Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ মুহূর্তের জন্য এড়ানো গেছে তুরস্ক-যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতের শঙ্কা

ম্যাকমাস্টার ও টিলারসনের আঙ্কারা সফর

প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১৪ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

আরব নিউজ : মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ. আর. ম্যাকমাস্টার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন গত সপ্তাহে তুরস্ক সফর করেন। তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কে উত্তেজনা হ্রাসের উদ্দেশ্যেই তারা তাদের মধ্যপ্রাচ্য সফরে তুরস্ককে অন্তর্ভুক্ত করেন। তুরস্ক ও যুক্তরাষ্টের মধ্যকার সম্পর্কে কয়েকটি জটিল বিষয়ের একটি হল সিরিয়ার আফরিনে তুরস্কের চলমান সামরিক অভিযানটি ইদলিবে সম্প্রসারিত করার আঙ্কারার ঘোষিত ইচ্ছা। সেখানে মার্কিন সৈন্যরা আছে। আমেরিকানরা কুর্দি পিপলস প্রটেকশন ইউনিটের (ওয়াইপিজি) যোদ্ধাদের অস্ত্র, গোলাবরুদ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করছে।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবারে তুরস্কে তার সফরের আগে টিলারসন বৈরুতে বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ওয়াইপিজিকে ভারি অস্ত্র দেয়নি, তাই ফিরিয়ে নেয়ার মত কিছু নেই। তার এ কথা এর আগে মার্কিন কর্মকর্তাদের দেয়া বক্তব্যের বিরোধী যারা বলেছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র ওয়াইপিজিকে দেয়া অস্ত্রের কঠোর হিসাব রাখছে। দায়েশ (ইসলামিক স্টেট-আইএস) পরাজিত হওয়ার পর তা ফেরত নেয়া হবে। তুরস্কে খুর অল্প লোকই মার্কিন প্রতিশ্রæতিকে বাস্তব সম্মত বলে মনে করেন, তা বলে এ রকম নির্লজ্জের মত তা অস্বীকার করা হবে বলে তারা ভাবেননি।
তুর্র্কি পররাষ্টমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু এ কথা বলে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেন যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা হবে গ্রহণ কর অথবা ত্যাগ কর ভিত্তিতে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়িয়ে গেছে এবং এ সফর কোনো সাফল্য আনেনি। তার পরিবর্তে দু’পক্ষই মধ্য-মার্চের আগে ফললাভ ভিত্তিক ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। রয়টারস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তুর্কি কর্মকর্তার বরাতে জানায়, আলোচনার সময় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান মানবিজ থেকে ওয়াইপিজিকে বহিষ্কার ও তাদের পরিবর্তে সেখানে তুর্কি ও মার্কিন সৈন্য মোতায়েনের প্রস্তাব করেন। টিলারসন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গুরুতে¦র সাথে তা বিবেচনা করবে।
তুরস্ক মনে করে যে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্বেগ গুরুত্বের সাথে বোঝার চেষ্টা করে না। আঙ্কারা আশা করে যে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনা মূল্যায়ন করবে এবং তুরস্কের দিককে অগ্রাধিকার দেবে যদিও সিরিয়া ও অন্য কয়েকটি বিষয়ে তুরস্কের ভ‚মিকা যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কার জানে। উত্তেজনার মূল কারণ বোঝার অভাব নয়, কারণ হচ্ছে দু’দেশের জাতীয় স্বার্থের মধ্যে অসামঞ্জস্য ও অগ্রাধিকারের পার্থক্য।
প্রথমত এটা সিরিয়ার উত্তরে কুর্দি অঞ্চলকে স্বায়ত্তশাসনের দিকে ঠেলে দেবে। মার্কিন সিনেটে পেশ করা সিআইএ, এফবিআই ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির (এনএসএ) রিপোর্টে এ অবস্থাটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এনএসএ পরিচালক ড্যান কোটস মার্কিন গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের বিশ^ব্যাপী হুমকি মূল্যায়ন উপস্থাপনায় বলেনঃ ‘পিকেকে-র সিরীয় মিলিশিয়া ওয়াইপিজি সম্ভবত সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে এক ধরনের স্বায়ত্তশাসন চাইবে।’
এ বাক্যটি তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সংগঠন পিকেকে ও ওয়াইপিজির মধ্যে সম্পর্কের স্বীকৃতি। ওয়াইপিজিকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে। অন্য কথায় মার্কিন প্রশাসন পিকেকে-ক একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে স্বীকার করে, কিন্তু তাদের সিরীয় মিলিশিয়াদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে। এ বাক্যটি মার্কিন মূল্যায়ন ও প্রত্যাশারও প্রতিফলন যে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে একটি স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি অঞ্চল প্রতিষ্ঠা এগিয়ে চলেছে। এটা তুরস্কের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক এক দুঃস্বপ্ন।
দ্বিতীয়ত, ইসরাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উত্তর সিরিয়ায় একটি কুর্দি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করার মার্কিন নীতির অঙ্ক হিসেবে কুর্দি স্বার্থকে তুলে ধরা।
এ আলোকে এটা স্বীকার করা অধিক বাস্তব সম্মত যে সিরীয় সঙ্কট বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্ক এক মত পোষণ করে না। দু’জন শীর্ষ মার্কিন ক‚টনীতিকের তুরস্ক সফরের আসল উদ্দেশ্য ছিল দুই ন্যাটো মিত্রের মধ্যে সম্পর্কের দূরত¦ কমিয়ে আনা। কিন্তু বৈঠকের পর দেয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নানা কথায় পূর্ণ এবং বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ বিষয়ে তাতে কমই বলা হয়েছে। এতে বিতর্কিত বিষয় নিরসনে কোনো নিশ্চয়তা নেই।
অধিকতর যুক্তিসঙ্গত হচ্ছে এ অসামঞ্জস্যতার ব্যাপারে অগ্রাধিকার প্রদান এবং দু’দেশের মধ্যে ব্যবধান কমিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত¦ দেয়া।
এ বিশ্লেষণে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের বিষয়টি আনা হয়নি যারা এ মুহূর্তে সিরিয়ায় সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশ। তুরস্ক আন্তরিকতার সাথেই রাশিয়ার সহযোগিতা করছে এবং তা আঙ্কারাকে মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতার ভিত্তিতে তার সিরিয়া নীতি সমন্বিত করার সুযোগ দেবে। তুরস্ক-আমেরিকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে এ মুহূর্তের একমাত্র স্বস্তি হচ্ছে যে একটি ট্রেন দুর্ঘটনা অথাৎ একটি সংঘাতের আশঙ্কা এড়ানো গেছে।



 

Show all comments
  • Osman ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:২৬ এএম says : 0
    please creat mobile app dark (night mood) system. I like international & religious page & editorial. I want just inqilab mobile app in google play store.
    Total Reply(0) Reply
  • শরীফ ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৪৮ এএম says : 0
    সংঘান কখনও কোন দেশের জন্য ভালো নয়।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ