পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বত্র কর্মমুখর পরিবেশ
কর্মহীন শ্রমজীবিদের সংকট কেটে যাচ্ছে। কাজের সন্ধানে নেই ছুটোছুটি। হাতের নাগালেই কাজ। স্পর্শ করছে না হা-হুতাশ। চারিদিকে বিরাজ করছে একটা কর্মমুখর পরিবেশ। শ্রমজীবিদের অভাব দূর হচ্ছে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের কাজ না পাওয়ার দুর্ভাবনাও কাটছে। কাজের মধ্যে ডুবে দারিদ্যকে জয় করছেন তারা। অভাবের তাড়নায় অনেক খেটে খাওয়া মানুষের দা, কুড়াল, কাঁচি, নিড়ানী ও কোদাল নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা হাট-বাজারে শ্রম বিক্রি করার জন্য বসে থাকার দৃশ্য কমই চোখে পড়ে। মাঠে-ঘাটে কাজ আর কাজ। পারিশ্রমিকও বেড়ে গেছে অনেক। শ্রমজীবিদের চেহারা বলে দিচ্ছে তাদের অবস্থা ভালো। তবে তুলনামূলকভাবে সীমিত ও স্বল্প আয়ের মানুষের অবস্থা চাল, ডাল, তেল, সবজি, মরিচ ও পিয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে অস্বস্তিদায়ক অবস্থা, জীবনধারনের ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে কঠিন। তাদের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে। কৃষি জমির মালিকের চেয়ে এখন কৃষি শ্রমিকরা সাচ্ছন্দে দিন কাটাচ্ছেন। এই চিত্র দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের।
গত কয়েকদিন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমান সময়ে খেটে খাওয়া মানুষ যারা কৃষি শ্রমিক, শিল্পশ্রমিক, রিকসাওয়ালা, ভ্যানচালক তারা বেশ ভালোই আছেন। যে আয় হয় তাদের তাতে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব হচ্ছে। বড় সমস্যায় আছেন সাদা পোশাক পরা মধ্যবিত্তরা। তাদের স্বল্প ও সীমিত আয় দিয়ে সন্তানের লেখাপড়াসহ সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে কৃষিজাত উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু ভুমির মালিক কৃষকের যতটা না লাভ হচ্ছে তার চেয়ে বেশী হচ্ছে কৃষি শ্রমিকের। যশোরের ডিহি ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আলমসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানালেন, জমিচাষ, বীজ, চারা লাগানো, পরিচর্যা, সার, কীটনাশক, সেচ, ধান কাটা ও মাড়াইসহ প্রতি বিঘায় কৃষকের উৎপাদন খরচ আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। গেল মৌসুমের রোপা আমনে প্রতিবিঘায় খরচ হয় ন্যুনতম প্রায় ১৪হাজার টাকা। একবিঘা জমিতে গড়ে ধান হচ্ছে ২০মণ। তখনকার বাজার মূল্যে ধানের দাম হয়েছিল ১৬হাজার টাকা। জমির মালিকের সর্বোচ্চ লাভ হয় ৬হাজার টাকা। প্রায় ৪মাস ধান উৎপাদনে সময় লাগে। এ সময়ে মুজৃরী লাগে বিভিন্নভাবে কমপক্ষে ২০ দিন। প্রতিদিন ৫শ’টাকা মুজুরী হিসেবে একজন কৃষিশ্রমিক ওই জমিতে শ্রম দিয়ে আয় করেছে ১০হাজার টাকা। কৃষকের চেয়ে কৃষিশ্রমিকের লাভ বেশী। একজন রিকশাওয়ালা প্রতিদিন ৬/৭শ’টাকা ও ইজিবাইক চাল ন্যুনতম ১হাজার টাকা আয় করে। রাজমিস্ত্রি, লেদ মিস্ত্রিসহ বিভিন্ন মিস্ত্রিদের মুজুরী আবার প্রায় দ্বিগুণ একজন লেবারের চেয়ে। শিল্প কলকারখানার ক্ষেত্রে প্রায় একই অবস্থা। বহু ক্ষদ্র শিল্প মালিকদের চেয়ে শিল্পশ্রমিকরা কোন কোন তুলনামূলক ভালো আছেন। স্বাচ্ছন্দ্যে দিনাতিপাত করছেন।
ঝিনাইদহের কলেজ শিক্ষক হেদায়েতুল্লাহ বললেন, বর্তমানে শহরের মোড়ে মোড়ে কিংবা মানুষ বেচাকেনার হাটে শ্রম বিক্রি করার জন্য বসে থাকার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে না। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ কৃষি, অকৃষি, ঘাটে, বন্দরে, হাট-বাজারে, শিল্প কারখানায়, বাড়ী-ঘর, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণে ও খাল খননসহ বহুমুখী কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। আপাতদৃষ্টিতে কোন দুঃস্বপ্ন তাড়া করছে না শ্রমজীবিদের। বিশেষ করে বর্তমানে গ্রামীণ শ্রম বাজারে বিরাজ করছে স্বস্তিদায়ক অবস্থা। সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহলের প্রত্যাশা সরকারের পক্ষ থেকে এই অবস্থা ধরে রাখার ক্ষেত্রে আরো যতœবান হলে গ্রামবাংলায় অর্ধাহার ও অনাহারে দিনাতিপাতকারী পরিবারের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। ঘাতপ্রতিঘাতে আচ্ছন্ন শ্রমজীবী মানুষের মনোকষ্ট দূর হবে। তবে পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করে মধ্যবিত্ত, নিম্মমধ্যবিত্ত ও স্বল্প আয়ের মানুষের স্বস্তি দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে পর্যবেক্ষক, অর্থনীতি বিশারদরা মনে করছেন। তাহলে গোটা অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতির চেহারা আরো সন্তোষজনক হবে।
সংশিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, কৃষি মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা নিয়ে সারা দেশে অনাবাদী জমি উদ্ধার, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবেশ রক্ষা, মৎস্য উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য একটি ক্র্যাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে পারে। মাঠপর্যায়ে খাল-বিল খনন, সারফেস ওয়াটার ডেভলপমেন্ট, ক্ষুদ্র সেচ, ভেড়ি বাঁধ, রেগুলেটর, বক্স কালভার্ট, পাইপ কালভার্ট ও ¯ুইস গেট নির্মাণ এবং পাম্পিং মেশিন স্থাপনসহ সংশিষ্ট কর্মকান্ডের দিকে জোর দিলে আরো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। শিল্পে গতি সৃষ্টির জন্য আরো বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তাতে শুধু সংশিষ্ট শ্রমিক ও কর্মচারীরা নয়, পাটসহ কাঁচামাল উৎপাদনকারী ও মিলের ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ও কর্মচারীরাও আর্থিক সুবিধা পাবে। বন্দরগুলোতেও আমদানী-রফতানী বাড়াতে হবে।
মাঠ হচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের প্রধান অবলম্বন। মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষি শ্রমিকরা বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। রোপা আমন ধান কাটার পর বোরো ধানের বীজতলা তৈরী, রজনীগন্ধাসহ ফুল, সবজিসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ ও উৎপাদন, মাছের রেণু পোনা, সাদা সোনা চিংড়ি চাষ হচ্ছে পুরাদমে। সরেজমিনে বেশকিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোন না কোন কাজের সাথে সম্পৃক্ত শ্রমজীবিরা। হাত গুটিয়ে ঘরে বসে থাকতে হচ্ছে না। সবজি ভান্ডার যশোরের বারীনগরে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষি শ্রমিকরা ছাড়াও লেবর শ্রেণীর লোকজন গুণগুনিয়ে গান গেয়ে সবজি প্যাকিং ও ঢাকায় পাঠানোর জন্য ট্রাক ভর্তির কাজে ব্যতিব্যস্ত। একই ধরণের চিত্র ফুল উৎপাদনের রেকর্ড এলাকা ঝিকরগাছার গদখালীতে। বিভিন্নস্থানে বিভিন্ন কাজকর্মে আত্মনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে দিন এনে দিন খাওয়া শ্রমিকদের। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।