Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

লক্ষ কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে চলে গেল; তার কী হয়েছে?

সরকারের প্রতি মাহমুদুর রহমান মান্না

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অথচ আড়াই কোটি টাকার দুর্নীতিতে হুলস্থুল
স্টাফ রিপোর্টার : জেলে যেতেই হবে জেনে রাজনৈতিক নেতৃত্বে উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের নেতৃত্ব ঠিক করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সরকারের উদ্দেশে মান্না বলেন, খালেদা জিয়ার আড়াই কোটি টাকার বিচার করছেন। এবার বিদেশে ছয় লাখ কোটি টাকা পাচারকারীদের বিচারও করেন। আড়াই কোটি টাকার দুর্নীতি কি হুলস্থুল ঘটিয়ে দিলো। অথচ লক্ষ কোটি টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চলে গেল। তার কি হয়েছে?
গতকাল শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে নাগরিক ছাত্র ঐক্য আয়োজিত ‘প্রশ্নপত্র ফাঁস, শিক্ষা এবং শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান সরকারের সময়ে টাকা পাচার হচ্ছে উল্লেখ করে মান্না বলেন, এক বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা যদি পাচার হয়, সবমিলিয়ে ছয় লাখ কোটি টাকার উপর পাচার করা হয়েছে। সেই জন্যই অর্থমন্ত্রীর কাছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কোনো কিছুই মনে হয় না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক আগেই সংসদে বলেছিলেন- কারা কারা বিদেশে কি কি পাচার করছে, সেই খবর আমার কাছে আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারো নামে কোনো মামলা হতে দেখেনি।
জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের সমলোচনা করে মান্না বলেন, তিনি বলেছিলেন- যদি সঠিকভাবে খোঁজ নেয়া যায়, দেখা যাবে অর্ধেক ব্যাংক দেউলিয়া। কিন্তু আজকে দেখা যাচ্ছে বারকাত নিজেই দেউলিয়া। কথায় আছে, চোরের মায়ের বড় গলা।
মান্না আরও বলেন, বিএনপিতে গণতন্ত্রের চর্চা নেই বলেই উত্তারাধিকার হিসেবে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। উত্তরাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ডাকসুর নির্বাচন দেয়নি এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমাকে অনেকেই বলে এরশাদ তার সময়ে দুইবার ডাকসুর নির্বাচন দিতে পারলো। অথচ আওয়ামী লীগ, বিএনপি এতোবার ক্ষমতায় থেকেও কেন নির্বাচন দিতে পারলো না। তারা নির্বচন দেয়নি অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। অধিকার প্রতিষ্ঠা মানে বংশ পরম্পরাই তারা দেশ চালাবে। বেগম জিয়ার প্রতি আমার যথেষ্ট সম্মান আছে। উনি এতো বড় নেত্রী, তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। দুই নেত্রীর সন্তান ছোট ছিল। এরা বড় হয়ে নেতৃত্বে আসবে, তারা নতুন যুবনেতা কেন হবে। অতএব, নির্বাচন হয়নি। দেখেন এতো বড় ঘটনা জেলেই তো যেতে হচ্ছে, তারপরও দলের নেতৃত্ব ঠিক করে গেছেন। সেই নেতৃত্ব হচ্ছে উত্তরাধিকার, বলেন ডাকসুর সাবেক এই ভিপি।
তিনি বলেন, একটা মামলা নিয়ে এমন ঘটনা আমার জীবনেও দেখিনি। অনেক বড় বড় মামলার ঘটনাও দেখেছি। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার কাগজপত্র ছাত্ররা ছিনতাই করে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা আপনারা জানেন। কিন্তু গতকাল অবিস্মরণীয় একটি ঘটনা ঘটলো ঢাকায়। একটি অঘোষিত সেমি কারফিউ টাইপের। এমনিতেই কয়েকদিন ধরে সরকারি দলের বিভিন্ন কথা-বার্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কথা-বার্তা মানুষের মধ্যে শঙ্কা সৃষ্টি করেছিল। আমাকে কেউ কেউ বলেছেন পাকিস্তান আমলে ঢাকা যেমন ছিল, গতকাল ঢাকা তেমন ছিল।
আওয়ামী লীগের সাবেক এই সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, নিম্ন আদালতের ওপর আস্থা রাখা যায় না। নিম্ন আদালতের বিষয়ে কথা-বার্তা বলেছিলেন সিনহা, তাকে চলে যেতে হয়েছে। তারপর একজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি থাকতে পারলেন, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ হতে পারলেন না কেন?
সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে নাগরিক ঐক্যর আহŸায়ক বলেন, সবার অংশগ্রহণে নির্বাচনের দাবি যেন মানা হয়। এই দাবির পথে ধিরে ধিরে দেয়াল উঠে যাচ্ছে। দেয়ালটা যেন সরে না যায়। নতুন করে কোন দেয়াল যেন না তোলা হয়। যদি এই দেশে আবারও ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচনের চেষ্টা করেন, তাহলে বোঝা যাবে বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে যে কাটা ছিল, সেই কাটা আরও গভীরভাবে পুতে দেয়া হলো। যদি পরিস্থিতি সেই দিকেই যায় তার জন্য সরকারই দায়ী থাকবে।
মান্না বলেন, বন, জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আপনি চাঁদ পর্যান্ত গেছেন এটাই শিক্ষা। মানুষ বন্য প্রাণী থেকে আলাদা হয়েছে তার মস্তিক ও বিবেক আছে এই কারণে। এখন বিবেক বাক্সের মধ্যে রাখো। বিবেক-টিবেক দিয়ে কিছু হয় না। বিবেকের কথা তুললে আর রাজনীতি করা যাবে না। আর শিক্ষা ওটা সবাই নিজেরা দখল করে ফেলো। সার্টিফিকেট বিক্রি হয়। সার্টিফিকেট বাণিজ্য চলে রীতিমতো। আর ওই কারণে দেখা যায় ডিগ্রীপ্রাপ্ত লোকজন টেলিভিশনের সামনে কথা বলতে পারে না। ইন্টারভিউতে যখন আসেন তখন উত্তর দিতে পারে না।
মৎসকন্যার মতো সংসদে একটা বিরোধীদল সংসদে আছে উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, যে বিরোধীদল তার অর্ধেক সরকারের মধ্যে আছে। মৎস্যকন্যার অর্ধেক মাছের মতো, অর্ধেক মানুষের মতো। এই রকম একটা বিরোধীদল। তারও এক নেতা শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। আমি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে ভালো করে চিনি। তিনি এখনো একজন ভালো মানুষ। এখনো পর্যন্ত তার নামে বড় কোন ঘুষ, দুর্নীতির কথা আমি শুনিনি।
প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলে মান্না বলেন, দুর্নীতিবাজদের কারণে যখন শেয়ার কেলেঙ্কারী হয়েছিল, তখন অর্থমন্ত্রী বলেছিলেন আমাদের হাত অতো শক্তিশালী নয়, ওদের ধরতে পারবো। অর্থমন্ত্রীর হাতের পরেও যদি শক্তিশালী থাকেন তারা কারা। ওরাই কি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মধ্যেও আছে। ব্যাংক সেক্টর শেষ হয়ে গেছে। অথচ দেশে উন্নয়নের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।
মান্না বলেন, সেদিন যখন ভিসি ঘেরাও হলেন, পিছনের দরজা দিয়ে না কি পালিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন ছাত্ররা গিয়ে ওনাকে ধরেছেন স্যার কথা শুনে যেতে হবে। উনি তখন ফোন করেছেন ছাত্রলীগকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যখন গুন্ডামি করার জন্য ছাত্রলীগকে ফোন করে, তখন বাকি ছাত্রদের কি শিক্ষা দিবেন।
অনুষ্ঠানের নাগরিক ঐক্যের নেতাদের পাশাপাশি বক্তব্য দেন জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন।



 

Show all comments
  • রফিক ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:৩৮ এএম says : 0
    ওসব কথা বলে লজ্জা দিবেন না !
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আব্দুল গাফফার ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:২৩ এএম says : 0
    আপনি বলছেন, “ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা যদি পাচার হয়, সবমিলিয়ে ছয় লাখ কোটি টাকার উপর পাচার করা হয়েছে। সেই জন্যই অর্থমন্ত্রীর কাছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কোনো কিছুই মনে হয় না। “ কিন্তু মামলা তো হয়নি, আমাদের দেশের এসব বিষয় দেখাশুনার জন্য যাঁরা আছেন তারা এ পর্যন্ত ধরেন নি, না ধরলে বিচার হবে কিভাবে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ