Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতকে হটিয়ে শেয়ারবাজারের অংশীদার চীন বিনোয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি

| প্রকাশের সময় : ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশনের (বিএসইসি) চাপের মুখেও কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণে আগের সিদ্ধান্তেই অনড় থাকলো ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। প্রতিষ্ঠানটি সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনঝেন কনসোর্টিয়ামের কাছেই শেয়ার বিক্রির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের (বোর্ড) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ডিএসই’র সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।
একাধিক বিনিয়োগকারী ইনকিলাবকে ফোন করে চীনকে অংশিদার করায় স্বস্তি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এটি শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে বলে উল্লেখ করেন তারা। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন ডিএসই’র এ সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের জন্য ইতিবাচক হবে বলে উল্লেখ করেন। অংশিদারি নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডিএসই’র চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম সাংবাদিকদের বলেন, সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনঝেন স্টক এক্সচেঞ্জকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে পার্টনার করতে আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি। ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালককেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তার নেতৃত্ব এ প্রস্তাবনা বিএসইসিতে জমা দেয়া হবে। ‘যত দ্রæত সম্ভব আমরা বিএসইসিতে এ প্রস্তাবনা পাঠাব। এরপর নিয়ন্ত্রক সংস্থা তা আইনগতভাবে যাচাই করে তাদের সিদ্ধান্ত জানালে পরবর্তী করণীয় ঠিক হবে’- যোগ করেন তিনি। এ সময় পাশে উপস্থিত থাকা ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে এ এম মাজেদুর রহমান বলেন, আমরা ডিএসইর প্রস্তাবনা এ সপ্তাহের মধ্যে জমা দেব।
ডিএসইর পরিচালনা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর শেয়ার কিনতে দু’টি কনসোর্টিয়াম টেন্ডারে অংশ নেয়। এর মধ্যে একটি হলো সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনঝেন কনসোর্টিয়াম এবং অন্যটি হলো ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্টইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক।
সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনঝেন কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ জন্য কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ২২ টাকা। এর পাশাপাশি ডিএসইকে ৩৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনঝেন কনসোর্টিয়াম।
কৌশলগত বিনিয়োগকারী হওয়ার আগ্রহ দেখিয়ে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফন্ট ইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক কনসোর্টিয়াম ডিএসইর ২৫ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ শেয়ার কেনার প্রস্তাব দিয়েছে। এ জন্য কনসোর্টিয়ামটি ডিএসইর প্রতিটি শেয়ারের দাম দিতে চেয়েছে ১৫ টাকা। পাশাপাশি কারিগরি সহায়তাদের দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে কী পরিমাণ কারিগরি সহায়তা দেবে, সে সংক্রান্ত কোনো তথ্য টেন্ডারে উল্লেখ করেনি।
ডিএসইর কৌশলগত বিনিয়োগকারীর টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের দরপতন ওপেন করা হয় গত ৭ ফেব্রæয়ারি। টেন্ডারে অংশগ্রহণ করে শেয়ারের সর্বোচ্চ দর এবং কারিগরি সহায়তার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্রস্তাব দেয়ায় ডিএসই পরিষদ ওই দিনই চীনের দুই প্রতিষ্ঠান সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ ও সেনজেন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর ১০ ফেব্রæয়ারির বৈঠকে এ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ডিএসই’র পরিষদ।
তবে ডিএসইর এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বসে বিএসইসি। নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা অপর কনসোর্টিয়ামকে (ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ, ফ্রন্টইয়ার বাংলাদেশ ও নাসডাক) কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দেয়। এ কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে বলেও ডিএসই’র বোর্ডকে জানায়।
ডিএসই’র বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেয়ার এক কার্যদিবস পরই ১১ ফেব্রæয়ারি ডিএসইর চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবুল হাশেম ও এমডি কে এ এম মাজেদুর রহমানকে ডেকে নিয়ে যায় বিএসইসি। ওই বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান ও সিংহভাগ কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিএসইসি’র এক কমিশনার ডিএসইর এমডি ও চেয়ারম্যানকে ভারতের ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে চাপ দেন।
পরের দিন ১২ ফেব্রæয়ারি ডিএসইর আর একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিএসইসির চেয়ারম্যান। ওই বৈঠকে ডিএসই প্রতিনিধিদের বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়ামকে কৌশলগত বিনিয়োগকারী করতে রাজনৈতিক চাপ রয়েছে। এ সময় ডিএসই’র প্রতিনিধিরা বিএসইসি চেয়ারম্যানকে বলেন, এটি করা হলে ডিএসইর স্টেকহোল্ডার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্টেকহোল্ডারা ক্ষতিগ্রস্ত হন এমন কোনো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারবে না। এছাড়া কমিশন ১১ ফেব্রæয়ারির বৈঠকে যে আচরণ করেছে, ভবিষ্যতে এমন আচরণ করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে দূরত্ব আরো বাড়বে।
বিএসইসির এমন চাপের বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-সহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে উদ্বেগ ও নিন্দা জানানো হয়। তবে ১৭ ফেব্রæয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিএসইর ওপর চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করে বিএসইসি। এ পরিস্থিতিতেই গতকাল সোমবার বোর্ড সভা করে ১০ ফেব্রæয়ারির বৈঠকে নেয়া সিদ্ধান্তে অনড় থাকলো ডিএসই। এদিকে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ডিএসই’র কৌশলগত বিনিয়োগকারী নির্ধারণ নিয়ে নীতি নির্ধারকদের মধ্যে দ্বন্দের নেতিবাচক প্রভাব গতকাল সোমবারও অব্যাহত ছিল পুঁজিবাজারে। ইতোমধ্যে ডিএসই এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্য সূচকের বড় পতন হয়েছে। সেই সঙ্গে ডিএসইতে প্রতিদিনই কমেছে লেনদেনের পরিমাণ।
গতকাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। এ নিয়ে টানা তিন কার্যদিবস উভয় বাজরে দরপতন হলো। মূল্যসূচকের পাশাপাশি এদিন উভয় বাজারে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম। এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ১০৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১৭৬টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ৪৭টির দাম। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৯৪০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দু’টি মূল্যসূচকের মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১৮৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮৯ পয়েন্টে।
এদিন বাজারটিতে মোট ৩৭৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৪০ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার। সে হিসাবে গতকাল লেনদেন কমেছে ৬৩ কোটি ৭ লাখ টাকা।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএসসিএক্স ৩৫ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৮৩ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এদিন বাজারটিতে মোট ২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া মোট ২২৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫টির শেয়ারের দাম বেড়েছে। বিপরীতে কমেছে ১৩৬টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২২টির দাম।

 



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:৩৪ এএম says : 1
    জনগনের ভাষ্য, বেড়াতো কাটে ঘরের ইঁদুরে, আগে ইঁদুর তাড়ানোর ব্যবস্হা করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Hossain Rasel ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:১৩ পিএম says : 0
    দেশের বিনিয়োগকারীরা মনে হয় স্বস্তি পেলো ! অন্তত একটা সেক্টর হায়েনার হাত থেকে বাঁচলো !
    Total Reply(0) Reply
  • Hossin Shahadat ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:১৭ পিএম says : 0
    কেউই আমাদের বন্ধু নয় (যদি নিজেরাই নিজেদের শত্রু না হই) আবার কেউই আমাদের শত্রু নয়।( যদি নিজেরাই নিজেদেরকে আপন করে নিতে পারি)।
    Total Reply(0) Reply
  • Shomir Khan ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:১৮ পিএম says : 0
    খুশির খবর চীন আমাদের প্রকৃত বন্ধু
    Total Reply(0) Reply
  • Manik Biswas ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:১৯ পিএম says : 0
    Very good
    Total Reply(0) Reply
  • Jahangir Alam sikder ২৯ মার্চ, ২০১৮, ১২:১৮ পিএম says : 0
    I cordially thanks our Government for giving opportunity to China be a partner in our national economy by entering in DSC. CHINA IS OUR GREAT N GREAT FRIEND and well wisher. I wish Long live of Bangladesh -China Friendship and hope it will further strengthen in the years ahead! I hope other pending projects under CHINESE GOVERNMENT fund will be executed soon without any delay. Regards
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শেয়ারবাজার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ