Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এই টেস্টেও হারের শঙ্কা!

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : টেস্টে ৫০০-র বেশি রান তুলেও দুবার হেরেছে বাংলাদেশ। গত বছর জানুয়ারিতে ৫৯৮ রান তুলেও হেরেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে সর্বোচ্চ রান তুলে ম্যাচ হারার বিশ্ব রেকর্ড ছিল সেটি। ২০১২ সালে ঢাকায় ৫৫৬ রান করেও হারার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আছে। ৫০০-র বেশি করে ম্যাচ হারাটা নতুন নয়। কিন্তু তাই বলে এই টেস্টে!
ব্যাটিংয়ের জবাবটা ব্যাট হাতে বেশ ভালো মতই দিয়েছে লঙ্কানরা। প্রথম ইনিংসে ৫১৩ করেও বাংলাদেশকে স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছে না শ্রীলঙ্কার ৭১৩ রান। বোলিংয়েও ঢের এগিয়ে সফরকারীরা। চট্টগ্রাম টেস্টে ৪র্থ দিনে এসে তাই এই ম্যাচেও হারের শঙ্কা পেয়ে বসেছে মাহমুদউল্লাহর দলকে। শ্রীলঙ্কার ২০০ রানের লিডের জবাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৮১ রানেই ৩ উইকেট খুইয়েছে বাংলাদেশ। তামিম, ইমরুল, মুশফিককে হারিয়ে ইনিংস পরাজয় এড়ানোর চোখ রাঙানি এখন বাংলাদেশের সামনে। পিছিয়ে ১১৯ রানে, হাতে ৭ উইকেট।
শেষ সেশনে পড়েছে ৫ উইকেট; আগের ১১ সেশনে রান উঠেছে ১২১৮, উইকেট পড়েছে মাত্র ১৭টি। দিনের শেষ সেশনে ৩ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা বাংলাদেশ। ম্যাচের তথ্য-উপাত্ত যা বলছে তাতে উইকেটকে (পিচ) আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো যাচ্ছে না কিছুতেই। যেখানে শ্রীলঙ্কার স্পিনাররা দ্বিতীয় দিনেই পেলেন ঘূর্ণি আর উইকেটে দেখা, সেখানে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ স্পিনাররাও মুখ থুবড়ে পড়ছেন লঙ্কান মিডলঅর্ডার কিংবা টেলএন্ডারদের ব্যাটিং দাপটের সামনে!
গতকাল চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিনও পক্ষে গেছে শ্রীলঙ্কানদের। ২০০ রানের লিড নিয়ে ইনিংস ঘোষণার পর শেষ বিকেলে ৮২ রানে ৩ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর রহিমের আউটের সঙ্গে সঙ্গে খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার সময় আরেকপ্রান্তে মুমিনুল হক অপরাজিত ছিলেন ১৮ রানে। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেটে প্রথম তিনদিনে ওইরকম টার্ন দেখা না গেলেও চতুর্থ দিনে দেখা মিলছে ঘূর্ণির। শেষ দিনে হেরাথ, দিলরুয়ান পেরেরা হয়ে উঠতে পারেন আরও বিপদজনক।
দিনের তখন আর দুই বল বাকি। দুই ওপেনারকে হারিয়ে এমনিতেই ম্যাচ বাঁচানোর শঙ্কায় দল। দিনের শেষ কিংবা সেশনের শেষ ওভারে উইকেট হারাবে না বাংলাদেশ, এ যেন হতেই পারে না। রঙ্গনা হেরাথের বলটা ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করে সিলি পয়েন্ট ক্যাচ দিলেন মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় ইনিংসে একশ রানের আগেই নেই তিন উইকেট। প্রথম ইনিংসে পাঁচশর বেশি রান করেও শেষ দিনে বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছে- ‘হার’!
প্রথম ইনিংসে ৫৯৬ রান করেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট হেরেছিল বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের পরিস্থিতি মনে করিয়ে দিচ্ছে তেতো সেই স্মৃতিও। ২০০ রানে পিছিয়ে থেকে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস শুরুটা পেয়েছিলেন ভালোই। বিশেষ করে এবারও আগ্রাসী ছিল তামিমের ব্যাট। অহেতুক ঝুঁকি না নিয়েও পাচ্ছিলেন রান। ৫২ রানে গিয়ে এই জুটির ছেদ পড়ে ইমরুলের বিদায়ে। প্রথম ইনিংসে নিবেদন দেখানো ইমরুল দ্বিতীয় ইনিংসে ছিলেন বেশ অস্থির। পেরেরার লেগ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে ১৯ রানে সোজা ক্যাচ দিয়েছেন স্কয়ার লেগে।
তামিম তবু এগুচ্ছিলেন আরেকটি ফিফটির দিকে। ৪১ রান করে তিনি কাটা পড়েছেন চায়নাম্যান লাকসান সান্দাকানের ভেল্কিতে। কব্জির কারিকুরিতে দেওয়া সান্দাকানের ডেলিভারি মিডল স্টাম্পে পড়ে অনেকটা টার্ন করলে তাতে ড্রাইভ করতে যাওয়া তামিম ধোঁকা খান। তার ব্যাটের ছোঁয়া নিয়ে নিরোশান ডিকভেলার গøাভস যেতেই ততক্ষণে নাচতে শুরু করে দিয়েছে লঙ্কানরা।
বাংলাদেশের হতাশা থামতে পারত এই দুই উইকেটেই। আর কোন বিপর্যয় ছাড়াই দিন পার করে দেওয়ার একদম কাছেও চলে গিয়েছিল দল। দিনের এক বল আগেই হেরাথের বলটাতে খানিকটা ভুল করে বসলেন মুশফিক। রক্ষণাত্মক খেলেও ক্যাচ গেল সিলিপয়েন্টে। বাংলাদেশের ফিল্ডারদের হাত গলে সহজ ক্যাচ বেরিয়েছে অনেক, লঙ্কানরা টেস্ট ম্যাচে ক্যাচ নেওয়ার মর্যাদাটা জানেন। ১৯৬ রানের ইনিংস খেলে এমনিতেই হিরো কুশল মেন্ডিস দারুণ দক্ষতায় জমিয়েছেন মুশফিকের ক্যাচ।
এরআগে দিনের বাকিটা সময় ছিল বাংলাদেশের বোলার-ফিল্ডারদের হতাশা আর অপেক্ষার। আগের দিনের অপরাজিত রোশন সিলভা সেঞ্চুরি করেই থেমেছেন। ৮৭ রানে লঙ্কান অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমালকে থামাতে পেরেছিলেন তাইজুল ইসলাম। ৬১ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে নিরোশান ডিকভেলাও রেখেছেন কার্যকর অবদান। শেষ দিকে দিলরুনা পেরেরা ৩২ আর রঙ্গনা হেরাথের ২৪ রানের ইনিংসে ৯ উইকেটে ৭১৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। পঞ্চম দিনে ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পুরো ৯০ ওভার টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ এখন বাংলাদেশের। মুমিনুল হকের ঝলমলে ইনিংসে টেস্টের প্রথম দিনের দাপট যেন কোন দূরের অতীত!

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ১ম টেস্ট ৪র্থ দিন
টস : বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১২৯.৫ ওভারে ৫১৩
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস (৩য় দিন শেষে) ১৩৮ ওভারে ৫০৪/৩ (করুনারতেœ ০, মেন্ডিস ১৯৬, ধনঞ্জয়া ১৭৩, রোশন ৮৭ ব্যাটিং, চান্দিমাল ৩৭ ব্যাটিং; মুস্তাফিজ ১/৮৮, মিরাজ ১/৯৭, তাইজুল ১/১৪৪)
রান বল ৪ ৬
রোশন ক লিটন ব মুস্তাফিজ ১০৯ ২৩০ ৬ ১
চান্দিমাল বোল্ড তাইজুল ৮৭ ১৮৫ ৩ ০
ডিকভেলা ক লিটন ব মিরাজ ৬২ ৬১ ৯ ০
পেরেরা এলবি ব সানজামুল ৩২ ৬৮ ৪ ০
হেরাথ এলবি ব তাইজুল ২৪ ৬১ ১ ০
লাকমাল বোল্ড তাইজুল ২৪ ৬১ ১ ০
লাহিরু অপরাজিত ২ ৬ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১১, লেবা ৬, ও ২) ১৯
মোট (১৯৯.৩ ওভার, ৯ উইকেট) ৭১৩ ডিক্লেয়ার
উইকেট পতন : ১-০ (করুনারতেœ), ২-৩০৮ (ধনঞ্জয়া), ৩-৪১৫ (মেন্ডিস), ৪-৫৫০ (রোশন), ৫-৬১৩ (চান্দিমাল), ৬-৬৬৩ (ডিকভেলা), ৭-৬৮৭ (পেরেরা), ৮-৭০৬ (লাকমাল), ৯-৭১৩ (হেরাথ)।
বোলিং : মুস্তাফিজ ৩২-৬-১১৩-১, সানজামুল ৪৫-২-১৫৩-১, মিরাজ ৪৯-৪-১৭৪-৩, তাইজুল ৬৭.৩-১৩-২১৯-৪, মোসাদ্দেক ৩-০-২৪-০, মুমিনুল ২-০-৬-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম ক ডিকভেলা ব সান্দাকান ৪১ ৬২ ৬ ০
ইমরুল ক চান্দিমাল ব পেরেরা ১৯ ৪৮ ১ ১
মুমিনুল ব্যাটিং ১৮ ৩২ ১ ০
মুশফিক ক মেন্ডিস ব হেরাথ ২ ২০ ০ ০
অতিরিক্ত (নো ১) ১
মোট (২৬.৫ ওভার, ৩ উইকেট) ৮১
উইকেট পতন : ১-৫২ (ইমরুল), ২-৭৬ (তামিম), ৩-৮১ (মুশফিক)
বোলিং : হেরাথ ৬.৫-০-২২-১, লাকমাল ৪-০-১৬-০, ধনঞ্জয়া ৬-০-২০-০, পেরেরা ৭-১-২০-১, সান্দাকান ৩-১-৩-১। চতুর্থ দিন শেষে*

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ