Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শুরুতেও মুমিনুল, শেষটাও

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : দিনের খেলা তখনও বাকি ১৭ ওভার। ঘড়ির কাঁটায় এক ঘন্টারও বেশি। হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ১০৭ রানের লিড হয়ে গেছে বাংলাদেশের। এই ম্যাচ থেকে কোন ফল বের করার তখন আর বাস্তবতা নেই। শেষ পানি পানের বিরতির ঠিক আগে তাই দুই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আর দিনেশ চান্দিমাল করমর্দন করে মেনে নিলেন ড্র।
তবে পথটা যে এতটা সহজ ছিলনা সেটা সকলেরই জানা। পরিস্থিতি ছিল প্রতিকূল, সঙ্গী সেখানে শঙ্কা। পেছনে অনেকবার ব্যর্থতার ইতিহাস। সামনে পরাজয়ের চোখ রাঙানি। সেই বিরুদ্ধ ¯্রােতেই তরী বেয়ে দলকে কাক্সিক্ষত ঠিকানায় নিয়ে গেলেন মুমিনুল হক। নিজে গড়লেন ইতিহাস, বাঁচালেন ম্যাচ। দুর্দান্ত জুটিতে মুমিনুলের সঙ্গী লিটন দাস। যদিও হাতের মুঠো থেকে প্রাপ্য সেঞ্চুরিটি ফেলে দেওয়ার আক্ষেপে পুড়েছেন। তবে দলের প্রাপ্তির চেয়ে বড় তৃপ্তি তো আর হতে পারে না! দিন শেষে তাই লিটনের মুখেও চওড়া হাসি। খুশির হাওয়া ড্রেসিং রুম জুড়েই। শঙ্কার মেঘ সরিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ।
অথচ গতকাল শেষদিনটায় ভয় আর শঙ্কা নিয়ে শুরু করেছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনের পরই শঙ্কার মেঘ জমেছিল। ভয় বাড়াচ্ছিল অতীতের তেতো স্মৃতিও। এর আগে দুবার প্রথম ইনিংসে পাঁচশোর বেশি রান করে ম্যাচ হারার রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। এবার কি আরও আরেকবার...!  না শেষ পর্যন্ত ঘোর অন্ধকার নামেনি চট্টগ্রামে। ব্যাটিং স্বর্গে নির্বিঘেœ দিনটা পার করে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। দ্বিতীয় ইনিংসের ধসে পড়ার জুজু কাটিয়ে বাংলাদেশ ব্যাট করেছে ১০০ ওভারের বেশি। মুমিনুল আর লিটনের চতুর্থ উইকেটে ১৮০ রানের জুটিতেই নিরাপদে চলে যায় বাংলাদেশ। টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা মুমিনুলের দিকেই পড়েছে বেশিরভাগ আলো, সেঞ্চুরির কাছে গিয়ে ফেরা লিটনও কুড়িয়েছেন বাহবা।
প্রথম ইনিংসে ২০০ রানে পিছিয়ে থাকার পর চতুর্থ দিন বিকেলেই তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল বাংলাদেশ। ৮১ রানে ৩ উইকেট নিয়ে শেষ দিনে চ্যালেঞ্জ ছিল পুরো দিন টিকে থাকার। তা অনায়াসে করতে পেরেছেন মুমিনুল হক আর লিটন দাস। প্রথম সেশনে কোন উইকেটই পড়তে দেননি তারা। দ্বিতীয় সেশনে শেষ দিকে গিয়ে আউট হয়েছেন দুজনই, তবে ততক্ষণে ম্যাচে বাংলাদেশের অবস্থান বেশ পোক্ত।
প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসের বাংলাদেশের ইনিংসের বেশিরভাগটা জুড়ে মুমিনুল হক। আগের দিন ইমরুল কায়েসের আউটের পর নেমেছিলেন। তাকে ক্রিজে রেখে ফিরে যান দুই সিনিয়র ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে যে গতিতে সেঞ্চুরি করেছিলেন, এবার দাবি ছিল একদম উলটো। রান বাড়ানোর চেয়ে দরকার ছিল উইকেট আঁকড়ে ধরার নিবেদন। মেজাজ পালটে মুমিনুল খেলেছেন রয়েসয়ে। তিন অঙ্কে পৌঁছাতে লাগিয়েছেন ১৫৪ বল। তাতে চারটি বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছেন দুই ছক্কা। তাতে ছোঁয়া হয়ে গেছে রেকর্ডও। এর আগে কোন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। টেস্ট ইতিহাসেই এমন কীর্তি মোট ৬৭ জনের।
চতুর্থ উইকেটে ১৮০ রানের জুটিতে মুমিনুল-লিটন দুজনেই খেলেছেন তাল মিলিয়ে। জুটির ৮৭ রান এসেছে মুমিনুলের ব্যাট থেকে, ৮৬ লিটনের। ১০৫ রান করে মুমিনুল আউটের পর দ্রুত লয়ে সেঞ্চুরির দিকে এগুচ্ছিলেন লিটন। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটাকে প্রথম তিন অঙ্কের ঘরে নিয়ে যেতে বেশি তড়িঘড়ি ফেলেছিলেন তিনি। প্রথম ইনিংসে অদ্ভুত আউটের ভুল পুষিয়ে বাহবা কুড়ানোর পথেই ছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। রঙ্গনা হেরাথের বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন ৯৪ রানে।
বাকিটা সময় কোন বিপদ বাড়তে দেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। দলের রান ৫ উইকেটে ৩০৭ হতেই থামল খেলা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও অপরাজিত বাংলাদেশ অধিনায়ক করেছেন ২৪ রান, সঙ্গে মোসাদ্দেক ছিলেন ৮ রানে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ