রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা ঃ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে সাংবাদিক, পুলিশসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে সুমন (৩৭) নামে এক স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ৫ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারশেল ও গুলি বর্ষণ করেন। এসময় পুরো এলাকায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার হাবিবনগড় এলাকার কাঞ্চন-কুড়িল বিশ^রোড সড়কে ঘটে এ সংঘর্ষের ঘটনা। নিহত সুমন মিয়া উপজেলার তারাব পৌরসভার গন্ধর্বপুর এলাকার মনু মিয়ার ছেলে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামাত-শিবির নাশকতামূলক কর্মকাÐ করতে পারে। সে জন্যে পুলিশকে সহযোগীতা করতে উপজেলার হাবিবনগড় এলাকার কাঞ্চন-কুড়িল বিশ^রোড সড়কে স্থানীয় এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতিক) এর সমর্থিত নেতাকর্মীরা অবস্থান নেয়। একই স্পটে ৫০০ গজের মধ্যে অবস্থান নেয় কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক সমর্থিত নেতাকর্মীরাও। সেখানে রফিক সমর্থিরা পেন্ডেলও স্থাপন করেন। তাদের দুটি পক্ষের আগে থেকেই বিরোধ চলে আসছিলো। একই স্থানে তাদের দুটি পক্ষ অবস্থান কেন্দ্র করে সংঘর্ষের আশঙ্কায় জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক আহাম্মেদ ও রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা রফিকুল ইসলাম রফিক সমর্থিতদের আধা কিলোমিটার দুরত্ব বজায় রেখে অবস্থান নেয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা পুলিশের কথা না মেনে সেখানেই অবস্থান নেন। এদিকে, ৫০০ গজের মধ্যে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে অবস্থান করায় উভয় পক্ষের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে প্রায় পৌনে ১২টার দিকে, কাঞ্চন ব্রীজের দিক থেকে রফিক সমর্থিতরা একটি লাঠি মিছিল নিয়ে আসলে উভয় পক্ষের মাঝে আরোও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। এসময় পুলিশ উভয় পক্ষকে ধাওয়া করেন এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ শুরু করেন। শুরু হয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ত্রিমুখী ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষ, ইটপাটকেল, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলি। প্রায় দেড় ঘন্টা ব্যাপী সংঘর্ষে স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী সুমন নিহত হন। এছাড়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) ফারুক আহাম্মেদ, রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন, ইন্সপেক্টর তদন্ত রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সদস্য মজিবুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল ফাতে মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক আশিকুর রহমান হান্নান, এস এম শাহাদাত হোসেন, সাইফুল ইসলামসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। দেড় ঘন্টা এ সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) সড়ক ও কাঞ্চন-কুড়িল বিশ^রোড সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েন।
এদিকে, উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি তোফাজ্জল হোসেনসহ নেতাকর্মীরা রূপগঞ্জ প্রেসক্লাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেছেন, বিএনপি জামাত-শিবিরের নাশকতামূলক কর্মকান্ড থামাতে পুলিশকে সহযোগিতা করতে পূর্ব নির্ধারিত কাঞ্চন ব্রীজের পশ্চিম পার্শের স্পটে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল ভাবে অবস্থান নেন। দুপুর ১২টার দিকে রফিক চেয়ারম্যানের লোকজন লাঠি মিছিল নিয়ে তাদের অবস্থানের দিকে ধেয়ে অগ্রসর হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্যে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা টিয়ারশেল ও লাঠি চার্জ করেন। এই সময়ে রফিক চেয়ারম্যানের ৪ থেকে ৫ জন গানম্যান ও তার লোকজনরা তাদের লোক জনের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কাছে থেকে শর্টগান ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে গুলি বর্ষণ করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী সুমন নিহত হন।
অপর দিকে, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবুল বাশার টুকু দাবি করেন, পুলিশের সঙ্গে এমপি গাজি সমর্থিতদের সংঘর্ষকালেই গুলিবিদ্ধ হয়ে সুমন মারা যায়। রাজনৈতিক দ্বন্ধের জের ধরে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা তাদের জরানোর চেষ্টা করছে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন জানান, ৪৬৯টি সর্টগানের গুলি ও ৪০টি টিয়ারটেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনা হয়। পুলিশের উপর আক্রমন করতে গেলেই পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েক জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, পুলিশের গুলিতে সুমন নিহত হয়নি।