Inqilab Logo

সোমবার ১১ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ কার্তিক ১৪৩১, ০৯ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একগুচ্ছ পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 

জাহানারা আরজু
কেনরে পালাস চর্যার হরিণী আমার

কেনরে তুই আবার ছুটে পালাস চর্যার হরিণী আমার?
যাক না ওরা সব যে যেখানে যাবার- তুই থাক বুকজুড়ে
এখানেই আমার।
জানি তোকে দিন-রাত ধাওয়া করে শিকারীর দল, বুকে
তোর লাগে শর, ঝরে অবিরল শোণিতের ধারা। তোর ওই
সজল কাজল দিঠির চেয়ে ওরা চায় রক্ত মাংস সবটাই!
কেন যে বিধাতা রূপের অনল আড়ালে রেখেছেন তোকে বৈরী করে
তোর ওই সুন্দর দেহটাকেÑ
তোর আপন তপ্ত মাংসের রসনার স্বাদে তোরে ঘিরে
লোলুপ জিহŸায় ধেয়ে আসে হিংস্র বন্য-বরাহ স্বাপদ,
আসে ব্যাধ মনুষ্যকুলের, স্থির লক্ষ্যে হানে শর,
থর থর কম্পনে ত্রস্তাভীতূ তুই পলাতকাÑ
কোথায় পালাবি বারবার? সোনার হরিণী তুই, বুকের চত্বর
জুড়ে থাক না আমার।
কোথায় রাখব তোকে আড়ালে আবডালে?
বিজন বন নেই, অরণ্যানী সব গেছে জ্বলে নগরের
লোভের লালসায়, শাণিত কুঠারের ঘায়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে ওঠে
তোর বাসভ‚মি-দিগন্ত জোড়া শুধু ধু-ধু বালু খরতাপ আজ,
পুষ্প-পত্রহীন নিষ্ফল বনরাজিÑ
কোথায় তোকে রাখি ঢেকে সোনার হরিণী আমার?
তোর ওই চোখ দু’টোয় শাওনের বাদল ঢল টলমল;
যেন উপচানো ব্যথার পেয়ালাÑ
দেখনা একবার সে বাদল হয় নাকি আগুনের জ্বালাÑ
দেখনা সাহস করে, কেনরে পালাস তুই চোখের আড়ালে
বারবার! কেনরে পালাস অধরা সোনার হরিণী আমার?
যতটুকু পারি, আমার এ বুক দিয়ে তোকে আমি আগলাবোই
প্রতিবার!

ব্যর্থ ফরাদ-মজনু
আরাফাত বিন আবি তাহির

প্রেমের ঘোরে ঘুম পালাল শান্তি হল হারাম
তুমি ঘুমাও নাক ডাকিয়ে করে আয়েশ-আরাম!
বেইজ্জতি করলে কতো, করার কিছু নাই
রাস্তা ঘাটে চলতে শত কানডলা কিল খাই!
ছিল আমার ভালোবাসা সোনার চেয়ে খাঁটি
ভান করিলা মান করিলা প্রেম করিলা মাটি!
সাক্ষী রেখে চন্দ্র তারা ছিলেম পিছে প্রেমের
প্রেমের বাড়ি যাবো বলে টিকিট কাটি ট্রেনের!
প্রেম পালাল ট্রেনও গেলো আমি হলাম বোকা-ই
অবুঝ প্রেমের মজনু বুঝি প্রেম আসলে ধোঁকা-ই!
ব্যর্থ ফরাদ-মজনু আমার উধাও সব উচ্ছ¡াস
প্রেম যমুনায় ভাঙ্গল তরী চোখে জলোচ্ছ¡াস!

জাহাঙ্গীর ফিরোজ
হেঁটে যাবো

পৃথিবীর সহোদর আমি পৃথিবী আমার
কেন এই পাসপোর্ট পাসপোর্ট কাঁটাতার কাঁটাতার খেলা
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো, পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো
উত্তর-দক্ষিণ থেকে পূর্ব-পশ্চিমে
ঈশান নৈর্ঋত থেকে বায়ু অগ্নিকোণে পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো
এশিয়ার কান্না শোনো, ক্ষুধা জর্জর আফ্রিকা,
অনাবাদি ভ‚মি নেই, কুমারী জমিন?
ব্রাজিলের কানাডার অস্ট্রেলিয়ার ঘাসবন
স্বপ্নের গমখেত হতে চেয়ে ডাকে আয় আয়
কর্ষণে কর্ষণে কাম দাও ঘাম নুন জলে
দু’হাতে ফসল নাও তুলে, পৃথিবী আমার আমি খুঁজে খুঁজে কুমারী জমিন নেবো, পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো
পৃথিবী আমার আমি প্রয়োজনে ছেড়ে দেবো বিশটি শহর
ব্রাজিলের বনে কানাডায়, মেরিকায়
অস্ট্রেলিয়ায় ইউরোপে রাশিয়ায়। পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো
কেন এই পাসপোর্ট পাসপোর্ট কাঁটাতার কাঁটাতার খেলা
পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো, পৃথিবী আমার আমি হেঁটে যাবো।


সায়ীদ আবুবকর
শিল্পী

আমার পিতার মতো যোদ্ধা আমি দেখেছি ক্বচিৎ,
কি-কষ্টে খেজুরগাছ কেটে কেটে নামাতেন রস;
নিয়ত অগ্রাহ্য করে পোষ-মাঘের কনকনে শীত
স্কন্ধে বাঁক নিয়ে ছুটতেন তিনি, যখন অলস
ঘুমাতো পৃথিবী লেপ গায়ে দিয়ে। অক্লান্ত পিতার
পায়ের আওয়াজে প্রত‚্যষে আমার ভেঙে যেত ঘুম;
দেখতাম চোখ খুলে, ভিজে গেছে পক্ব কেশ তাঁর
নরম শিশিরে, তখনও চারদিক নীরব নিঝুম
জ্বালাতেন রস তিনি উঠানের উন্মুক্ত চুলায়,
কড়াইয়ে ফুটতো রস, ফুটতে ফুটতে হয়ে যেত গুড়,
সে-গুড়ে শিল্পের মতো, পেতে রাখা কাপড়ে, ধুলায়,
পাটালি নির্মিত হতো সুকৌশলে; ভোরের রোদ্দুর
গায়ে মেখে তিনি উঠতেন তাঁর জীর্ণ সাইকেলে,
বেচতে সেই শিল্প হাটে; আমি কবি, সে-যোদ্ধারই ছেলে।

মিজানুর রহমান তোতা
ঘনীভুত শব্দস্রোত

বর্ণনা দৃশ্যে পাতা উল্টে আলোর বিচ্ছুরণ
নতুন সম্ভাবনা দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে
জটলা খুলে অন্ধকার কেটে ভোরে উত্তেজনা
বিবর্তনে ঘনীভুত শব্দস্রোত
বিবেচিত চেতনায় আচ্ছন্ন মানুষগুলো
অবেচতন চোখ বিষঘুমে অনন্তকালের
স্বপ্ন একদিন শোধ হবে রক্তের ঋণ
শিকড় কুরে খাবে মাটিতে।

মাহমুদ কামাল
মায়া-মরীচিকা

এই ঘর, ব্যবহার্য সকল তৈজস
রাগ-অনুরাগ
শ্বাস-প্রশ্বাস আর হাতের বন্ধন রক্তসূত্রÑ
শুদ্ধতার যতো অহংকার
চেনাপথÑ পরিচিত শব্দাবলী
উশ্কে ওঠা প্রিয় স্মৃতিগুলো
কিশোরীর বিস্ফারিত চোখ
মনে রাখা একটি বিকেল
অপরিচয়ের গøানি যাবতীয় ভুলগুলো
উশুম-কুসুম ভোর নাকি চোর শীত-রৌদ্র
গাছগুলো এমনকি নূয়ে পড়া গাছের পাতাও
প্রিয় মুখগুলো
এইসব এইসবÑএসবই তো মায়া
মায়া-মরীচিকা...

১৯.৯,১৭


রোকেয়া ইসলাম
স্বচ্ছ ভোরের রোদ

ঘন ঘোর অমবষ্যা-সয়লাব চারদিক
গলিত কালো লাভার পরিপূর্ন পান-পাত্র
আঁধার-উৎসবে মতোয়ারা বিবর্ণ আকাশ
উষ্ণীষ পাতাল . . .
মাতাল আয়োজনে উদ্দম অন্ধ সঙ্গী
কালো ধোয়ায় ঢাকে মায়াবী সপ্ত রঙধনু
স্বর্গীয় জলসাঘরে থমকে থাকে মৌতাত গজল রাত
একদিন এক নিস্ব: কবি এনে-দেবে অমা-রাত পেরিয়ে
আগামীর জন্য একমুঠো স্বচ্ছ ভোরের আলো

কামরুল আলম কিরণ
একুশের ছবি

কৃষ্ণচূড়ায় ফুটেছে ফুল বর্ণমালা শত,
পড়ছে মনে ফেব্রæয়ারি যেনো ছবির মতো
আসছে মিছিল সারি সারি আমতলা গেট থেকে,
‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ উঠছে সবাই হেঁকে
সামনে হাবিব সামাদ জাফর আর যে আছে মতিন,
বাংলা আমার মায়ের ভাষা শোধবো যে তা ঋণ
হঠাৎ করে ছুড়লো গুলি আমার ভাইয়ের বুকে,
রক্ত দিয়ে উর্দু ভাষা দিতে হবে রুখে।

ফাহিম ফিরোজ
বইন, তুমি অনেক বড় হবে

আজ উৎসবের কামড়ে টাঙ্গাইলগামী ট্রেনের ভেতর...

কামরায় উষ্ণ-জটলায় বুড়িমা আমার
ছোট নাতি নিয়ে চাপে-তাপে যেন গলে যায়
কাঁধে ঝুলানো একটি ব্যাগ, হাতে শ্যামল কবিতা
পাশেই নজরদারী। তাতে কিরে? মানবতাই এখানে বড়
তালপাখা কিনে আমি নিজেই ঘুরাতে থাকি সৃষ্ট
যন্ত্রার উপর। একবার তুলে দেই ওই হাতে
কেমন ঘুরাতে থাকে মাছের নি:শব্দতায়-
কি নাম তোমার?
-অবন্তী দাশ
পড়ছো কোথায়?
প্রধানমন্ত্রীর মেডিকেলে

বইন, অনেক বড় হবে তুমি। শেষে, ট্রেন থামলো অভিষ্ঠ্য নিশানায়
তার আগে আমার স্বাক্ষর যুক্ত পাখা, সেল নাম্বার দিয়ে বলি
মেঘে কোথাও আক্রান্ত হলে অন্তত একটি বার ...

৬/১১/২০১৭

বাদল বিহারী চক্রবর্তী
হেমন্ত দিনের মায়া

ছোট্ট স্টেশনটিতে নেমে
আমি হাঁটছিলাম, হেঁটে যাই নিরন্তর, যখন-
রাজধানী হতে ছেড়ে আসা দ্রæতযান ট্রেনটা
কাউরাইদের ছোট্ট রেলস্টেশন ছুঁয়ে যায়,
পলকেই নেমে গিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি যেন
আহ্ কী শান্তি! গায়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে
যখন দেখি, মুড়াধনঞ্জয় নদীর নিটোল জলে
ধীবরের জাল ফেলা উৎসুক সানন্দ চাহনি,
দিগন্তজুড়া সোনালী কার্পেট বিছানো
অনুপম অঙ্গশোভায় চিবুক চিক্ চিক্ করা
সরষে ফুলের আভরণে সজ্জিত সে সাড়ম্বর উপস্থিতি,
তখন ভুলে যাই, শারদ ল²ীর পায়ের ছাপ রেখে যাওয়া,
বিসর্জনের করুণ সুর সম্বলিত প্রস্থানী গীতি
শেকড়ের কোনো এক অলক্ষ্য অদম্য আহŸানে
সবকিছু ছেড়ে ছুটে আসতে ইচ্ছে করে
জীবনানন্দের সেই হুতোম পেঁচা, গাংশালিক আর
ধানসিঁড়ি বিধৌত রূপসী বাংলার-
কার্তিকের নবান্নের দেশের মতো, মধুময় তোমার-
অঘ্রাণী মায়ার এই হেমন্ত দিনে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন