Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রত্যাবাসনে ৮ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা হস্তান্তর -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:৩৭ পিএম | আপডেট : ৯:৫৬ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

বিশেষ সংবাদদাতা : রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রাথমিক তালিকা মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছে বাংলাদেশ। তালিকায় বাংলাদেশে অবস্থানরত ১ হাজার ৬৭৩টি পরিবারের আট হাজার ৩২ জনের নাম রয়েছে। তালিকা পাওয়ার পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এটি যাছাই-বাছাই করবে। তারপর দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে। গতকাল শুক্রবার বিকালে সচিবালয়ে দেশ দুইটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব তথ্য তুলে ধরেন। এসময় মন্ত্রী আরো বলেন, সীমান্তের জিরো লাইনে যেসব রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন তাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে জেলা প্রশাসক পর্যায়ের একটি বৈঠক হবে। সেখানে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক অংশ নেবেন। সেই বৈঠকে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার পর রোহিঙ্গারা কোন ধরনের নিরাপত্তায় থাকবেন সেই বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন কিনা জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে আর ফেরত না আসে সেধরনের ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছি। মিয়ানমারের মন্ত্রী লে. জেনারেল চাও সোয়ে আমাদের জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য তারা তিনটি ধাপ নির্ধারণ করেছেন। ধাপগুলো হলো- তাদের ফিরিয়ে নেয়া, পুর্নবাসনের ব্যবস্থা করা এবং পরবর্তীতে যাতে রোহিঙ্গারা জীবন ধারণ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা। কবে নাগাদ প্রত্যাবাসন শুরু হবে জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো ডেডলাইন ঠিক হয়নি। এদিকে বৈঠকে ইয়াবা উৎপাদন ও পাচারের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, সীমান্তে মিয়ানমারের অংশে ৪৯টি ইয়াবা কারখানা সনাক্ত করেছি। সে তথ্যগুলো মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করেছি এবং কারখানাগুলো ভেঙ্গে দিতে দাবি জানিয়েছি। জবাবে মিয়ানমার বলেছে, আমাদের প্রস্তাবে তারা রাজি আছে। এক্ষেত্রে তারা আমাদেরও সহযোগিতা চেয়েছে। একই সঙ্গে বৈঠকে বর্ডার কিলিং নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বর্ডার কিলিং বন্ধের জোর দাবি জানানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। আসাদুজ্জামান খান বলেন, অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। তারাও পজেটিভ মুড নিয়ে এসেছিল। আমরা ১১ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গার লিস্ট করেছি, সেখাবে তারা (মিয়ানমার) বলেছিলেন ফ্যামিলি ওয়াইজ লিস্ট দিতে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাতিসংঘের ভাষণে প্রস্তাবকৃত ৫ দফা ও কফি আনানের রিপোর্টসহ আরো ৫ দফাসহ মোট ১০টি দফা নিয়ে দ্বিপাক্ষীয় এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ের নেতৃত্বে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে ১৮ জন ও মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলে ১৫ জন সদস্য অংশ নেন। মিয়ানমারের সীমান্তে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর চেকপোস্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বছরের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অভিযান চালায় দেশটির সেনাবাহিনী। তখন থেকে রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে রোহিঙ্গাদের। তাদের সবাইকে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধনের আওতায় আনছে বাংলাদেশ সরকার। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা মোট ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২৩৬। উল্লেখ গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে যায়। সচিবালয়ে তাদের লালগালিচা ও গার্ড অব অনার সংবর্ধনা দেয়া হয়। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে ছিলেন। বৈঠকে বাংলাদেশের ১৭ সদস্য এবং মিয়ানমারের ১৪ সদস্য অংশ নিয়েছে। মাগরিবের নামাজের আগ দিয়ে বৈঠক শেষ হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ