Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ভয়ঙ্কর উঠতি সন্ত্রাসীরা নেপথ্যে ছাত্রলীগ-যুবলীগ

চট্টগ্রামে পুলিশের উপর গুলির ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেফতার

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে উঠতি সন্ত্রাসীরা। পাড়ায়-মহল্লায় তারা দলবেঁধে খুন, ছিনতাইসহ নানা অপকর্ম করছে। নেপথ্যে রয়েছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা। নিজেদের দল ভারী করতে এসব টিনএজারদের দলে ভিড়িয়ে নিচ্ছে তারা। তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে ভয়ঙ্কর অস্ত্র। তারুণ্যের উন্মাদনায় পড়ালেখা ছেড়ে বিপথগামী হচ্ছে মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও। সর্বশেষ নগরীর মুরাদপুরে চেকপোস্টে পুলিশের উপর গুলি করার ঘটনায় উঠতি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রæপ ধরা পড়ে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার ছয়জনই উঠতি সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে এসএসসি ও ‘ও’ লেভেল পরীক্ষার্থীও রয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে বড় ভাইদের নির্দেশে বড় ধরনের অপরাশেন চালাতেই ওইদিন তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে মুরাদপুর পার হয়ে যাচ্ছিল। বাধা পেয়েই তাদের একজন পুলিশকে গুলি করে বসে। এর আগে নগরীর জামাল খানে প্রকাশ্যে দিনের আলোতে কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র আদনানকে দিনদুপুরে কুপিয়ে হত্যা করে উঠতি সন্ত্রাসীদের একটি গ্রæপ। তাদের হাতে তখন একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে। ওই ঘটনায় গ্রেফতার হয় পাঁচজন, যারা নগরীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের দুই নেতার দ্ব›েদ্ব আদনানকে খুন করা হয়। তারও আগে নগরীর দক্ষিণ নালাপাড়ায় দলীয় কোন্দলের জেরে নগর ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক সুদীপ্ত বিশ্বাস খুনের ঘটনায়ও টিনএজার সন্ত্রাসীদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এভাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খুন, সন্ত্রাস ও আধিপত্য বিস্তারে উঠতি সন্ত্রাসীদের দাপট ক্রমেই বেড়ে চলেছে।
এদিকে পুলিশের চেকপোস্টে এএসআইকে গুলিবর্ষণের ঘটনায় গতকাল আরও তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের একজন সেদিন গুলি ছুঁড়েছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ নিয়ে শুক্রবার বিকেলে গুলিবর্ষণের ওই ঘটনায় মোট ছয়জনকে গ্রেফতার করা হলো। গতকাল গ্রেফতারকৃতরা হলো খোকন চৌধুরী (২৪), আয়মান জিহাদ (২২) ও মাহি (১৮)। খোকন ও আয়মনকে আনোয়ারা উপজেলা থেকে ও মাহিকে নগরীর রহমান নগর থেকে গ্রেফতার করা হয়। নগর পুলিশের উত্তর জোনের উপ-কমিশনার আবদুল ওয়ারিশ জানান, সেদিন তল্লাশি চালানোর আগে খোকনই এএসআই আব্দুল মালেককে লক্ষ করে গুলি চালিয়েছিল। খোকন যুবলীগ কর্মী ও নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় ছিনতাইকারী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের মামলা রয়েছে। মৃত দিলীপ চৌধুরীর পুত্র খোকন এসএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে।
গ্রেফতার আয়মান জিহাদ এডভোকেট নুরুল আমিনের পুত্র। ২০১৫ সালে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে সে। মাহি নগরীর নাসিরাবাদ এলাকার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম খানের পুত্র। সে এবার ও লেভেল পরীক্ষার্থী। গত শুক্রবার বিকেলে চেকপোস্টে তল্লাশিকালে পুলিশ তিনটি মোটরসাইকেলকে থামানোর নির্দেশ দেয়। তল্লাশি শুরুর আগেই চেকপোস্টে থাকা পাঁচলাইশ থানার এএসআই আব্দুল মালেককে লক্ষ্য করে গুলি করে দেয় এক যুবক। এসময় মোঃ হাকিম অভি (১৯) নামে একজনকে ধরে ফেলে চেকপোস্টে থাকা পুলিশ সদস্যরা। দুইটি মোটরসাইকেল ফেলে বাকিরা পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ১০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। তিনটি মোটরসাইকেলে করে ১০ জন ওই এলাকা অতিক্রম করছিল।
শুক্রবার রাতে নগরীর মুরাদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে জোবায়ের হোসেন প্রত্যয় (১৭) এবং মাঈনুদ্দিন ফরিদ ওরফে রাকিব (১৭) নামে আরও দুজনকে আটক করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেনের ছেলে প্রত্যয় এবার নগরীর কাজেম আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের বাড়ি নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকায়। বাসা মুরাদপুর জলিল বিল্ডিং গলিতে। রাকিবও নগরীর নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। তার বাবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভুক্ত ঠিকাদার আ ন ম ফরিদ উদ্দিন ফরহাদ। আনোয়ারা উপজেলার রায়পুরা দোভাষীবাজারে তাদের বাড়ি। বাসা নগরীর নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৫ নম্বর সড়কে। অভি হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট এলাকার সিএনজি অটোরিকশা চালক মোঃ ইউনূসের ছেলে। নগরীর চশমাহিলের মেয়র গলিতে তাদের বাসা। পরে রাতে মুরাদপুর এলাকা থেকে অন্য মোটর সাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে দুই রাউন্ড গুলির খোসা ও একটি তাজা গুলিও উদ্ধার করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণে জড়িতরা ওমরগণি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত। ছাত্রলীগের পরিচয়ে চলে, এমন একজনের নেতৃত্বে নগরীর সিআরবি এলাকায় প্রতিপক্ষের উপর হামলা করতে যাচ্ছিল মোট ১০ জন। যাবার পথে পুলিশের মুখোমুখি হলে যুবলীগ কর্মী খোকন গুলি ছুঁড়ে। এ ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেফতার করা হলেও পুলিশের উপর যে পিস্তল থেকে গুলি করা হয় সেটি এখনও উদ্ধার হয়নি। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে। নেপথ্যে কোন গডফাদার থাকলে তাদেরও ছাড়া হবে না। তবে এর আগে কলেজিয়েট স্কুল ছাত্র আদনান হত্যার ঘটনায় গ্রেফতারকৃতরা অস্ত্রদাতা এবং খুনের নির্দেশদাতারও নাম প্রকাশ করে। তবে তাদের কাউকে এখনও পুলিশ গ্রেফতার করেনি। ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় অস্ত্রদাতা ও নির্দেশদাতারাও ধরা পড়েনি।

 



 

Show all comments
  • Jashim Uddin ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:১১ পিএম says : 0
    সমাজে এরা নিয়ন্ত্রণহীন, কেইবা নিয়ন্ত্রণ করবে, নিয়ন্ত্রণ কারী বড় ভাইয়েরা এদের ছায়া দিয়ে রাখে, এদের রাজনৈতিক মুলেই সমস্যা,তাদের আগামী চলা এইভাবেই শুরু।
    Total Reply(0) Reply
  • Masud ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:১২ পিএম says : 0
    ছাত্রলীগ যুবলীগের ক্যারিয়ার এভাবেই শুরু হয়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গ্রেফতার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ