Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে মুমিনুল কাহন

| প্রকাশের সময় : ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


রুমু, চট্টগ্রাম ব্যুরো : নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ দলের সেরা টেস্ট খেলোয়াড় মুমিনুল হক। সুযোগ পেলেই ব্যাট হাতে বারবার প্রমাণও দিয়েছেন তার। বাংলাদেশের হলে এ পর্যন্ত যে ৮৭ জন খেলোয়াড় টেস্ট ক্যাপ পড়েছেন তার মধ্যে ব্যাটিং গড়ের দিক থেকে সবার চেয়ে এগিয়ে মুমিনুল। তার ব্যাটিং গড় ৪৮.২০। ২৬ টেস্টেই ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন তিনি। সর্বশেষ চট্টগ্রাম টেস্টে লংকানদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে বীরদর্পে লড়ে দলকে হারের লজ্জা থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি এনে দিয়েছেন সম্মানজনক ড্র। সেইসঙ্গে ব্যাট হতে গড়েছেন অসাধারণ কীর্তি। মুমিনুলই দেশের একমাত্র টেস্ট খেলোয়াড় যার এক টেস্টেই দু’টি সেঞ্চুরি রয়েছে। এই টেস্টে পরপর দু’ইনিংসে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি করে তাকে অবজ্ঞা করার মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান খ্যাত কক্সবাজারের ছেলে মুমিনুল।
লংকান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে যখন বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ ছিলেন তখন মুমিনুলকে নিয়ে এক ধরণের ছেলেখেলায় মেতে উঠেছিলেন তিনি। দল থেকে বাদ দিয়েছেন, আবার দলে রাখলেও একাদশে মুমিনুলকে ঠাঁই দেননি চন্ডিকা। দ্বাদশ খেলোয়াড় হিসেবেও মাঠে পাঠানো হয়েছে মুমিনুলকে। প্রধান কোচের এমন স্বৈরাচারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তখন মুমিনুলের কিছুই করার ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ থেকে সরে গিয়ে লংকা দলের কোচের দায়িত্ব নেয়ার পর যেন হাফ ছেড়ে বাঁচেন বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য টেস্ট ক্রিকেটার মুমিনুল। হাথুরুপরবর্তী বাংলাদেশ দলে বেশ কদরের সঙ্গেই ফিরে আসেন এই লিটল মাস্টার। এরপরই লংকানদের বিপক্ষে এই হোম টেস্ট সিরিজে একটা মধুর প্রতিশোধ নেয়ারও সুযোগ এসে যায় মুমিনুলের সামনে। সেই মধুর প্রতিশোধ নিয়েছেন তিনি কড়ায়-গন্ডায়।
হোম টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটি চট্টগ্রামের জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলতে নেমে হাথুরুসিংহের শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৭৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন মুমিনুল। তার এই লম্বা ইনিংসের ওপর ভর করে স্বাগতিক বাংলাদেশ দল ৫১৩ রানের সম্মানজনক স্কোর করতে সক্ষম হয়। সেইসঙ্গে সফরকারী লংকান দলকেও চাপের মধ্যে ফেলে দেয়। অবশ্য সেই চাপ সামলে লংকানরা প্রথম ইনিংসে ২০০ রানের লিড নিয়ে নয় উইকেটে ৭১৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে টাইগারদের উল্টো চাপে ফেলে দেয়। এরমধ্যে ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১ রানে তামিম, ইমরুল ও মুশফিককে হারিয়ে হারের শংকায় পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। ম্যাচ বাঁচানোর ভরসায় তখন ক্রিজে থাকা ১৮ রানে অপরাজিত থাকা সেই মুমিনুল। ক্রাইসিস ম্যান হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা মুমিনুল দাঁতচেপে ক্রিজে পড়ে থেকে পঞ্চম দিনের লাঞ্চ পর্যন্ত সঙ্গী লিটনকে নিয়ে আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি। এরই মধ্যে ফিফটিও পূর্ণ করেন তিনি। চা বিরতির আগেই নিজের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নেন মুমিনুল। তার এই শক্ত প্রতিরোধের কারনেই শেষ পর্যন্ত টাইগারদের এই টেস্টে হারাতে পারেনি লংকানরা। ড্র মেনেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাদের। এখানেই মধুর প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেছে মুমিনুলের। তার মনোমুগ্ধকর ব্যাটিংয়ের কাছেই হাতুরুসিংহের লংকান দল জয় বঞ্চিত হয়েছে। চট্টগ্রামের এই টেস্টের প্রথম দিন থেকেই গ্যালারীতে দর্শক খরা থাকলেও মোঃ হানিফ নামের এক ক্রিকেট পাগল দর্শক এই ম্যাচের প্রতিটি দিনই মাঠে এসে খেলা উপভোগ করেছেন। তিনি মুমিনুলের ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে এটা মুমিনুলের মধুর প্রতিশোধ। কোচ থাকাকালে হাথুরুসিংহ বেশ কয়েকবার মুমিনুলকে অবজ্ঞা করেছেন। দল থেকে বাদ দিয়েছেন। ব্যাট হাতে সেই অবজ্ঞার জবাব দিয়েছেন মুমিনুল।’
চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও হাতে তুলে নিয়েছেন মুমিনুল হক। টেস্টে তার যে ছয়টি সেঞ্চুরি রয়েছে তার পাঁচটিই হয়েছে চট্টগ্রামের এই জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। এরমধ্যে যে দু’বার ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিল তার সেটিও এই ভেন্যুতেই। এই লাকি গ্রাউন্ডেই রয়েছে তার ক্যারিয়ার সেরা ১৮১ রানের ইনিংসটি। যেটি করেছিলেন তিনি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে। জোড়া সেঞ্চুরির অনন্য কীর্তির আগেই মুমিনুল উঠেছেন অনন্য উচ্চতায়। এক টেস্টে দুই ইনিংসে প্রথম বাংরাদেশি হিসেবে করেছেন সেঞ্চুরি। সেই সঙ্গে টেস্টে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ডে ছাড়িয়ে গেছেন তামিম ইকবালকে। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টের প্রথম ইনিংসে তামিম করেছিলেন ২৫, দ্বিতীয় ইনিংসে ২০৬। দুই ইনিংস মিলিয়ে তামিমের ২৩১ রান ছিল এক টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এবার দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৬ রানের সময়ই মুমিনুল ছাড়িয়ে যান তামিমকে। এক টেস্টে দুইশর বেশি রান আগেও একবার করেছেন মুমিনুল। ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেই করেছিলেন ১৮১ ও অপরাজিত ২২, মোট ২০৩ রান। বাংলাদেশের হয়ে এক টেস্টে দুইশ রান করতে পেরেছেন আর কেবল চারজন। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গলে মোহাম্মদ আশরাফুল করেছিলেন ১৯০ ও অপরাজিত ২২। ওই টেস্টেই মুশফিকুর রহিম করেছিলেন ২০০। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনায় ইমরুল কায়েস করেছিলেন দুই ইনিংস মিলিয়ে ২০১ (৫১ ও ১৫০)। গত বছরের জানুয়ারিতে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়েলিংটনে সাকিব করেছিলেন ২১৭।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ