Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার দায়ে ছাত্রহত্যা একজনের ফাঁসি ৫ জনের যাবজ্জীবন

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:১১ এএম

এএফপি : পাকিস্তানের একটি আদালত ধর্ম-অবমাননার অভিযোগে এক ছাত্রকে হত্যার দায়ে বুধবার এক ব্যক্তির ফাঁসির আদেশ দিয়েছে। আরো পাঁচজনের যাবজ্জীবন কারাদÐ হয়েছে। মামলায় আসামিদের ২৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদÐ দেয়া হয়েছে, খালাস দেয়া হয়েছে ২৬ জনকে। ২০১৭ সালের ১৩ এপ্রিল পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের মর্দান শহরে আবদুল ওয়ালি খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একদল ছাত্র ইসলাম অবমাননার অভিযোগে মাশাল খান (২৩) নামে এক ছাত্রের উপর হামলা চলায়। তারা তার ছাত্রাবাসের তিন তলা থেকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তাকে উলঙ্গ করে নৃশংসভাবে পেটায় এবং পরে গুলি করে হত্যা করে।
হত্যাকান্ডের দিন গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে মাশাল খান অনলাইনে ধর্ম অবমাননাকারী লেখা পোস্ট করেছে। পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদÐ। এই গুজবের পর, শত শত ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী তার খোঁজ করতে থাকে। তারপর তারা ছাত্রাবাসে তার কক্ষের দরজা ভেঙে ঢুকে তাকে টেনেহিঁচড়ে বাইরে নিয়ে যায়। এরপর মোবাইল ফোনে ছড়িয়ে পড়া ফুটেজে দেখা যায়, তাতে নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে এবং পরে গুলি করা হয়। মৃত্যুর পর অনেক মানুষ তার নিথর দেহকে আঘাত করতে থাকে।
এ ঘটনা মানুষকে স্তম্ভিত করে। এর বিরুদ্ধে সারাদেশ জুড়ে নিন্দা শুরু হয়। বিশিষ্ট ধর্মীয় নেতারাও এর নিন্দা করেন। নিরাপত্তার ভয়ে মামলাটির বিচারকার্য একটি কারাগারের ভেতরে হয়েছে। বুধবার রায়ের দিন হরিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং কয়েক শ’ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বিবিসি জানায়, নিহত মাশাল খান আব্দুল ওয়ালি খান বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগের ছাত্র ছিল। নিজেকে সে মানবতাবাদী হিসেবে পরিচয় দিত। ছাত্রাবাসে তার ঘরের দেয়ালে চে গুয়েভারা এবং কার্ল মার্কসের ছবি টাঙিয়ে রেখেছিল। স্বাধীন মত প্রকাশের সপক্ষে তার সেøাগান লেখা ছিল তার ঘরের দেয়ালে।
হত্যাকাÐের পর সে সময় খবর বের হয় যে মাশাল খান বিভিন্ন সময়ে ‘ইসলামবিরোধী’ মনোভাব প্রকাশ করত, এবং হত্যাকাÐের কিছুদিন আগে এক ধর্ম নিয়ে বিরাট তর্কে জড়িয়ে পড়েছিল। কয়েক মাস পর এক সরকারী তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, মাশাল খানের নামে অভিযোগ মিথ্যা ছিল। এতে বলা হয় যে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ ছাত্র গ্রæপের সদস্যদের উস্কানিতে এ হত্যা সংঘটিত হয়। বিশ^বিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধি ও দুর্নীতির সমালোচনা করে সে ক্রমশই প্রভাবশালী হয়ে ওঠায় ঐ ছাত্র গ্রæপটি তাকে হুমকি মনে করছিল।
তদন্তের পর পুলিশ বলে, মাশাল খান কোনো ধর্ম অবমাননা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিচার চলাকালে প্রায় ৫০ জনের মতো মানুষ সাক্ষ্য দেয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা নিয়ে সমালোচনার করার জন্য প্রশাসন তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল।
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননা আইনে কাউকে মৃত্যুদÐ দেয়া না হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে এ নিয়ে পিটিয়ে হত্যা ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে থাকে। সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ থিংক ট্যাংক সংকলিত গবেষণায় দেখা যায়, পাকিস্তানে ১৯৯০ সাল থেকে ধর্ম অবমাননার ঘটনায় ৬৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ