Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পুঁজিবাজারে সরকারি ১৫ কোম্পানি জুনের মধ্যে শেয়ার ছাড়ার নির্দেশনা

দীর্ঘ আট বছর চেষ্টার ফসল

| প্রকাশের সময় : ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ভালো কোম্পানি বাজারের গভীরতা বাড়াবে-বিশেষজ্ঞদের অভিমত
হাসান সোহেল : নানা উদ্যোগের পরও পুঁজিবাজারে আসেনি সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন কোম্পানি। অভিযোগ রয়েছে তালিকা ভুক্তিতে ধীরগতির পিছনে অজানা শক্তি সবসময় কাজ করেছে। তবে লাল ফিতার দৌরাত্মকে দায়ী করেছেন অনেকেই। সরকারি মোট ২৫টি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল ২০১০ সালে। দীর্ঘ আট বছর প্রচেষ্টায় অবশেষে দেশের পুঁজিবাজারে আসছে সরকারি মালিকানাধীন ১৫ কোম্পানি। এবার লাভজনক করে এসব কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে আঁটঘাট বেঁধে নেমেছে সরকার। এক্ষেত্রে ভালো ও লাভজনক কোম্পানিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
কোম্পানিগুলোকে আগামী জুনের মধ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়তে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে দেওয়া হয়েছে একটি কর্মপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশনা। পাশাপাশি কোম্পানিগুলোর সম্পদ দ্রæত পুনঃমূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। গত রোববার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়। অর্থ বিভাগের অতিরিক্তি সচিব মো. এখলাছুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে সরকারি ১৫ কোম্পানির প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র মতে, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুসলিম চৌধুরীর নেতৃত্বে গত বছরের জুলাইয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয় সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়ার অগ্রগতি পর্যালোচনায়। প্রতি দুই মাস পর কমিটি বৈঠক করেছে। এই কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেনÑ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ ও বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বা আইসিবির প্রতিনিধি। সূত্র বলেছে, এ সব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা উন্নতির জন্য প্রয়োজনে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা বরাদ্দ দেওয়ার কথাও রয়েছে।
১৫ কোম্পানির মধ্যে বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের নয়টি, বিদ্যুৎ বিভাগের চারটি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের দুটি কোম্পানি নিয়ে আলোচনা হয়। এই কোম্পানিগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন লিক্যুইফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল), বাখরাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিডেট, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি, জালালাবাদ গ্যাস টিএন্ডডি সিস্টেম লিমিটেড, পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি, সিলেট গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি, বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি এবং রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলো হলÑপাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ এবং আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানির মধ্যে রয়েছে টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)।
পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর আবু আহমেদ বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার না ছাড়ার পেছনে আমলারাই বড় বাধা। বোর্ডে (পরিষদ) যারা আছেন, তারা নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা নেন। পুঁজিবাজারে এলে জবাবদিহি করতে হবে। ফলে তাদের সুযোগ-সুবিধা কমে যাবে। এ জন্য বিরোধীতা করা হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, শেয়ারবাজারে আসতে সরকারি কোম্পানিগুলোর সম্পদের পুনঃমূল্যায়ন করে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এরপর এগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে অবমুক্ত করতে হবে। এ জন্য দফায় দফায় সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আট বছর পেরিয়ে যাবার পরও বাজারে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ার ছাড়া যায়নি। শেয়ার না ছাড়ার পেছনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর অনিহা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে দায়ি করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, সরকারি মালিকানাধীন ভালো কোম্পানির শেয়ার বাজারের গভীরতা বাড়াবে। বিনিয়োগকারীরা উপকৃত হবেন। তবে লোকসানি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার না ছাড়ার পরামর্শ দেন তিনি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রস্তুতকৃত রোববারের বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছেÑ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলো মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। সেগুলোর সম্পদ পুনঃমূল্যায়নসহ মুনাফামুখী করার জন্য পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করে লাভজনক না হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে অগ্রসর হতে হবে। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কোম্পানিগুলো মুনাফাজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং পুঁজিবাজারে আসতে পারবে।
জানা গেছে, ২০১৭ সালে নেওয়া সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিলÑ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতাধীন নয়টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। তবে এ জন্য পরামর্শক নিয়োগ করে কোম্পানিগুলোকে পুনর্গঠন করতে হবে। পরামর্শকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবসায় পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করে কোম্পানিগুলোকে লাভজনক পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে। এসব কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যে শেষ করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়।
অন্যদিকে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পক্ষ থেকে শেয়ার না ছাড়ার পেছনে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, ‘এই প্রতিষ্ঠানের গড় মার্জিন কমানোর ফলে কোম্পানির নিট প্রফিটের ওপর ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছে। এক্ষেত্রে আরও ১০ শতাংশ শেয়ার (ইতোমধ্যে তিতাসের ১০ ভাগ শেয়ার বাজারে আছে) অফলোড করা হলে শেয়ারের বাজারমূল্য আরও হ্রাস পাবে। ফলে সর্বাধিক মূল্যপ্রাপ্তির সম্ভাবনা না থাকায় সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বর্তমান শেয়ারহোল্ডাররাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের ডেসকোর (ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি ) অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ শেয়ার অফলোডের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১০ সালে ডিসেম্বরে প্রথমবার নির্দেশনা দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোম্পানিটি শেয়ার অফলোড করতে না পারায় ২০১১ সালের ১৪ আগস্ট আবারও নির্দেশনা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে ২০১১ সালের ২১ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে (ডিএসই) চিঠি দেওয়া হলেও তার জবাব না পেয়ে পুনরায় এ ব্যাপারে একই বছর ২১ অক্টোবর চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু অতিরিক্ত শেয়ার ছাড়া আর সম্ভব হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুঁজিবাজার

২৪ নভেম্বর, ২০২২
১০ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ