পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ২০৪১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার জন্য যত শর্ত রয়েছে, তার সবই বাংলাদেশ পূর্ণ করেছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের অবস্থানটাকে উন্নত করতে পারব। সেই পর্যায়ে এসে গেছি। ইনশাআল্লাহ সেই ঘোষণা আপনারা শিগগিরই পাবেন। গতকাল বুধবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে এখন উন্নয়নের রোল মডেল। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা না হলে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হতো না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আমলেই দেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশের অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। আমরা দেশকে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব। তিনি আরো বলেন, আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। কিন্তু যে জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের সঙ্গে তো নিম্ন শব্দটি থাকতে পারে না। আমাদের এখন একটি সুযোগ এসে গেছে। যে কয়টি ক্যাটাগরিতে অর্জন থাকলে আমরা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেতে পারি, তার প্রতিটি শর্তই বাংলাদেশ এখন পূর্ণ করেছে। কাজেই আমাদের মর্যাদাটা আরো একধাপ ওপরে এগিয়ে নিতে পারব।
শ্রীলঙ্কায় এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেখানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের কিছু কিছু চিত্র দেখেছি। এ জন্য সত্যিই আমরা আনন্দিত। জাতিসংঘ সদস্যভুক্ত সব দেশে যেন এই দিবসটি পালিত হয়, আমরা এর জন্য তথ্য সব জায়গায় পাঠিয়েছি। আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকেও প্রতি বছর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া উচিত। তাহলে সবাই বিষয়টি জানতে পারবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই ভাষা আন্দোলনের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। তার সুচিন্তিত নির্দেশনা অনুসরণ করেই ভাষা আন্দোলন সফল হয়। আমরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পাই। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল বলেই পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়েছিল।
পাকিস্তান সরকারের সময় বাংলা ভাষা ব্যবহারে বিভিন্ন বিধিনিষেধের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলা ভাষা নিয়ে অনেক যন্ত্রণা আমাদের সইতে হয়েছে। ভুক্তভোগী হিসেবে আমাদের বিষয়টি মনে আছে। এক সময় আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হলো বাংলা অক্ষরে বাংলা ভাষা লেখা যাবে না। আরবি হরফে বাংলা লিখতে হবে, এই দাবির প্রতিবাদ করল বাঙালিরা। তারপর বলা হলো, রোমান হরফে বাংলা লিখতে হবে। এরও প্রতিবাদ হলো। তারপর এলো রবীন্দ্রনাথ পড়া যাবে না। তিনি হিন্দু। এ জন্য তার লেখা পড়লে আমাদের মুসলমানিত্ব নষ্ট হয়ে যাবে। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের লেখাগুলোকে মুসলমানি ভাষা দেয়া হবে। তার ‘মহাশ্মশান’ হয়ে গেল ‘গোরস্থান’। ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি’কে পরিবর্তন করা হলো। লেখা হলো, ‘ফজরে উঠিয়া আমি দেলে দেলে বলি’। আমাদের ছাত্রজীবনে কত রকমের যন্ত্রণা ভোগ করেছি, তা বুঝতে পারছেন!
রক্তের অক্ষরে ভাষার মর্যাদাকে রক্ষার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২১ ফেব্রæয়ারি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছি। এটা আমাদের জন্য বিরাট গর্বের। কাজেই এই ভাষার ব্যবহার ও চর্চা ভুলে গেলে চলবে না। বাঙালি হিসেবে সব ঐতিহ্য আমাদের ধারণ করতে হবে। চর্চা করতে হবে। তিনি বলেন, জাতির পিতা জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমি প্রতি বছর জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে থাকি।
একুশের পথ ধরে স্বাধীনতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জাতিকে ধ্বংস করার জন্য তার ভাষার ওপর, সংস্কৃতির ওপর আঘাত করা হয়। সেই ষড়যন্ত্রটা পাকিস্তানি শাসকেরা আমাদের ওপর করেছিল। এরই পথ ধরে আমরা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বদরবারে মর্যাদা পেয়েছি। রাষ্ট্র পেয়েছি। তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন না করলে পাকিস্তান শাসনতন্ত্রে বাংলা ভাষা মর্যাদা পেত না। তখন ২১ ফেব্রæয়ারি শহীদ দিবস ঘোষণা করে। শহীদ মিনার গঠন করে। এ জন্য বাজেটও করা হয়। তবে আইয়ুব খান সামরিক শাসন দেয়ার পর সেটা তখন এগোয়নি।
মিয়ানমারকে চাপ দিতে ভারতের সহযোগিতা কামনা
গত নির্বাচন বয়কট করা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল
দেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান এবং এখানে নির্বাচনে অংশ নেয়া বা না নেয়া দলের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। দলই সিদ্ধান্ত নেবে তারা নির্বাচন করবে কি করবে না। এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছুই নেই। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক দলের কোনো অভাব নেই। বিএনপির ২০ দলীয় জোট এবং আমাদের ১৪ দলীয় শরিক জোট রয়েছে। পাশাপাশি এরশাদেরও একটি জোট রয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিএনপি গত নির্বাচন বয়কট করেছিল। এটি তাদের রাজনৈতিক ভুল ছিল। ভবিষ্যতে বিএনপি কি করবে আমার জানা নেই। তারা দ্বিধাদ্ব›েদ্ব ভুগছে। আমি মনে করি তাদের অধিকাংশ নেতার মতই নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
গতকাল সন্ধ্যায় সরকারি বাসবভবন গণভবনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০১৮ উপলক্ষে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (আইসিএলডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ইন্ডিয়া মিডিয়া ডায়ালগ’-এ অংশগ্রহণকারী কলকাতা ও দিল্লির সাংবাদিকদের সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন, তিস্তার পানি বণ্টন, যোগাযোগ এবং বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের ভারতে স¤প্রচার ও রোহিঙ্গা ইস্যু সম্পর্কিত বিষয় উঠে আসে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারকে চাপ দিতে ভারতের সহযোগিতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাদের (রোহিঙ্গা) অবস্থান দীর্ঘায়িত হলে জঙ্গিবাদ সংক্রান্ত নিরাপত্তার ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে বাংলাদেশে। তিনি বলেন, আমরা চাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রæত প্রত্যাবাসনে ভারত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে প্রায় ১০ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারে আশ্রয় দিয়েছে। বর্ষার মওসুম ঘনিয়ে আসছে। এ সময় রোহিঙ্গাদের এভাবে রাখা বাংলাদেশ ও তাদের জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ছোট ছোট শিশুরা রয়েছে এবং প্রতিদিনই শিশুর জন্ম এই সংখ্যাকে আরো বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি সেখানে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ এবং যুবক রয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিএলডিএস চেয়ারম্যান মুহাম্মদ জমির, আইসিএলডিএস ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, উপদেষ্টা মোজাম্মেল বাবু, আহŸায়ক শ্যামল দত্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব এহসানুল করিম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।