পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : চতুর্থ প্রজন্মের (ফোরজি) মোবাইল ফোন সেবায় প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। গতকাল (সোমবার) থেকেই দেশে চালু হয়ে গেছে দ্রতগতির ইন্টারনেট সেবা ফোরজি। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে অপারেটরদের হাতে ফোরজি লাইসেন্স হস্তান্তর করে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার সবার হাতে তুলে লাইসেন্স তুলে দেন। সবার প্রথমে লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মোঃ গোলাম কুদ্দুসের হাতে। এরপর একে একে বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)এরিক অস, গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি , রবি সিইও মাহতাব উদ্দীন আহমেদের হাতে লাইসেন্স তুলে দেওয়া হয়। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর শিকদার, বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ, মোবাইল অপারেটরদের সংগঠন এমটবের সেক্রেটারি টিআইএম নূরুল কবির। তথ্য-প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের মতে, ফোরজি চালুর ফলে পাল্টে যাবে দেশের তথ্য প্রযুক্তির চিত্র। এর মাধ্যমে শুরু হল ইন্টারনেটের মহাসড়কে পথ চলা। ৭টা ৩২ মিনিটে লাইসেন্স পাওয়ার এক মিনিট পর অর্থ্যাৎ ৭টা ৩৩ মিনিট থেকেই ফোরজি সেবা চালু করছে গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। তবে টেলিটক এখনো তাদের সেবা চালু করতে পারেনি। কবে নাগাদ টেলিটকের সেবা চালু হবে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির এমডি কাজী মোঃ গোলাম ক্দ্দুুস বলেন, আমরা আজকে (গতকাল) লাইসেন্স হতে পেলাম খুব শীঘ্রই এই সেবা চালু করা হবে। এর আগে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) এ সেবার তরঙ্গ নিলামের কাজ শেষ করে। আন্তর্জাতিক মান অনুসারে ফোরজি ইন্টারনেটের গতি ১০ থেকে ১৫ এমবিপিএস (মেগাবাইটস পার সেকেন্ড)। ভারতে গতি ৭ এমবিপিএস। বাংলাদেশে এটি হ্যান্ডসেট ও স্থান বিবেচনায় ৬ থেকে ১০ এমবিপিএস হতে পারে। এ ক্ষেত্রে তা থ্রিজির চেয়ে তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি গতির হবে।
লাইসেন্স পাওয়ার পর গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল ফোলিও বলেন,৪জি সেবা চালু করার সময় গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি বলেন,গ্ধ আজ বাংলাদেশের সবার জন্য একটি গর্বের দিন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা গ্রাহকদের সেরা ৪জি সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং আমাদের ৪জি রোলআউট পরিকল্পনা তা নিশ্চিত করবে। এছাড়াও মাইকেল বাংলাদেশে ৪জি বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য কঠোর পরিশ্রম করায় বাংলাদেশ সরকার, টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানান।
বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস বলেন, এর মাধ্যেমে ডিজিটাল বাংলাদেশে গঠনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। ফোরজিতে আরো ডেটা গ্রাহদের দেওয়া যাবে তা হবে উচ্চগতির।
রবি আজিয়াটা লিমিটেড এর এমডি অ্যান্ড সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের সবাইকে গর্ব করা উচিত আমরা ফোরজি লঞ্চ করতে পারলাম। আমারা আশা করি এর মাধমে দেশের বড় পরিবর্তন করতে পারবো। হ্যান্ডসেট ডিউটি কমানো, ফোরজি ইকুপমেন্ট ডিউটি আরো সহজলভ্য এবং প্রত্যান্ত অঞ্চলে ফোরজি নিতে কোন ইনসেনটিভ ম্যাকানিজম গ্রহণ করা যায় কিনা তা পলিসি মেকাররা বিবেচনা করবেন বলে আশা করি । লাইসেন্স পাবার পর থেকে রবির ১৮৯ সাইট ফোরজি রান হচ্ছে বলেও জানান মাহতাব
বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ফোরজি ব্যবহার করলে বুঝতে পারবেন এর সুবিধা এবং থ্রিজি থেকে ইন্টারনেট গতি কত দ্রুততম হয়। বর্তমান বিশ্ব ভয়েস থেকে ডেটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তরুন প্রজন্ম বেশী সময় ডেটা ব্যবহারে খরচ করে। দেশে প্রায় ৮ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছে, দেশে ব্যান্ডইডথ ব্যবহার বেড়ে চলছে। ফোরজি হ্যান্ডস্টে মাত্র ১০ শতাংশ রয়েছে গ্রাহকের হাতে, সরকার এ সমস্যা সমাধানে সরকার কাজ করছে এবং দেশে ইতিমধ্যে হ্যান্ডসেট উৎপাদন শুরু করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মোবাইল ফোনকে কেন্দ্র করে সরকারের ডিজিটাল রুপান্তর হবে, সরকারের সেবা জনগনের কাছে পৌছানো হবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে, আগামীতে কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে মোবাইল ফোন। আগামীতে একমাত্র ডেটার উপর নির্ভর করে চ্রাপাশ গড়ে উঠবে এবং এটি জীবনের অংশ হয়ে যাচ্ছে। টুজি ও থ্রিজির যুগ থেকে ফোরজিতে পদার্পন খুবই প্রয়োজন ছিল। ফোরজি যেন জনগন উপকৃত হয় এর সেবার মান ধরে রাখতে হবে, আমরা সেবা সেভাবে দিতে পারছি না জনগন যে মূল্যে দিয়ে কেনে। জনগনের কাছে সেবা পৌছে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ।সেবার মানই প্রথম এজেন্ডা এবং অপারেটরদের অনুরোধ করবো সেবার মানটা ঠিক রাখবেন।
“ফোরজি যেতে সিম রিপ্লেসমেন্ট এ গ্রাহককে ১১০ টাকা দিতে হবে এটি যুক্তিযুক্ত নয়, এমন কিছু করবেন না যাতে বিটিআরসিকে বলতে হয় আপনারা নিয়ম ভঙ্গ করছেন” বলেন মন্ত্রী।
অপারেটর সূত্রে জানা যায়, ফোরজিতে ব্যয় অপরিবর্তিত থাকবে, তবে ব্যবহার বাড়বে। যদিও এখন পর্যন্ত ফোরজির ডেটা প্যাকেজ নিয়ে প্রস্তাব জমা পড়েনি। অপারেটর পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অপারেটরগুলো ডেটার দাম কোনো অবস্থাতেই ইউনিট প্রতি বাড়বে না। যে মূল্যে গ্রাহকরা এখন ইন্টারনেট পাচ্ছেন, ফোরজিতে মূল্যটা তেমনই থাকবে। বিষয়টি নিয়ে তারা বিস্তারিত কাজ করছেন। আর বিপণন কৌশল হিসেবে তারা এখন সেটি প্রকাশও করতে চান না। বড় তিন অপারেটরের শীর্ষ এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘমেয়াদে অবশ্যই ডেটার মূল্য কমবে। সেই কমাটা নির্ভর করছে গ্রাহক কতোটা ব্যবহার করছেন তার ওপর। তবে কম ভলিউমের প্যাকেজে দামের খুব একটা হেরফের হবে না। ওই কর্মকর্তা বলেন, অপারেটরগুলো চায় অল্পদিনের মেয়াদে গ্রাহক অনেক বেশি ইন্টারনেট ব্যবহার করুক। তাহলে তাদের পক্ষে দাম কমানো সহজ হবে। ফোরজি’র মাধ্যমে ইন্টারনেটের জন্য একটি চওড়া রাস্তা বানানো হয়েছে। এখন সেখানে যথেষ্ট গাড়ি না চললে টোল যেমন খুব একটা কমবে না, তেমনি গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি হলে আপনা-আপনি খরচ কমে আসবে। এটাও তাই, ভিন্ন অন্য কিছু নয়। এদিকে ডেটার মূল্য বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু না বললেও গ্রাহক বাড়াতে এবং গ্রাহককে ফোরজি’র প্রতি আকৃষ্ট করতে অপারেটরগুলো নানা ধরণের অফার দিচ্ছে। গ্রামীণফোন যেমন গ্রাহকের সিম ফোরজিতে রূপান্তরের জন্যে এক সপ্তাহ মেয়াদে দেড় জিবি ডেটা ফ্রি দিচ্ছে। তেমনি বাংলালিংক মাত্র ৯৯ টাকা বা তার বেশি মূল্যের ইন্টারনেট প্যাক কিনলেই ফোরজি সিম ফ্রি দিচ্ছে। রবিও ডেটা জমিয়ে রাখাসহ নানা ধরণের অফার গ্রাহকদের দিচ্ছে। আর সব অপারেটরই ফোরজি হ্যান্ডসেট বিপননের ক্ষেত্রে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই আমদানিকারকদের সঙ্গে কাজ করছে। গত রোববার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে দুটি ফোরজি হ্যান্ডসেটের উদ্বোধন করে গ্রামীণফোন। হ্যান্ডসেটের স্বল্পতাকেই প্রাথমিকভাবে ফোরজির জন্য প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছেন অপারেটররা। তাদের পক্ষ থেকে জানানো হয় বর্তমানে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ গ্রাহকের কাছে ফোরজি উপযোগী হ্যান্ডসেট রয়েছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, এদিকে ফোরজি লাইসেন্স পাওয়ার পর আজ আনুষ্ঠানিকভাবে ফোরজির উদ্বোধন করবে তিন অপারেটর। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ফোরজি উদ্বোধন করবে রবি আজিয়াটা, চট্টগ্রামের হোটেল রেডিশনে গ্রামীণফোন এবং খুলনায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবে বাংলালিংক।
সিম ফোরজি কিনা জানা যাবে যেভাবেঃ গ্রাহকের সিমটি ফোরজি কি না তা জানা যাবে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর দেওয়া নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে। গ্রামীণফোন ব্যবহারকারীরা *১২১*৩২৩২# ডায়াল করলে ফিরতি এসএমএসে পেয়ে যাবেন তার সিমটি ফোরজি কি না।রবির গ্রাহকরা *১২৩*৪৪# ডায়েল করলে এবং বাংলালিংকের গ্রাহকেরা মোবাইল ফোন থেকে ৪এ লিখে ৫০০০ নম্বরে এসএমএস পাঠালে ফিরতি ম্যাসেজে ফোরজি সিমের বিষয়ে তথ্য পাবেন।গ্রাহকের সিমটি যদি ফোরজি না হয়, তাহলে তা সংশ্লিষ্ট মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহকসেবা কেন্দ্র থেকে পরিবর্তন করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
গ্রামীণফোনের পক্ষ থেকে ববলা হয় গতকাল ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু এলাকায় ৪জি সেবা চালু করেছে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী ৪জি চালু করার প্রক্রিয়া শুরু হলো।
গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল ফোলি লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠানস্থল থেকেই ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ৪জি চালুর ঘোষণা দেন। অন্যদিকে প্রতিষ্ঠানটির ডেপুটি সিইও ইয়াসি আজমান জিপিহাউজে কর্মীদের নিয়ে ৪জি উদ্বোধন উদযাপন করেন।
বর্তমানে ঢাকার বসুন্ধরা, বারিধারা, এবং গুলশান এলাকাসহ চট্টগ্রামের দামপাড়া, খুলশী এবং নাসিরাবাদে ৪জি সেবা চালু হয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের আরো এলাকা ৪জি কাভারেজের আওতায় আসবে। বেশিরভাগ বিভাগীয় শহরে অচিরেই ৪জি চালু হবে। প্রতিষ্ঠানটি ৩জির ক্ষেত্রে যেমন করেছিল এবারো একই রকম দ্রæতগতিতে ৪জি বিস্তার করা হবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যেই সব জেলা শহরে ৪জি পৌছে যাবে।
গ্রামীণফোনের ডেপুটি সিইও ইয়াসির আজমান বলেন,গ্ধবাংলাদেশে ৪জি সেবা চালু করতে পেরে আনন্দিত। আমরা বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সাথে গ্রাহকদের কাছে সুলভে এই সেবা পৌছে দিতে কাজ করছি এবং গতকাল দুটি কো-ব্র্যান্ডেড ৪জি হ্যান্ডসেট চালু করার মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। গ্রাহকদেরসবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সাথে সংযুক্ত রাখতে এবং দেশের সেরা ৪জি সেবা দিতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।