোন পিআইএল দায়ের করা যায় না। কিন্তু আবেদনে যে বিষয়গুলো উত্থাপন করা হয়েছিল, আদালতের আদেশে সেই বিষয়গুলোর নিষ্পত্তি হয়নি। প্রেসিডেন্সিয়াল বডিগার্ড বাহিনী ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি এলিট বাহিনী, যাদের প্রধান কাজ হলো প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা দেয়া। বর্তমানে এই বাহিনীতে ২০০ জন কর্মকর্তা ও অশ্বারোহী রয়েছে। ১৯৭৩ সালে এই বাহিনী প্রথম গড়ে তোলা হয়। এর আগে ১৯৪৬ সালে মুঘলস টু গভর্নর-জেনারেলস বডিগার্ড নামে এ ধরনের বাহিনী ছিল। তবে সা¤প্রতিক বাহিনীর কাঠামোটি মূলত ব্রিটিশ আমলের অনুকরণে তৈরি। সবশেষ আবেদনটিতে আগের কয়েকটির মতোই অভিযোগ করা হয়েছে যে ভারতীয় সেনাবাহিনী রেজিমেন্টে শুধু তিনটি জাত থেকেই নিয়োগ দিচ্ছে। বৈষম্য নিরসনের জন্য এই আবেদনটি সাংবিধানিক কমিটিতে পাঠানো হয় যাতে করে ধর্ম, বর্ণ, জাত, লিঙ্গ বা জন্মস্থানের ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া বন্ধ হয়। তবে সেনাবাহিনী ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টে স্বীকার করে যে তারা এভাবে নিয়োগ দিয়ে থাকে। তবে তারা জানায়, কোন জাত বা ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্বের কারণে নয়, এভাবে নিয়োগ দেয়া হয় প্রয়োজনের খাতিরে। সামরিক ইতিহাসবিদরা বলেছেন, রেজিমেন্ট গঠনের শুরুর দিকে পূর্ব উত্তর প্রদেশের আওয়াধ অঞ্চলের মুসলিমদের বাহিনীতে নেয়া হয়েছিল। একই অঞ্চলের হিন্দুরা (রাজপুত ও ব্রাহ্মণ) এতে যোগ দেয় পরে। পরে, নিয়োগদানের এলাকা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে বদলে মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে স্থানান্তর করা হয়। ১৮৫৭ সালে বিদ্রোহের কারণে ব্রিটিশরা তাদের নিয়োগের কেন্দ্র ভারতের উত্তরাঞ্চলে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছিল। এর ধারাবাহিকতায়, শিখ ও পাঞ্জাবি মুসলিমদের তালিকাভুক্ত করা হয়। ব্রাহ্মণ ও রাজপুতদের নিয়োগ পরে এক সময় অজানা কারণে বন্ধ রাখা হয়েছিল। সবশেষ রেজিমেন্টটিতে সব বর্ণের মানুষ ছিল। তবে বর্তমানে শুধু হিন্দু জাত, শিখ জাত এবং রাজপুতদের সমান সংখ্যায় নেয়া হচ্ছে। সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ