Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিততে হলে বাংলাদেশের চাই রেকর্ড

মুস্তাফিজ দ্যুতির পরও লঙ্কানদের দিন

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : শেষ সেশনে আগুন ঝরালেন মুস্তাফিজুর রহমান। উইকেট পেয়েছেন ৩টি, পেতে পারতেন আরও বেশি। তার বলে ভড়কে যাওয়া ব্যাটসম্যানরা আউট হতে হতেও বেঁচেছেন বার কয়েক, ক্যাচ পড়েছে ¯িøপে। মুস্তাফিজের তেতে উঠার দিনে টার্নিং পিচে অনুমিত সঙ্গত এসেছে স্পিনারদের কাছ থেকেও। তবু স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় দুই দিন শেষেই ম্যাচে পুরো নিয়ন্ত্রণ শ্রীলঙ্কার।
গতকাল ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ব্যাট করতে নেমেছিল বাংলাদেশ। টাইগাররা গুটিয়ে যাওয়ার পর দিনশেষে লঙ্কানরাও হারিয়ে ফেলেছে ৮ উইকেট। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের পিচে দুই দিনেই পড়ল ২৮ উইকেট। হাতে দুই উইকেট রেখে ২০০ রান লঙ্কানদের, বাংলাদেশ থেকে তারা এগিয়ে ৩১২ রানে। মিরপুরে চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ২০৯ রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড আছে। এই ম্যাচের ফল নিজেদের পক্ষে আনতে রেকর্ড গড়তে হবে বাংলাদেশকে। ক্রিকেটীয় বিচারে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্যের পাহাড়টা ধীরে ধীরে যে বড় হচেছ আরেও।
দিনের শুরুর গল্পটা বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয় দিয়ে। ১০৭ থেকে ১১০, এই ৩ রানের মধ্যে পড়েছে শেষ ৫ উইকেট। উইকেট ব্যাটিংয়ের চ্যালেঞ্জিং বটে তবে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের হতশ্রী দশায় উইকেটের দায় দেওয়ার মুখ কোথায়? একই উইকেটে তো শ্রীলঙ্কাও ব্যাট করেছে। টার্ন আর বাউন্সে ওদেরও ভোগান্তি কম হয়নি। তারাও দ্রæত উইকেট হারিয়েছে, কিন্তু ঠিকই ছোটখাটো জুটি গড়ে সামলেছে পরিস্থিতি, বের করেছে রান। বাংলাদেশের উইকেট পতনের ধস নামলে যেন ফারাক্কার বাঁধ দিয়েও তা আটকানোর উপায় নেই।
আগের দিনে ৪ উইকেটে ৫৬ রান নিয়ে শুরু করেন লিটন দাস আর মেহেদী হাসান মিরাজ। যা একটু নিবেদন দেখিয়েছেন ওই মিরাজই। বাকিদের ছিল আসা-যাওয়ার গল্প। বাংলাদেশ গুটিয়েছে ১১০ রানে। প্রথম ইনিংসে ২২২ রান করা শ্রীলঙ্কা যেন মাইলখানেক এগিয়ে।
বল পিচে পড়লেই টার্ন পাচ্ছে। এই পিচে রান পাওয়ার দাওয়াই হচ্ছে ইতিবাচক খেলা। লঙ্কানদের প্রথম ইনিংসে তা দেখিয়েছিলেন কুশল মেন্ডিস। সকালে মিরাজও হেঁটেছিলেন সেই পথে, তাই দলের সর্বোচ্চ স্কোরারও তিনি। আগের দিন ইতিবাচক করে লিটন দাসও পেয়েছিলেন রান, এদিন নেমে হয়ে গেলেন আড়ষ্ট। সময় গড়াতেই করে বসলেন মহা ভুল। সুরাঙ্গা লাকমালের অনেক বাইরের বল স্টাম্পে টেনে হতাশায় মাথা নুইয়ে বেরিয়েছেন।
তারপরও প্রথম সেশনটা বাংলাদেশ পার করে দিবেই মনে হচ্ছিলো। ৬ষ্ঠ উইকেটে মিরাজকে সঙ্গত দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। শুরুতে তিনি ছিলেন জড়োসড়ো। তবু থিতু হয়ে জোগাচ্ছিলেন আস্থা। জুটিতেও জমছিল বেশ। ভুলটা করলেন আকিলা ধনঞ্জয়ার বলে। লাইন মিস করে এই অফ স্পিনারকে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট উপহার দিয়ে ফেরেন তিনি। আকিলার উইকেটের খাতা খুলার শুরুর সঙ্গে বাংলাদেশের ধসেরও শুরু।
কয়েকমিনিটের মধ্যেই তাসের ঘর বাংলাদেশের ইনিংস। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের জায়গায় নামা সাব্বির রহমান এসে টিকেছেন কেবল ৩ বল, রানের খাতা খুলতে না পেরে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন দলে থাকা। তাকেও ছেঁটেছেন ধনঞ্জয়া। ১ রান করেই ধনঞ্জয়াকেই সোজা ক্যাচ দিয়ে দেন আব্দুর রাজ্জাক। দিলরুয়ান পেরেরার বলে থতমত খাওয়া তাইজুল ফরওয়ার্ড শর্ট লেগে কুশল মেন্ডিসের ক্ষীপ্রতায় রান আউট। মুস্তাফিজকে উপড়াতে একটাই বল লেগেছে দিলরুয়ানের। স্কোরবোর্ডে ১১০। কিছু বুঝে উঠার আগেই শেষ বাংলাদেশ।
১১২ রানের লিড পাওয়া শ্রীলঙ্কাদের দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রথম আঘাত আব্দুর রাজ্জাকের। প্রথম ইনিংসে ৬৮ রান করা কুশল মেন্ডিসকে এবার আর বাড়তে দেননি। এলবিডবিøও করে ফিরিয়েছেন ৭ রানে। দ্বিতীয় আর তৃতীয় উইকেটে ৩৪ আর ২৭ রানের দুটি জুটি পায় শ্রীলঙ্কা। ফর্মে থাকা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোল্ড করে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছেন তাইজুল। পরে দারুণ ওই স্পেলে লঙ্কানদের ভুগিয়ে কেবল গুনাথিলাকার উইকেট পান মুস্তাফিজ। অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল নেমে রোশেন সিলভার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে গড়েন ৫১ রানের জুটি। ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ বড়। চান্দিমালকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে জুটি ভাঙ্গার কাজটা করেছেন মিরাজ। আগ্রাসী মেজাজ নিমা নিরোশান ডিকভেলা তিন বার আউট হতে হতেও বেঁচে গিয়ে পরে কাটা পড়েন তাইজুলের বলে। ম্যাচে এসবই বাংলাদেশের সাফল্যের ছবি, তবু মন ভরে হাসার উপায় নেই মাহমুদউল্লাহর দলের। লিড বেড়ে প্রায় ধরা ছোঁয়ার বাইরে!
শেষ স্পেলে দিলরুয়ান পেরেরা ও আকিলা ধনঞ্জয়াকে টানা দুই বলে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন মুস্তাফিজ, হ্যাটট্রিক না পেলেও ছুটির দিনের বিকালে জড়ো হওয়া দর্শকদের উত্তাপ দিয়েছেন তিনি। ব্যাটসম্যানদের সারাক্ষণ কাটারে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন। ওভার দ্য উইকেটে বল করতে এসে বল পিচ করে বের করেছেন বিপদজনকভাবে। তবু টিকে যান রোশেন সিলভা। পুরো টেস্ট সিরিজে দৃঢ়তা দেখানো এই ব্যাটসম্যান টেল এন্ডারদের নিয়েও করছেন লড়াই। দিনশেষে অপরাজিত আছেন ৫৮ রানে, সঙ্গী লাকমালের রান ৭।
বোলাররা তাদের কাজটা করে রেখেও ম্যাচের লাগাম রাখতে পারেননি। চতুর্থ ইনিংসে প্রায় অসম্ভব এক লক্ষ্যে বাংলাদেশ কি করে তাই এখন দেখার।

 



 

Show all comments
  • আবু তালেব ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১:৩৭ এএম says : 0
    রেকর্ড করে হলেও এই ম্যাচটিতে বাংলাদেশের জেতা উচিত।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ